ভারতী কহিল, চেন, ঘড়ি পাওয়া গেল, বলুন ত আঙটি আপনার কটা? হাতে একটিও নেই দেখচি
অপূর্ব্ব বলিল, হাতে নেই, বাক্সেও ছিল না। আঙটিই আমার কখনো হয়নি।
তা ভাল। সোনার বোতাম? সে বোধ হয় আপনার গায়ে সার্টে লাগানো আছে?
অপূর্ব্ব ব্যস্ত হইয়া বলিল, কই না। সে যে একটা গরদের পাঞ্জাবির সঙ্গে তোরঙ্গের মধ্যে সুমুখেই ছিল।
ভারতী আলনার প্রতি একবার দৃষ্টিপাত করিল, যে-সকল বস্ত্র তখনও তোলা হয় নাই একপাশে ছিল, তাহার মধ্যে অনুসন্ধান করিল, তার পরে একটু হাসিয়া কহিল, জামাসুদ্ধ এটা গেছে দেখচি। অন্য বোতাম ছিল না তা?
অপূর্ব্ব মাথা নাড়াইয়া জানাইল, ছিল না। ভারতী জিজ্ঞাসা করিল, ট্রাঙ্কে টাকা ছিল ত? অপূর্ব্ব ‘ছিল’ বলিয়া সায় দিলে ভারতী উদ্বিগ্নমূখে কহিল, তাহলে তাও গেছে। কত ছিল জানেন না? তা আমি আগেই বুঝেচি। আপনার মনিব্যাগ আছে জানি। বার করে আমাকে দিন ত দেখি—
অপূর্ব্ব পকেট হইতে তাহার ছোট চামড়ার থলেটি বাহির করিয়া ভারতীর হাত দিতে সে মেঝের উপর ঢালিয়া ফেলিয়া সমস্ত গণনা করিয়া বলিল, দু’শ পঞ্চাশ টাকা আট আনা। বাড়ি থেকে কত টাকা নিয়ে বার হয়েছিলেন মনে আছে?
অপূর্ব্ব কহিল, আছে বৈ কি। ছ’শ টাকা।
ভারতী টেবিলের উপর হইতে এক টুকরা কাগজ ও পেন্সিল লইয়া লিখিতে লাগিল, জাহাড় ভাড়া, ঘোড়ারগাড়ি ভাড়া, কুলিভাড়া—পৌছে বাড়িতে টেলিগ্রাম করেছিলেন ত? আচ্ছা তারও এক টাকা, তারপরে এই দশ দিনের খরচ—
অপূর্ব্ব বাধা দিয়া কহিল, সে ত তেওয়ারীকে জিজ্ঞাসা না করলে জানা যাবে না।
ভারতী ঘাড় নাড়িয়া বলিল, তা যাবে, দু’এক টাকার তফাৎ হতে পারে, বেশি হবে না। যে ফুটা দিয়া আজ সে চুরি করা দেখিয়াছিল, সেই পথে চোখ পাতিয়া সে যে এই ঘরের যাবতীয় ব্যাপার নিরীক্ষণ করিত, তেওয়ারীর বাজার করা হইতে আরম্ভ করিয়া খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন পর্য্যন্ত কিছুই বাদ যাইত না, এ কথা বলিল না, কাগজে ইচ্ছামত একটা অঙ্ক লিখিয়া সাহসা মুখ তুমিয়া কহিল, এ ছাড়া আর বাজে খরচ নেই ত?
না।
ভারতী কাগজের উপর হিসাব করিয়া কহিল, তাহলে দু’শ আশি টাকা চুরি গেছে।
অপূর্ব্ব চমকিয়া কহিল, এত টাকা? রোস রোস, আরো কুড়ি টাকা বাদ দাও,— জরিমানার টাকাটা ধরা হয়নি।
৪০