বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহীপাল
৫৩৩

‘মহীপাল’ নামের স্মৃতি বহন করিতেছে। তাঁহার আদেশে খাত রঙ্গপুরের বিশাল মহীপাল-দীঘিকা এখনও বর্ত্তমান। এত বড় দীঘি সমস্ত বাঙ্গালা দেশে আর একটি আছে কিনা সন্দেহ। দীঘির চারিপাড় পদব্রজে প্রদক্ষিণ করিতেই এক ঘণ্টার বেশী সময় লাগে।

 মহীপালের গানগুলি রচিত হইবার বহু শতাব্দী পরেও বিশেষ জনপ্রিয় ছিল। বৃন্দাবন দাস ১৫৭২ খৃষ্টাব্দে রচিত চৈতন্য-ভাগবতে ইহার উল্লেখ করিয়াছেন। ‘ধান ভাঙ্গতে মহীপালের গীত’ এই প্রবাদটির ভিতরও এই গানটির প্রতি সাধারণের অনুরাগের আভাস পাওয়া যাইতেছে।

 মহীপাল নামে পালবংশে আরও একজন রাজা ১০৭০ খৃষ্টাব্দে রাজত্ব করেন। তিন দ্বিতীয় মহীপাল। তাঁহার অত্যাচার-অনাচারেই পালবংশের পতন হয় এবং ভীম নামে একজন কৈবর্ত্ত কিছু দিনের জন্য পালরাজাদের সিংহাসনচ্যুত করিয়া বাঙ্গালীর সর্ব্বেসর্ব্বা হ’ন। পালরাজাদেরই কয়েকটি তাম্রশাসনে এই দ্বিতীয় মহীপালের উৎপীড়ন-কাহিনী ক্ষোদিত আছে। আমাদের ছোট পালাটির গায়ক কি এই দ্বিতীয় মহীপাল? কিন্তু এই পালাতে মহীপাল দীঘিটি যাঁহার দ্বারা খাত হইয়াছে বলিয়া উল্লিখিত তিনি প্রথম মহীপাল (১০২৬ খৃষ্টাব্দ)।

 বড়লোকদের জীবনেও কখন কখন নৈতিক দৌর্ব্বল্য ও অন্যায়ের পরিচয় পাওয়া যায়। ইতিহাস সাধারণতঃ সেগুলি সম্বন্ধে নীরব থাকিয়া তাঁহাদের কীর্ত্তিগুলিকেই বড় করিয়া দেখে। শুধু দেশের কিংবদন্তী ও পালাগানগুলিতেই সেগুলি কখনও একটু অতিরঞ্জিতভাবে, কখনও বা যথাযথ-ভাবে বর্ণিত হইয়া থাকে। এই পালাটির বর্ণনা একেবারে অবিশ্বাস না করিলে বলিতে হইবে প্রথম মহীপালের জীবনের ইতিহাস-পরিত্যক্ত কোন অংশ। ইহাতে স্থান পাইয়াছে।

 মহীপাল নামের সহিত সংশ্লিষ্ট আরও একটি পালা আমরা পাইয়াছি। কিন্তু সে পালার বিষয় তাঁহার পুত্ত্রের প্রেমকাহিনী। তাঁহার পুত্ত্রের নাম পর্যন্ত তাহাতে দেওয়া নাই। মহীপালের পুত্ত্র বলিয়া উল্লেখ আছে মাত্র। মৌলভী জসীমুদিন কর্ত্তৃক সংগৃহীত এ পালাটির কাব্য-হিসাবে কোন মূল্য নাই।