পাতা:পুনশ্চ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
পুনশ্চ

কালি-মাখা ময়লা জাজিমে কাগজপত্র রাশ করা।
জ্বলচে একটা কেরোসিন লণ্ঠন।
হঠাৎ অনিল এসে উপস্থিত।
কৈলেস শশব্যস্ত উঠে দাঁড়াল
শিথিল কাছা কোঁচা সামলিয়ে।
অনিল বললে
“পার্ব্বণীটা ভুলেছিলেন গোলেমালে,
তাই এসেচি দিতে।”
তার পরে বাধো বাধো গলায় বল্‌লে
“অমনি দেখে যাব তোমাদের সুনিদিদির ঘরটা।”
গেল ঘরে।
খাটের উপর রইল বসে মাথায় হাত দিয়ে।
কিসের একটা অস্পষ্ট গন্ধ,
মূর্চ্ছিতের নিঃশ্বাসের মতো।
সে গন্ধ চুলের, না শুকনো ফুলের,
না শূন্য ঘরে সঞ্চিত বিজড়িত স্মৃতির,
বিছানায়, চৌকিতে, পর্দ্দায়।
সিগারেট ধরিয়ে টানল কিছুক্ষণ,
ছুঁড়ে ফেলে দিল জানলার বাইরে।
টেবিলের নীচে থেকে ছেঁড়। কাগজের ঝুড়িটা
নিল কোলে তুলে।
ধক্ করে উঠল বুকের মধ্যে;
দেখলে, ঝুড়ি-ভরা রাশি রাশি ছেঁড়া চিঠি,
ফিকে নীল রঙের কাগজে
অনিলেরই হাতে লেখা।
তার সঙ্গে টুকরো টুকরো ছেঁড়া একটা ফোটোগ্রাফ।