পাতা:পুনশ্চ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পুনশ্চ
৪৫

একদিন প্রতিবেশীর বাড়া ভাতে মুখ দিতে গিয়ে
তার দেহান্তর ঘটল।
মরণান্তিক দুঃখেও কোনোদিন জল বেরোয়নি যে ছেলের চোখে
দুদিন সে লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদে কেঁদে বেড়ালো,
মুখে অন্ন জল রুচল না,
বক্সিদের বাগানে পেকেচে করমচা,
চুরি করতে উৎসাহ হোলো না।
সেই প্রতিবেশীদের ভাগনে ছিল সাত বছরের,
তার মাথার উপর চাপিয়ে দিয়ে এল এক ভাঙা হাঁড়ি।
হাঁড়ি-চাপা তার কান্না শোনালো যেন ঘানিকলের বাঁশি।


গেবস্ত-ঘরে ঢুকলেই সবাই তাকে দূর দূর করে,
কেবল তাকে ডেকে এনে দুধ খাওয়ায় সিধু গয়লানি।
তার ছেলেটি মরে গেছে সাতবছর হোলো,
বয়সে ওর সঙ্গে তিন দিনের তফাৎ।
ওরই মতো কালো কোলো,
নাকটা ঐ রকম চ্যাপটা।
ছেলেটার নতুন নতুন দৌরাত্মি এই গয়লানি মাসির পরে,
তার বাঁধা গোরুর দড়ি দেয় কেটে,
তার ভাঁড় রাখে লুকিয়ে,
খয়েরের রং লাগিয়ে দেয় তার কাপড়ে।
দেখি না কী হয়, তারই বিবিধ রকম পরীক্ষা।
তার উপদ্রবে গয়লানির স্নেহ ওঠে ঢেউ খেলিয়ে।
তার হয়ে কেউ শাসন করতে এলে
সে পক্ষ নেয় ঐ ছেলেটারই।