পাতা:নাগপাশ - হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পুনঃপুনঃ শ্রুত হইতে লাগিল। প্রভাত বুঝিল, অন্তঃপুরচারিণীরা তাহাকে লক্ষ্য করিতেছেন। লজ্জায় সে আর মুখ তুলিতে পারিল না।

 সেই হইতে প্রভাতের সে বাড়ীতে গতায়াত কিছু ঘন ঘন হইতে লাগিল। বিনোদবিহারী প্রায়ই আসিত, এবং তাহাকে লইয়া যাইত। কিন্তু শোভা আর পূর্ব্বের মত তাহার সম্মুখে বাহির হইত না। কেবল একদিন বিনোদবিহারীর সহিত তাহার বসিবার ঘরে প্রবেশ করিয়া প্রভাত দেখিল, সুবেশসজ্জিতা শোভা টেবলের উপর একখানি বাঙ্গলা উপন্যাস রাখিতেছে। প্রভাতকে দেখিয়া লজ্জায় তাহার মুখ রক্তাভ হইয়া উঠিল; সে নতদৃষ্টি হইয়া দ্রুতপদে কক্ষত্যাগ করিল। বিনোদবিহারী হাসিতে হাসিতে জিজ্ঞাসা করিল, “পুস্তকখানা কি তোর মেজ বৌদিদি পাঠাইয়াছে?” শোভা উত্তর করিল না; সে একেবারে অন্তঃপুরে যাইয়া মেজ বৌদিদির সহিত ঝগড়া করিতে লাগিল, “মেজ বৌদিদি, আমি আর কখনও তোমার কোনও কথা শুনিব না। এই জন্যই বুঝি আজ এত সাজান—চুল বাধা?” তিনি যত হাসিতে হাসিতে জিজ্ঞাসা করেন, “ঠাকুরঝি, কি হইয়াছে?” সে ততই রাগ করে। শোভার সেই লজ্জারাগরক্ত আননের ছবি প্রভাতের হৃদয়ে মুদ্রিত হইয়া গেল।

 প্রভাত আকাশে কুসুমকানন রচনা করিতে লাগিল। সে কাননে কুসুমের পার্শ্বে কণ্টক নাই। সে উপবনে কেবল কুসুম, কেবল আনন্দ, কেবল সুখ। হায়, মুগ্ধ যুবকের কল্পনা!

৪৫