অকস্মাৎ বিপদে মূহ্যমান বিমূঢ় চিত্ত হইতে সেই সুখস্বপ্নের স্মৃতিটুকুও মুছিয়া যাইতেছে। আজ,—
“শীতল যমুনা জল, অনল সমান ভেল”
এবং গোপীরা সর্ব্বস্বহারা হইয়া যেথা সেথা পড়িয়া আছে—
“বিপথে পড়ল বৈছে মালতী মালা”
আজ,—
“অতি শীতল মলয়ানিল মন্দ মধুর-বহনা”
তাহাদের স্পর্শ করিয়া প্রদাহের উৎপত্তি করিতেছে। আজ রাধা কৃষ্ণ-রঙ্গ-রস-জনিত নূতন আনন্দ সবে আস্বাদ করিতে যাইতেছিলেন,—প্রতিপদের চাঁদের রেখা যেরূপ বহু আশা দিয়া তিরোহিত হয়, সেইরূপ তাঁহার সমস্ত সুখ সম্ভাবনার স্বপ্ন ভাঙ্গিয়া গিয়াছে,—
“প্রতিপদ চাঁদ উদয় যৈছে যামিনী, সুখ নব ভৈগেল নিরাশা”
তখন রাধা বলিতেছেন—
“আমি হরি-লালসে পরাণ ত্যজব, তায়ে পাওব আন জনমে।”
এ জনমে তো পাইলাম না, তাঁকে কামনা করিয়া মরিব, হয়ত অন্য জন্মে তাঁহার সঙ্গে মিলন হইবে।
মাথুরের অনেক গানের উপর পরবর্ত্তী কবিরা তুলি ধরিয়া, রং ফলাইয়া, মাথুর লীলায় অপূর্ব্ব কারুণ্য ঢালিয়া দিয়াছেন। শ্রোতারা মাথুর গানে কাঁদিয়া বিভোর হন; কারণ ভগবানের সঙ্গে বিচ্ছেদ—শিবের সঙ্গে জীবের বিরহ, ইহা হইতে মর্ম্মান্তিক আর কি হইতে পারে? যাঁহাকে খুঁজিতে যাইয়া জন্মে জন্মে কেবলই ভুল করিয়াছি, বিশ্বতরু-ভ্রমে সেওড়া গাছের তলায় নৈবেদ্য সাজাইয়া ভূত-প্রেতের অত্যাচার সহ্য করিয়াছি, কাঞ্চন-ভ্রমে কাচের সন্ধান করিয়া মরিয়াছি, চন্দন-তরু-ভ্রমে কণ্টক-লতা আলিঙ্গন করিয়া জর্জ্জরিত হইয়াছি—সেই সার্ব্বকালীন