পাতা:নৌকাডুবি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শিমুলঘাটায় তাঁহার বেহান দীন অবস্থায় থাকেন। ব্রজমোহনবাবুর অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল, ইঁহার বাসস্থান তাঁহাদের স্বগ্রামে উঠাইয়া লইয়া ইঁহাকে সুখে-স্বচ্ছন্দে রাখেন ও বন্ধুঋণ শোধ করেন। কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকাতে হঠাৎ সে প্রস্তাব করা সংগত মনে করেন নাই। এবারে বিবাহ উপলক্ষে তাঁহার বেহানকে তিনি বাস উঠাইয়া লইতে রাজি করাইয়াছেন। সংসারে বেহানের একটিমাত্র কন্যা– তাহার কাছে থাকিয়া মাতৃহীন জামাতার মাতৃস্থান অধিকার করিয়া থাকিবেন, ইহাতে তিনি আপত্তি করিতে পারিলেন না। তিনি কহিলেন, “যে যাহা বলে বলুক, যেখানে আমার মেয়ে-জামাই থাকিবে সেখানেই আমার স্থান।”

 বিবাহের কিছুদিন আগে আসিয়া ব্রজমোহনবাবু তাঁহার বেহানের ঘরকন্না তুলিয়া লইবার ব্যবস্থা করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। বিবাহের পর সকলে মিলিয়া একসঙ্গে যাত্রা করাই তাঁহার ইচ্ছা। এইজন্য তিনি বাড়ি হইতে আত্মীয় স্ত্রীলোক কয়েকজনকে সঙ্গেই আনিয়াছিলেন।

 বিবাহকালে রমেশ ঠিকমত মন্ত্র আবৃত্তি করিল না, শুভদৃষ্টির সময় চোখ বুজিয়া রহিল, বাসরঘরের হাস্যোৎপাত নীরবে নতমুখে সহ্য করিল, রাত্রে শয্যাপ্রান্তে পাশ ফিরিয়া রহিল, প্রত্যুষে বিছানা হইতে উঠিয়া বাহিরে চলিয়া গেল।

 বিবাহ সম্পন্ন হইলে মেয়েরা এক নৌকায়, বৃদ্ধেরা এক নৌকায়, বর ও বয়স্যগণ আর-এক নৌকায় যাত্রা করিল। অন্য এক নৌকায়, রোশনচৌকির দল যখন-তখন যে-সে রাগিণী যেমন-তেমন করিয়া আলাপ করিতে লাগিল।

 সমস্ত দিন অসহ্য গরম। আকাশে মেঘ নাই, অথচ একটা বিবর্ণ আচ্ছাদনে চারি দিক ঢাকা পড়িয়াছে– তীরের তরুশ্রেণী পাংশুবর্ণ।

১২