বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহীপাল
৫৩৫

 এই ২৬ লাইনের পালাটিতে মহীপালের চরিত্রের যে দিক্‌টি উদঘাটিত হইয়াছে, পালাগানের স্বাভাবিক অত্যুক্তির কথা স্মরণ করিয়াও বোধ হয় সে দিক্‌টির কথা একেবারে অবিশ্বাস করা যায় না। বড়লোকের জীবনে এমন ছোটখাট দুর্ব্বলতা থাকা অস্বাভাবিক নহে। সাধারণ লোকে সুবিধা পাইলে এই দুর্ব্বলতাগুলিকে আলোকে আনিয়া নাড়াচাড়া করিতে ভালবাসে।

 এই ক্ষুদ্র পালাটির ছন্দে পয়ারেরই এক ভাঙ্গা বিকৃত রূপ দেখা যাইতেছে। ইহার অনেক জায়গায় মিল নাই। পালাটির কয়েকটি অপ্রচলিত প্রাচীন শব্দ দেখিয়া বোঝা যায় পালাটি বহুদিনের, তবে মুসলমানী আমলে ইহা যে কতকটা রূপান্তরিত হইয়াছে ‘বাপজান’ ‘গোলাম’ ‘নফর’ ‘বাঁদী’ প্রভৃতি শব্দ তাহার সাক্ষ্য দিতেছে।

 ছোট হইলেও পালাটির ভিতর লৌকিক কাহিনী ও পালাগানের অকৃত্রিম সুরটি বর্ত্তমান। যে ধূয়ার দ্বারা গ্রাম্য গানগুলি এমন করুণ ও মধুর হইয়া উঠে এই ২৬ লাইনের ভিতর আট বার সেইরূপ ধূয়া পাওয়া যায়।

 প্রথম ছত্রের ‘বাসর’ কথাটি এবং পিতামাতার আদেশের বিরুদ্ধে নায়িকার স্বেচ্ছাচারিতার বিবরণ হইতে বােঝা যায় রাজার ফাঁদে ইচ্ছা করিয়া ধরা পড়িবার গোপন-বাসনা নায়িকার মনে মনে ছিল। দূতের কথা হইতেও রাজা যে এই মেয়েটির জন্য অনেক দুঃখভোগ করিয়াছিলেন তাহার আভাস পাওয়া যা। রাজা ও নীলার নামে গোড়া হইতে একটা অপবাদ ছিল; ইহাও নীলার মাতাপিতার বারবার দীঘিতে যাইতে নিষেধ করা হইতে বোঝা যায়। এই অবস্থায় যে পাখী নিজে হইতে ফাঁদে ধরা পড়িতে উৎসুক, তাহাকে বন্দী করায় রাজার বোধ হয় বিশেষ কোন দোষ স্বীকার করা যায় না।

শ্রী দীনেশচন্দ্র সেন