ভারতী কহিল, দেখুন আগে কি দিই—
অপূর্ব্ব বলিল, আমি জানি তসর কিংবা গরদ। কিন্তু আমার প্রয়োজন নেই,—আপনি বার করবেন না।
সন্ধ্যা করবেন না?
না।
শোবেন কি পরে? আফিসের ওই কোট-পেণ্টুলানসুদ্ধ না কি?
হাঁ।
খাবেন না?
না।
সত্যি?
অপূর্ব্বর কণ্ঠস্বরে বহুক্ষণ হইতেই তাহার সহজ সুর ছিল না, এবার সে স্পষ্টই রাগ করিয়া কহিল, আপনি কি তামাসা করচেন না কি?
ভারতী মুখ তুলিয়া তাহার মুখের দিকে চাহিল, বলিল, তামাসা ত আপনিই করচেন। আপনার সাধ্য আছে না খেয়ে উপোস করে থাকেন?
এই বলিয়া সে আলমারির মধ্য হইতে একখানি সুন্দর গরদের শাড়ি বাহির করিয়া কহিল, একেবারে নিভাঁজ পবিত্র। আমিও কোনদিন পরিনি। ওই ছোট ঘরটায় গিয়ে কাপড় ছেড়ে আসুন, নীচে কল আছে, আমি আলো দেখাচ্চি, হাত-মুখ ধুয়ে ওইখানেই মনে মনে সন্ধ্যা-আহ্নিক সেরে নিন। নিরুপায়ে এ ব্যবস্থা আছে, ভয়ঙ্কর অপরাধ কিছু হবে না।
হঠাৎ তাহার গলায় শব্দ ও বলার ভঙ্গী এমন বদলাইয়া গেল যে অপূর্ব্ব থতমত খাইয়া গেল। তাহার দপ্ করিয়া মনে পড়িল সেদিন ভোরবেলাতেও ঠিক যেন এমনি করিয়াই কথা কহিয়া সে ঘর হইতে বাহির হইয়া গিয়াছিল। অপূর্ব্ব হাত বাড়াইয়া আস্তে আস্তে বলিল, দিন না কাপড়, আমি নিজেই আলো নিয়ে নীচে যাচ্চি। আমি কিন্তু যার তার হাতে ভাত খেতে পারব না তা বলে দিচ্চি।
ভারতী নরম হইয়া কহিল, সরকার মশায় যে ভাল বামুন। গরীব লোক, হোটেল করেচেন, কিন্তু অনাচারী ন’ন। নিজেই রাঁধেন, সবাই তাঁর হাতে খায়,—কেউ আপত্তি করে না—আমাদের ডাক্তারবাবুর খাবার পর্য্যন্ত তাঁর কাছ থেকেই আসে।
তথাপি অপূর্ব্বর কুণ্ঠা ঘুচিল না, বিরসমুখে কহিল, যা তা খেতে আমার বড় ঘৃণা বোধ হয়।
ভারতী হাসিল, কহিল, যা তা খেতে কি আমিই আপনাকে দিতে পারি?
১১৩