লৌকিক সংস্কারের জয় বর্ণিত হয় নাই। সর্ব্বত্রই প্রেমের জয়। এই প্রেম ইন্দ্রিয় লালসার সামগ্রী নহে। ইহা তপস্বীর তপস্যা ও সাধকের সাধনা। বেহুলা যে হিসাবে সতী, সে হিসাবে হয়ত বাতাসী অসতী, কিন্তু তথাপি ইহাদের উভয়ই এক পঙ্ক্তিতে স্থান পাইবার যোগ্য বলিয়া আমাদের মনে হয়। আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে শারীরিক মিলনটার উপরও কবিরা কোনই জোর দেন নাই। “আঁধাবন্ধু”র পালায়ও আমরা তাহাই দেখি। এই সকল প্রেম-কাহিনীতে আত্মার পরিপূর্ণ ঐশ্বর্য্য দৃষ্ট হয়। একনিষ্ঠ প্রেম শরীর-নিরপেক্ষ, এই সাহসিক বর্ণনা এ ভাবে পৃথিবীর আর কোন কবি দিয়াছেন কি না জানি না। সদ্যোবিকশিত পদ্ম যেরূপ বৃন্তে ভর করিয়া পঙ্ক ও সলিল উভয় হইতেই অনেক উৰ্দ্ধে উঠে—এই একনিষ্ঠ প্রেম সেইরূপ জাগতিক অপরাপর সমস্ত কথার উৰ্দ্ধে উঠিয়াছে। অথচ পল্লীকবি একেবারেই প্রচারকের আসন গ্রহণ করেন নাই। তাঁহার ভাবগুলি স্বতঃ উচ্ছ্বসিত।
পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৪৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পীর বাতাসী
৫৪১
শ্রী দীনেশচন্দ্র সেন