পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বটে সৌধে সৌধে কিন্তু সে পতাকা ইউনিয়ন জ্যাক নয়—সে পতাকা কৃষ্ণবর্ণের। এমনি করেই বাঙ্গলা দেশ অভ্যর্থনা জানালো তাদের ভবিষ্যৎ অধীশ্বরকে।

 ছয়মাস কারাদণ্ড হল সুভাষ বাবুর। এই প্রথম তার কারাবাস! তিনি আশা করেছিলেন ছয়মাসের বেশী কারাদণ্ড হয়ত তাকে ভোগ করতে হবে। কিন্তু কার্যত তা হয়নি দেখে তিনি বলেছিলেন, মাত্র ছ'মাস? আমি কি ছিঁচকে চোর নাকি?

 ছয়মাস পুরো কারাবাসের পর ১৯২২ সালে সুভাষবাবু আবার কর্মক্ষেত্রে এসে নামলেন। অবশ্য এবারে তার কর্মক্ষেত্র রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে গড়ে উঠলো না। এই সময়ে বাঙ্গলাদেশে বিরাট প্লাবনে বহু ঘরবাড়ী ভেসে গিয়েছিল। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের পরিচালনায় একটি সাহায্য সমিতি খুলে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সংগ্রহ করে সুভাষ বাবু জনসেবায় বাপিয়ে পড়লেন। এই সময় তার এই অক্লান্ত সেবা দেখে সকলেই বিস্মিত ও মুগ্ধ হয়েছিল। লর্ড লিটন নিজে ব্যক্তিগতভাবে তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন এবং তাঁর কাজের সুখ্যাতি করেছিলেন।

 এই রকম জনহিতকর কাজের দিকে বরাববই তার ঝোঁক দেখতে পাওয়া যায়। অনেক সময়ে দুর্ভিক্ষ বন্যা প্রভৃতি দুর্যোগে তাকে সেবা করতে দেখা গিযেছে। শুধু তাই নয় জেলে (মান্দালয়ে বা অন্যত্র) থাকাকালীন বন্ধুদের সহিত পত্রালাপের মধ্যে তিনি বারবার সমাজসেবা ও দুঃস্থ-সেবার প্রতি জোর দিতেন। এবং এ বিষয়ে তিনি কতদূর যে আগ্রহশীল ছিলেন তা তার চিঠিপত্রের ভাব ও ভাষার মধ্য দিয়েই প্রকাশ পেত। শুধু সেবা নয়, তিনি চেয়েছিলেন প্রত্যেক দুঃস্থ নর-নারীকে স্বাবলম্বী করে তোলবার মত যথাসাধ্য কার্যকরী শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এই বিষয়ে জেলের মধ্য থেকেই সুন্দর সুন্দর পরিকল্পনা তিনি পাঠাতেন। এমন কি আজাদ হিন্দ ফৌজের ইতিহাস আলোচনার সময়েও আমরা দেখতে পাই যে, বাঙ্গলার দুর্ভিক্ষের সময়ে তিনি এক লক্ষ টন চাল পাঠাবার চেষ্টা করেছিলেন।

১৪