পাতা:পাষাণের কথা.djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পাষাণের কথা

জেতবনের নাম, অনাথপিণ্ডদের নাম ও কূটিদ্বয়ের নাম চিরস্মরণীয় থাকিবে। শুনিয়াছি, কালে শ্রাবস্তীনগরী মৃৎস্তূপে পরিণত হইয়াছে, জেতবনবিহার ও গন্ধকূটি ধূলিরাশিতে পর্য্যবসিত হইয়াছে। কিন্তু তীর্থযাত্রিগণের পথপ্রদর্শক ভিক্ষু ও শ্রমণগণ অদ্যাপি জেতবন ও কোশম্বকূটির নাম গ্রহণ করিয়া থাকেন। কি দেখিয়া আসিয়াছ? রাপ্তী নদী তীরে কোশলরাজ প্রসেনজিতের উচ্চচূড় প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ চূর্ণীকৃত হইয়া রাজপথের ধূলির সহিত মিশ্রিত হইয়াছে। শ্রাবস্তীনগরীর সেই মহাশ্মশান দেখিতে গিয়াছিলে কি? যাহারা পর্ব্বতবাসী পরাক্রান্ত শাক্যজাতির ধ্বংস সাধন করিয়াছিল, তাহাদিগের বংশধরদিগকে দেখিয়াছ কি? শাক্যরাজদিগের গুরু ত্রৈপিটকোপাধ্যায় ভিক্ষুবল ও পুষ্যবুদ্ধি যে মহাবিহার নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, শিলাসঙ্কুল উদ্ভিদ সমাবৃত তাহার ধ্বংসাবশেষও বোধ হয় দেখিয়াছ। গাহড়বালবংশীয় কান্যকুব্জরাজ গোবিন্দচন্দ্র জেতবনে যে সঙ্ঘারাম নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, যে সঙ্ঘারামের ব্যয় নির্ব্বাহার্থ শ্রাবস্তীমণ্ডলে, শ্রাবস্তীবিষয়ে, শ্রাবস্তীভূক্তিতে অষ্টসংখ্যক গ্রাম দান করিয়াছিলেন, শুনিয়াছি তাহার ধ্বংসাবশেষ লইয়া নবরাজ্যের হৈমকান্তি রাজপুরুষগণ রাজবর্ত্ম নির্ম্মাণ করিয়াছেন। মহাচীন হইতে কুরুবর্ষ পর্য্যন্ত সমগ্র মহাদেশের প্রকৃতবিশ্বাসিগণ যে নগরের পথের ধূলিমুষ্টি পবিত্রজ্ঞানে মহাযত্নে সুদূর পিতৃভূমিতে লইয়া যাইতেন, যে বিহার দর্শনে সহস্র সহস্র ক্রোশব্যাপী পথাতিক্রমজনিত শ্রম বিস্মৃত হইতেন, সহস্র সহস্র বর্ষ ধরিয়া প্রকৃত বিশ্বাসিগণ যে স্থানে কোটি কোটি সুবর্ণমুদ্রা মন্দিরবিহারাদির শোভনার্থ ব্যয়িত করিয়াছিলেন, সে স্থানে শ্রাবস্তীনগরের অতীত গৌরবের সাক্ষ্য দিবার কিছুই নাই।

৪৯
[ ঘ