পাতা:পাষাণের কথা.djvu/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাষাণের কথা

শেষ হইলে সকলে পুনরায় স্তূপবেষ্টনীর মধ্যে ফিরিয়া আসিলেন। তখন দিবাকর অস্তমিত প্রায়। ইতিমধ্যে পরিচারিকাগণ আমাদিগের পুষ্পসজ্জা দূরে নিক্ষেপ করিয়াছে, নানাবিধ কাচ ও স্ফটিক নির্ম্মিত দীপ ও পাত্র আনীত হইয়াছে, কারণ সন্ধ্যা সমাগমে স্তূপে দীপোৎসব হইবে। ক্রমে সমগ্র স্তূপবেষ্টনী ক্ষুদ্র প্রদীপমালায় সজ্জিত হইল, স্থানে স্থানে উল্কাশ্রেণী সন্নিবিষ্ট হইল; বেষ্টনীর চতুষ্পার্শ্বে অগ্নি প্রজ্জ্বালিত করিবার জন্য স্তূপীকৃত ইন্ধন সংগৃহীত হইল। একে একে সপরিবারে সম্ভ্রান্ত নাগরিকগণ সুসজ্জিত হইয়া বেষ্টনীর মধ্যে আসিয়া উপস্থিত হইলেন; নানা রত্নখচিতা সর্ব্বাভরণভূষিতা, বিচিত্র বেশধারিনী পুরাঙ্গণাগণের একত্র সমাবেশে ভীষণাকার পাষাণবেষ্টনী পুনরায় যেন কুসুম সজ্জায় সজ্জিত হইল।

 সন্ধ্যাসমাগমে সমগ্র প্রান্তর আলোকমালায় ভূষিত হইল, প্রতি পটমণ্ডপে, বস্ত্রাবাসে, প্রতি পর্ণকুটীরে প্রদীপশ্রেণী প্রজ্জ্বলিত হইয়া উঠিল। প্রান্তরের স্থানে স্থানে বৃহৎ অগ্নিকুণ্ড প্রজ্জ্বালিত হইল। রাজপুরুষগণের আদেশে প্রান্তরের বৃক্ষগুলি পর্য্যন্ত আলোকমালায় সজ্জিত করা হইয়াছিল। স্তূপের ও বেষ্টনীর আলোকগুলি প্রজ্জ্বালিত হইলে মনে হইল, যেন চক্রাকারে ঘূর্ণ্যমান জ্যোতিষ্কমণ্ডল ইতস্ততঃ উল্কানিক্ষেপ করিতে করিতে নগরপ্রান্তে প্রান্তর মধ্যে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। দীপোৎসবের সহিত উৎসবের স্রোত প্রবল হইয়া উঠিল, সুরা ও তাম্বুলের বিপণিতে প্রবেশলাভ দুঃসাধ্য হইয়া পড়িল। রজনীকালে আলোকমালা ও জনসঙ্ঘের কোলাহলের ভয়ে নিশাচরগণ বহুদূরে পলায়ন করিল। সন্ধ্যা অতীত হইলে রাজা ধনভূতি মহিষীসমভিব্যাহারে স্তূপের গর্ভগৃহে প্রবেশ করিলেন। গর্ভমধ্যে মহাস্থবির ও নবাগত

৫৮