এ পরিহাস নয়, সব্যসাচীর অন্তরের উক্তি। ভারতী যেন ফ্যাকাশে হইয়া গেল, অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞাসা করিল, দাদা, এই কি তোমার পথের দাবীর নীতি?
ডাক্তার জবাব দিলেন, ভারতী, পথের দাবী আমার তর্কশাস্ত্রের টোল নয়—এ আমার পথ চলার অধিকারের জোর। কে কবে কোন্ অজানা প্রয়োজনে নীতিবাক্য রচনা করে গেল পথের দাবীর সেই হবে সত্য, আর এর তরে যার গলা ফাঁসির দড়িতে বাঁধা, তার হৃদয়ের বাক্য হবে মিথ্যা? তোমার পরম সত্য কি আছে জানিনে, কিন্তু পরম মিথ্যা যদি কোথাও থাকে ত সে এই!
উত্তেজনায় সুমিত্রার চোখের দৃষ্টি প্রখর হইয়া উঠিল, কিন্তু এই ভয়ানক কথা শুনিয়া ভারতী শঙ্কায় ও সংশয়ে একেবারে অভিভূত হইয়া পড়িল।
কৰি!
আজ্ঞে।
শশীর কি ভক্তি দেখেচ? এই বলিয়া ডাক্তার হাসিলেন, কিন্তু এ হাসিতে কেহ যোগ দিল না। ডাক্তার দেয়ালের ঘড়ির প্রতি চাহিয়া কহিলেন, জোয়ার শেষ হতে আর দেরি নেই, আমার যাবার সময় হয়ে এল। তোমার তারা-বিহীন শশি-তারা লজে আর আসার সময় পাবো না।
শশী কহিল, কালই আমি এ বাসা ছেড়ে দেব।
কোথায় যাবে?
শশী কহিল, আপনার আদেশমত ভারতীর কাছে গিয়ে থাকবো। ডাক্তার সহাস্মে কহিলেন, দেখেচ ভারতী, শশী আমার আদেশ অমান্য করে না। ও বাসাটার নাম কি দেবে কবি? শশী-ভারতী লজ? বার-তিনেক ফসকাতে ত আমিই দেখলাম, এবারে হয়ত লাগতেও পারে। ভারতী লোক ভাল। ওর শরীরে দয়া-মায়া আছে।
এত কষ্টেও ভারতী হাসিয়া ফেলিল। সুমিত্রা হাসি-মুখে মাথা নত করিল।
ডাক্তার বলিলেন, তোমার টাকার থলিটি কিন্তু সঙ্গে নিলাম। ভারতীর কাছে রেখে যাবো, ও একটা বাড়ি কিনবে।
ভারতী বলিল, দাদা, কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেওয়া কি তোমার থামবে না?
শশী বলিল, টাকা আপনি নিন ডাক্তার, আপনাকে আমি দিলাম। আমার দেশের বাড়ি-ঘর সর্ব্বস্ব বেচা টাকা যেন দেশের কাজেই লাগে।
ডাক্তায় হাসিলেন, কিন্তু তাঁহার চোখ ছলছল করিয়া আসিল। বলিলেন, টাকা আমার আছে, শশী, এখন আর ধরকার নেই। তা ছাড়া, আর বোধ হয় টাকার অভাব হবে না। এই বলিয়া তিনি স্মিতমুখে সুমিত্রার প্রতি চাহিলেন।
২৬১