পাতা:পরিণীতা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিণীত SJ গুরুচরণ ধীরে ধীরে বলিলেন, সমস্ত টাকাটা তুমি দেবে ? গিরীন মুখ নীচু করিয়া বলিল,-বেশ ত, তাদের উপকার হয়গুরুচরণ প্ৰত্যুত্তরে কি একটা বলিতে যাইতেছিলেন, ঠিক এই সময়ে আন্নাকালী ছুটিয়া আসিয়া পড়িল। সেজদি, জলদি-শেখরদা কাপড় পরে নিতে বললেন,-থিয়েটার দেখতে যেতে হবে-বলিয়াই যেমন করিয়া আসিয়াছিল, তেমন করিয়াই চলিয়া গেল। তাহার ব্যগ্ৰতা দেখিয়া গুরুচরণ হাসিলেন। ললিতা স্থির হইয়া রহিল। আন্নাকালী মুহূৰ্ত্ত পরেই ফিরিয়া আসিয়া বলিল, কৈ, উঠলে না। সেজদি, আমরা সবাই দাড়িয়ে রয়েচি যে। তথাপি ললিত উঠিবার কোন লক্ষণ প্ৰকাশ করিল না। সে শেষ পৰ্য্যন্ত শুনিয়া যাইতে চায়, কিন্তু গুরুচরণ কালীর মুখের দিকে চাহিয়া একটুখানি হাসিয়া ললিতার মাথায় একটা হাত দিয়া বলিলেন, তা হ’লে যা’ মা, দেৱী করিসনে-তোর জন্যে বুঝি সবাই অপেক্ষা ক’রে আছে । অগত্যা ললিতাকে উঠিতে হইল। কিন্তু যাইবার পূর্বে, গিরীদ্রের মুখের পানে সে যে গভীর কৃতজ্ঞ দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া ধীরে ধীরে বাহির হইয়া গেল, গিরীন্দ্ৰ তাহ দেখিতে পাইল । মিনিট দশেক পরে কাপড় পরিয়া প্ৰস্তুত হইয়া, সে পান দিবার ছুতা করিয়া আর একবার বাহিরের ঘরে নিঃশব্দ পদক্ষেপে আসিয়া প্ৰবেশ করিল। গিরীন চলিয়া গিয়াছে। একাকী গুরুচরণ মোটা বালিশটা মাথায় দিয়া চোখ বুজিয়া শুইয়া আছেন, তাহার মুদিত চক্ষুর দুই পাশ বাহিয়া জল ঝরিতেছে। এ যে আনন্দাশ্ৰ, ললিতা তাহা বুঝিল। বুঝিল বলিয়াই তঁহার ধ্যান ভাঙ্গিয়া দিল না, যেমন নিঃশব্দে প্ৰবেশ করিয়াছিল, তেমনি নিঃশব্দে বাহির হইয়া গেল ।