অপূর্ব্ব কহিল, না এতে সত্যই দোষ নেই। ভাক্তারবাবু বললেন, চলুন, ফিরে যাই—আমিও ফিরে এলাম। এখানে যে মাতালের কাণ্ডে খুনোখুনি ব্যাপার হয়ে আছে সে কে জানতো?
জানলে কি করতেন?
জানলে? অর্থাৎ—আমার জন্যে আপনাকে এত কষ্ট পেতে হবে জানলে আমি কখ্খনো ফিরে আসতে রাজি হোতাম না।
ভারতী কহিল, খুব সম্ভব বটে। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম আপনি নিজেই ইচ্ছে করে ফিরে এসেচেন।
অপূর্ব্বর মুখ রাঙা হইয়া উঠিল। সে মুখের গ্রাস গিলিয়া লইয়া সজোরে প্রতিবাদ করিয়া বলিল, কখ্খনো না। নিশ্চয় না। কাল বরঞ্চ আপনি ডাক্তারবাবুকে জিজ্ঞাসা করে দেখবেন।
ভারতী শান্তভাবে কহিল, এত জিজ্ঞাসা করারই বা দরকার কি? আপনার কথাই কি আর বিশ্বাস করা যায় না!
তাহার কণ্ঠস্বরের কোমলতা সত্ত্বেও অপুর্ব্বর গা জ্বলিয়া গেল। সে ফিরিয়া আসিতেই ভারতী যে মন্তব্য প্রকাশ করিয়াছিল তাহা স্মরণ করিয়া উত্তাপের সহিত বলিল, আমার মিথ্যা কথা বলা অভ্যাস নয়,—আপনি বিশ্বাস না করতে পারেন।
ভারতী কহিল আমিই বা বিশ্বাস না করব কেন?
অপূর্ব্ব বলিল, তা জানিনে। যার যেমন স্বভাব। এই বলিয়া সে মুখ নীচু করিয়া আহারে মন দিল।
ভারতী ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া ধীরে ধীরে বলিল, আপনি মিথ্যে রাগ করচেন। ডাক্তারের কথায় না এসে নিজের ইচ্ছের ফিরে এলেই বা দোষ কি, তাই শুধু আপনাকে আমি বলছিলাম। এই যে তখন আপনি নিজে খুঁজে খুঁজে আমার এখানে এলেন তাতেই কি কোন দোষ হয়েছে?
অপূর্ব্ব খাবার হইতে মুখ তুলিল না, বলিল, বিকালবেলা সংবাদ নিতে আসা এবং দুপুর রাতে বিনা কারণে ফিরে আসা ঠিক এক নয়।
ভারতী তৎক্ষণাৎ কহিল, নয়ই ত। তাই ত আপনাকে জিজ্ঞেসা করছিলাম, একটু জানিয়ে গেলে ত এতখানি খাবার কষ্ট হোত না। সমস্তই ঠিক করে রাখা যেতে পারতো।
অপূর্ব্ব নীরবে খাইতে লাগিল, উত্তর দিল না। খাওয়া যখন প্রায় শেষ হইল, তখন হঠাৎ মুখ তুলিয়া দেখিল, ভারতী স্নিগ্ধ সকৌতুক দৃষ্টে তাহার প্রতি নিঃশব্দে চাহিয়া আছে। কহিল, দেখুন ত, খাবার কত কষ্টই হ’ল?
১১৬