পরোয়ানা দিয়ে এবং সর্ব্বশেষে হংকং বন্দর দক্ষিণা প্রদান করে বেয়াল্লিশ সালে যজ্ঞ সমাধা হল। ঠিকই হয়েছে। এত সপ্তায় আফিঙ পেয়েও যে মূর্খ খেতে আপত্তি করে তার এমনি প্রায়শ্চিত্ত হওয়াই উচিত!
ভারতী বলিল, এ তোমার গল্প!
ডাক্তার কহিলেন, তা হোক, গল্পটা শুনতে ভালো। তার এই না দেখে ফ্রান্সের ফরাসী সভ্যতা বললে, আমার ত আফিঙ নেই, কিন্তু, খাসা মানুষ মারা কল আছে। অতএব, যুদ্ধং দেহি। হল যুদ্ধ। ফরাসী চীন সাম্রাজ্যের আনাম প্রদেশটা কেড়ে নিলে। আর যুদ্ধের খরচা, অধিকতর বাণিজ্যের সুবিধে ট্রিণ্টবোর্ট ইত্যাদি ইত্যাদি—এসব তুচ্ছ কাহিনী থাক্।
ভারতী কহিল, কিন্তু দাদা, তালি কি একহাতে বাজে? চীনের অন্যায় কি কিছুই ছিল না?
ডাক্তার বলিলেন, থাকতে পারে। তবে তামাসা এই যে, ইয়োরোপীয় সভ্যতার অন্যায় বোধটা অপরের ঘর চড়াও হয়েই হয়, তাদের নিজেদের দেশের মধ্যে ঘটতে দেখা যায় না।
তারপরে?
বলচি। জার্ম্মান সভ্যতা দেখলেন, বা রে বাঃ, এ ত ভারি মজা। আমি যে ফাঁকে পড়ি। তিনি এক হাজার মিশনারি এনে লেলিয়ে দিলেন। ’৯৭ সালে তাঁরা যখন তোমাদের প্রভু যীশুর মহিমা শান্তি ও ন্যায়ধর্ম্ম প্রচারে ব্যাপৃত, তখন একদল চীনে ক্ষেপে উঠে পরম ধার্ম্মিক জন-দুই প্রচারকের মুণ্ডু ফেললে কেটে। অন্যায়! চীনেরই অন্যায়। অতএব গেল স্যান্টঙ প্রদেশ জার্মানির উদর বিবরে। তারপর এল বক্সার বিদ্রোহ। ইয়োরোপের সমস্ত সভ্যতা এক হয়ে তার যে প্রতিশোধ নিলে, কোথাও তার তুলনা নেই। তার অপরিমেয় খেসারতের ঋণ কতকালে যে চীনেরা শোধ দেবে তা যীশুখ্রীষ্টই জানেন। ইতিমধ্যে ব্রিটিশ সিংহ, জারের ভালুক, জাপানের সূর্য্যদেব—কিন্তু আর না বোধ, গলা আমার শুকিয়ে আসচে। দুঃখের তুলনায় একা আমরা ছাড়া বোন হয় এদের আর সঙ্গী নেই। সম্রাট শিন্লূঙের নির্ব্বাণ লাভ হোক, তার আশীর্ব্বাদের বহর আছে!
ভারতী মস্ত বড় একটা দীর্ঘশ্বাস মোচন করিয়া চুপ করিয়া রহিল।
ভারতী!
কি দাদা?
চুপচাপ যে?
তোমার গল্পের কথাটাই ভাবচি। আচ্ছা দাদা, এইজন্যেই কি চীনেদের দেশে
২৪৫