পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭০
পদাবলী-মাধুর্য্য

তুমি কারে বলি’ কারে ধরহে বঁধু! আমি তোমার ‍রাই নই, আমি ললিতা, তোমার প্রেমময়ী রাই দাঁড়িয়ে ওই,—বঁধু, চোখে লেগেছে কি রাই-রূপের ধাঁধা, তাই জগৎ ভরে’ দেখছ রাধা-রাধা!” কৃষ্ণ পাগলের মত “কই কই প্রেমময়ী” বলিতে বলিতে পুনরায় সুদেবীকে ধরিলেন, সে ‍হাসিয়া সরিয়া যাইতে যাইতে বলিল, “এ কি করহে বঁধূ, তুমি কারে বলি’ কারে ধর হে বঁধু! আমি রাই নই, আমি সুদেবী, তোমার প্রেমময়ী রাই দাঁড়িয়ে ওই—বঁধু সবে ঘোরে তেমার চক্রে, তুমি ঘোর বঁধু রাধা-চক্রে।”

 এই সকল ভাব কৃষ্ণকমল মহাপ্রভুর বিভ্রান্ত প্রেমলীলা হইতে সঙ্কলন করিয়াছিলেন। পূর্ব্বোক্ত পদে সত্যই কৃষ্ণ জগন্ময় রাধা দেখিয়া ছিলেন—সে কথা ললিতা বলিয়াছিল। সত্যই তিনি উন্মত্তবৎ রাধাচক্রে পড়িয়া দিশেহারা হইয়াছিলেন—সে কথা সুদেবী বলিয়াছিল। তাহারা কৃষ্ণের এই প্রেম-তন্ময়তা বুঝিতে পারিয়াছিল; কিন্তু এখনকার রুচিবিদ্‌গণ এই পদে শ্লীলতার অভাব দেখিয়া লজ্জিত। এইরূপে সম্পূর্ণ বিদেশী ভাবের আয়ত্ত হওয়াতে যাঁহাদের স্বরূপ নিলাম হইয়া গিয়াছে, তাঁহারা বৈষ্ণবপদতীর্থে প্রবেশের অনধিকারী, “পড়িলে ভেড়ার শৃঙ্গে, ভাঙ্গে হীরার ধার”।

 আমি পূর্ব্বে যে প্রশ্নের উত্থাপন করিয়াছি, এখন পর্য্যন্ত তাহার উত্তর দেওয়া হয় নাই। কৃষ্ণ তো মথুরায় গেলেন, এইখানে কি মাথুর-লীলার পরিসমাপ্তি? তিনি কি সত্যই চিরদিনের জন্য প্রেমের হাঠ ভাঙ্গিয়া গেলেন? আমি বলিয়াছি, বৈষ্ণবেরা কৃষ্ণ-লীলার শেষ স্বীকার করেন নাই। মন্দিরের ভিত্‌ ধ্বসিয়া পড়িল, বিগ্রহ অপহৃত, সিংহাসন শূন্য হইয়া রহিল। কিন্তু যাহা বাহিরে ছিল, সেই অন্তরের ধনকে ভক্ত অন্তরে কুড়াইয়া পাইল। তাঁহার রূপ তাহারা নয়নে গাথিয়া রাখিল, হৃদয়নাথকে হৃদয়ের অন্তঃপুরে শত দ্বার দিয়া আমন্ত্রণ করিয়া আনিল।