পাতা:পুনশ্চ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৪
পুনশ্চ

চৈত্রসংক্রান্তির রাত্রে আবার মিলন
মহিষী বল্‌লে, “দেখলাম নাচ। যেন মঞ্জরিত শালতরু-শ্রেণীতে
বসন্ত বাতাসের মত্ততা।
সকলেই সুন্দর।
যেন ওরা চন্দ্রলোকের শুক্লপক্ষের মানুষ।
কেবল একজন কুশ্রী কেন রস-ভঙ্গ করলে, ও যেন রাহুর অনুচর।
ওখানে কী গুণে সে পেল প্রবেশের অধিকার।”
রাজা স্তব্ধ হয়ে রইল।
কিছু পরে বল্‌লে, “ঐ কুশ্রীর পরম বেদনাতেই তো
সুন্দরের আহ্বান।
কালো মেঘের লজ্জাকে সান্ত্বনা দিতেই সূর্য্যরশ্মি
তার ললাটে পরায় ইন্দ্রধনু,
মরু-নীরস কালো মর্ত্তের অভিশাপের উপর স্বর্গের করুণা
যখন রূপ ধরে
তখনই তো শ্যামল সুন্দরের আবির্ভাব।
প্রিয়তমে, সেই করুণাই কি তোমার হৃদয়কে কাল মধুর করেনি।”
“না, মহারাজ, না” বলে মহিষী দুইহাতে মুখ ঢাকলে।
রাজার কণ্ঠের সুরে অশ্রুর ছোঁওয়া লাগল।
বল্‌লে, “যাকে দয়া করলে হৃদয় তোমার ভরে উঠত
তাকে ঘৃণা করে মনকে কেন পাথর করলে।”
“রস-বিকৃতির পীড়া সইতে পারিনে”
এই বলে মহিষী আসন থেকে উঠে পড়ল
রাজা তার হাত ধরলে,
বল্‌লে, “একদিন সইতে পারবে
আপনারই আন্তরিক রসের দাক্ষিণ্যে
কুশ্রীর আত্মত্যাগে সুন্দরের সার্থকতা।”