জ্যামেকা ক্লাব ভোর রাত্রে পুলিশে ঘেরাও করে,—তিনজন পুলিশ আর আমাদের বিনোদ মারা গেছে। দুই ভাই মহতপ ও সূর্য সিংহ এক সঙ্গে ধরা পড়েছে। অযোধ্যা হুংকঙে—দুর্গা, সুরেশ পেনাঙে—সিঙ্গাপুরের জ্যামেকা ক্লাবের জন্যে পুলিশ সমস্ত সহর তোলপাড় করে বেড়াচ্চে। মোট সুসংবাদটা এই!
খবর শুনিয়া কৃষ্ণ আইয়ার পাণ্ডুর হইয়া গেল। তাঁহার মুখ দিয়া শুধু বাহির হইল, ড্যন্!
ডাক্তার কহিলেন, ওরা দুভাই যে রেজিমেণ্ট ছেড়ে কবে এবং কেন সাংহাইয়ে এলো জানিনে। সুমিত্রা, ব্রজেন্দ্র বাস্তবিক কোথায় জানো কি?
প্রশ্ন শুনিয়া সুমিত্রা পাথর হইয়া গেল।
জানো?
প্রথমে তাহার গলা দিয়া কিছুতেই স্বর ফুটিল না, তাহার পরে ঘাড় নাড়িয়া কেবল বলিল, না।
কৃষ্ণ আইয়ার কহিল, সে একাজ করতে পারে আমার বিশ্বাস হয় না।
ডাক্তার, হাঁ, না কিছুই বলিলেন না—নিঃশব্দে স্থির হইলা বসিয়া রহিলেন।
শশী কহিল, ব্রজেন্দ্র জানে আপনি হাঁটা-পথে বর্ম্মা থেকে বেরিয়ে গেছেন।
ডাক্তার এ কথারও উত্তর দিলেন না, তেমনি স্তব্ধ হইয়া রহিলেন।
মুখের শব্দ নাই, বাক্য নাই, মুর্ত্তির মত সকলে নিঃশকে বসিয়া। সম্মুখে টেলিগ্রাফের সেই কাগজগুলা পড়িয়া। রাতি পুড়িয়া নিঃশেষ হইতেছিল, শশী আর একটা জ্বালিয়া মেঝের উপর বসাইয়া দিল। মিনিট দশেক এইভাবে কাটিবার পরে প্রথম চেতনার লক্ষণ দেখা দিল আইয়ারের দেহে। সে পকেট হইতে সিগারেট বাহির করিয়া বাতির আগুনে ধরাইয়া লইয়া ধুঁয়ার সঙ্গে দীর্ঘশ্বাস ছাড়িয়া বলিল, নাউ ফিনিশড্!
ডাক্তার তাহার মুখের প্রতি চাহিলেন। প্রত্যুত্তরে সিগারেটে পুনশ্চ একটা বড় টান দিয়া শুধু ধূম উদ্গীরণ করিল। শশী মদ খাইত, কিন্তু তামাকের ধুঁয়া সহ্য করিতে পারিত না। এখন সে খামোকা একটা চুরুট ধরাইয়া ঘন ঘন টানিয়া ঘর অন্ধকার করিয়া তুলিল।
আয়ার কহিল, ওয়ার্স্টল্যক্। উই মস্ট স্টপ!
শশী কহিল, আমি আগেই জানতাম। কিছুই হবে না, শুধু—
ডাক্তার সহসা প্রশ্ন করিলেন, তুমি কবে যাবে বললে? বুধবারে?
সুমিত্রা মুখ তুলিয়া চাহিল না, মাথা নাড়িয়া কহিল, হাঁ।
শশী পুনরায় বলিল, এতবড় পৃথিবী জোড়া শক্তিমান রাজশক্তির বিরুদ্ধে
২৮৩