পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৩০
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

অত্যাচারিতা সোণা নাম্নী নায়িকার সামাজিক ব্যবস্থার যে দুৰ্গতির দৃষ্টান্ত পাইতেছি তাহার নিদর্শন মলুয়া, কাজলরেখা প্রভৃতি অনেক নায়িকারই জীবনে প্রদৰ্শিত হইয়াছে। এই পালাটির বৈশিষ্ট্য—নায়ক বীরনারায়ণের তেজঃপূর্ণ চরিত্র ও একনিষ্ঠ প্রেম। সমস্ত বিপদ্ ও দুঃখকে শিরোধার্য্য করিয়া লইয়া বীরনারায়ণ তাঁহার প্রেমের পূজার অর্ঘ্য সাজাইয়াছিলেন। পালাগানগুলিতে উৎকৃষ্ট নায়িকার অভাব নাই, কিন্তু নায়িকার উপযুক্ত নায়কের সংখ্যা তদনুপাতে অল্প। এই অল্পসংখ্যক নায়কের মধ্যে বীরনারায়ণ একজন। পালাটি খণ্ডিত হওয়াতে বীরনারায়ণের চরিত্রের শেষের দিকটা সম্বন্ধে আমরা অপরিজ্ঞাত আছি কিন্তু যাহারা নগেন্দ্রবাবুকে পালাটি এই খণ্ডিত অবস্থায় দিয়াছিল, তাহারা বলিয়াছিল যে শেষের দিকে বীরনারায়ণ বীরত্ব সহকারে পিতার প্রস্তাব অগ্রাহ্য করিয়া সোণাকে পাইবার অভিলাষ ব্যক্তি কািরয়াছিলেন এবং ইহার ফলে তাঁহার মৃত্যুদণ্ড হইয়াছিল।

 এই পালাটিতে রাজা-প্রজার সম্বন্ধ বিষয়ে কতকগুলি কথা আমরা জানিতে পারিতেছি। রাজার দুঃশাসন প্রজারা নীরবে মানিয়া লইত না। তাহাদের মনে বিদ্রোহের ভাব অবিচারের ফলে জাগিয়া উঠিত। ক্রুদ্ধ নাগরিকগণ রাজাকে সন্দেহ করিয়া মারিয়া ফেলিবার ইচ্ছাও প্রকাশ করিয়াছিল। সাধারণতঃ প্রজারা নিঃসহায়ভাবে রাজার অত্যাচার সহ করিত। প্রাচীন বঙ্গসাহিত্যে ইহার দৃষ্টান্তের অভাব নাই, তথাপি আমরা কয়েকটি পালাগানে প্রজাদের কতকটা তেজ ও সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা দেখিতে পাইতেছি। এই পালাটিতে প্রজাদের ছবি কতকটা স্বতন্ত্র রকমের।

 বীরনারায়ণের সঙ্গে সোণার বনবাস স্বর্গের সুষমা দেখাইতেছে। নানাবিধ বিপদ্ ও দুর্ঘটনার মধ্যে এই সুখের আভাসটুকু বিদ্যুতের মতই চমকপ্রদ এবং সুন্দর।

 খণ্ডিত অবস্থায় আমরা পালাটির ৫৫৭ ছত্র পাইতেছি। আমরা উহাকে দশটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত করিয়াছি।

শ্রী দীনেশচন্দ্র সেন