পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
১৯

সে রূপ নীল-কৃষ্ণ নব মেঘের ন্যায়, জগতের সমস্ত বর্ণের প্রধান বর্ণ। যাহা নীলাকাশে, নীলাম্বুতে, নীলবনান্তে সর্ব্বত্র খেলে, সেই নয়নাভিরাম স্নিগ্ধ কৃষ্ণাভ নীলরূপ—ভগবানের প্রতীক। রাধা যেদিকে দৃষ্টিপাত করেন, সেইদিকেই সেই স্মেরাস্য কমলনেত্র কৃপাময়ের কৃপার আলেখ্য। সেই রূপ সমুদ্রের মত বিশাল এবং জল-বিন্দুর মত ক্ষুদ্র, মহৎ হইতে মহান্‌, অণু হইতে অনীয়ান্‌। তিনি অনন্ত আকাশে অনন্ত শক্তির আধা, বহু-রূপ, বহু-শীর্ষ, বহু-প্রহরণধারী, কিন্তু আমার কাছে, আমারই মত ক্ষুদ্র; বড়র কাছে বড়, “ভয়ানাং ভয়ং ভীষণং ভীষণানাং”, কিন্তু আমার মত ক্ষুদ্রের কাছে তিনি ক্ষুদ্র। বিশাখা যখন চিত্রপট দেখায়, তখন আর আর সখীরা নিষেধ করিয়াছিল,

“বিশাখা যখন দেখায় চিত্রপট।
মোরা বলেছিলাম সে বড় লম্পট॥” (কৃ)

‘লম্পট’ কথায় পাঠক চমকিয়া উঠিবেন না; মহাজন-পদাবলীতে ভুবন-পাবন চৈতন্যদেবকে “কীর্ত্তন-লম্পট” বলা হইয়াছে। কৃষ্ণে সমর্পিতা প্রাণারাধা যখন—

“কি চিত্র বিচিত্র মরি দেখিইল চিত্র করি,
চিত মম নিলে যে হরি!”

বলিয়া সখীদের গলা জড়াইয়া মূর্চ্ছিত হইয়া পড়িলেন—তখন তাহারা বিলাপ করিয়া বলিতেছে,

“বিনা গুণ পরখিয়া কেন এমন হ’লি রাই;
দোষগুণ তার, না করি বিচার, কেবল রূপ দেখি রাই ভুলে গেলি।” (কৃ)”

চিত্র-দর্শনের পর ছায়া-দর্শন। যমুনা-তীরে নীপ-তরুর উপরে কৃষ্ণ। যমুনা-জলে শিখিপুচ্ছ ও মকর-কুণ্ডলের দীপ্তির প্রতিবিম্ব ঝল্‌মল্‌ করিয়া উঠিয়াছে। রাধা উর্দ্ধে চাহিয়া কৃষ্ণরূপ দেখিতে পারেন নাই—কারণ