পাতা:নৌকাডুবি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কোথা হইতে আসিয়া তুমি আমাকে পছন্দ করিলে— দুই দিনের মধ্যেই বিবাহ হইয়া গেল, তার পরে দেখো, কী সব বিপদই ঘটিল।”

 রমেশ নিশ্চল হইয়া তাকিয়ার উপরে শুইয়া পড়িল। আকাশে চাঁদ উঠিয়াছিল, তাহার জ্যোৎস্না কালি হইয়া গেল। রমেশের দ্বিতীয় প্রশ্ন করিতে ভয় হইতে লাগিল। যতটুকু জানিয়া ফেলিয়াছে, সেটুকুকে সে প্রলাপ বলিয়া, স্বপ্ন বলিয়া সুদূরে ঠেলিয়া রাখিতে চায়। সংজ্ঞাপ্রাপ্ত মূর্ছিতের দীর্ঘশ্বাসের মতো গ্রীষ্মের দক্ষিণ হাওয়া বহিতে লাগিল। জ্যোৎস্নালোকে নিদ্রাহীন কোকিল ডাকিতেছে— অদূরে নদীর ঘাটে বাঁধা নৌকার ছাদ হইতে মাঝিদের গান আকাশে ব্যাপ্ত হইতেছে। অনেকক্ষণ কোনো সাড়া না পাইয়া বধূ অতি ধীরে ধীরে রমেশকে স্পর্শ করিয়া কহিল, “ঘুমাইতেছ?”

 রমেশ কহিল, “না।”

 তাহার পরেও অনেকক্ষণ রমেশের আর কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। বধূ কখন আস্তে আস্তে ঘুমাইয়া পড়িল। রমেশ উঠিয়া বসিয়া তাহার নিদ্রিত মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। বিধাতা ইহার ললাটে যে গুপ্তলিখন লিখিয়া রাখিয়াছেন, তাহা আজও এই মুখে একটি আঁক কাটে নাই। এমন সৌন্দর্যের ভিতরে সেই ভীষণ পরিণাম কেমন করিয়া প্রচ্ছন্ন হইয়া বাস করিতেছে।

 বালিকা যে রমেশের পরিণীতা স্ত্রী নহে এ কথা রমেশ বুঝিল, কিন্তু সে যে কাহার স্ত্রী তাহা বাহির করা সহজ হইল না। রমেশ তাহাকে কৌশল করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “বিবাহের সময় তুমি আমাকে যখন প্রথম দেখিলে, তখন তোমার কী মনে হইল?”

২০