পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৫৮
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

জালে আবদ্ধ হইয়া মৃত্যু হইতে উদ্ধার পান। ইহার পরে এক ধনবান্ সাধু জেলের নিকট হইতে তাহাকে উদ্ধার করেন। রাজকুমারীর ইচ্ছানুসারে কোন্ রাজপুত্ত্র একদা হরিণ হইয়াছিলেন এই সংবাদ জানিবার জন্য সাধু চৌদ্দ ডিঙা সাজাইয়া দেশদেশান্তর পর্য্যটন করিতে রওনা হন। অতল সমুদ্রে চৌদ্দ ডিঙা ঝড়ে পড়িয়া ডুবিয়া যায়। পালা এইখানেই সাঙ্গ হইয়াছে। আমার মনে হয় পালাটি খুব দীর্ঘ ছিল। চন্দ্রকুমারবাবু ইহার অধিক আর সংগ্রহ করিতে পারেন নাই। কতকটা রূপকথার মত হইলেও এই গানটি পল্লীরসমাধুর্য্যে ভরপুর। জলে ডুবিতে ডুবিতে রাজকন্যা তাঁহার পিতা-বিমাতার উদেশে যে সকল কথা বলিয়াছিলেন তাহা বড়ই করুণ। রাজকুমার দুলাই-নির্ম্মিত উদ্যান বাটিকায় যে সকল ফুলের বর্ণনা আছে তাহা আমাদের চোখে বাঙ্গালার পল্লীমহিমা উদঘাটিত করিয়া দেখায়। সর্ব্বত্রই একটা করুণরসের প্রবাহ পাওয়া যায় এবং এই খণ্ডিত গানের মাধুর্য্য আমাদের চিত্ত আকর্ষণ করে। চৌদ্দ ডিঙা জলে ডুবিবার পর পাঠকের মনে কবি যে কৌতূহল জাগ্রৎ করিয়া দিয়াছিলেন তাহা পূর্ণ হয় নাই। কিন্তু জিরালনীর চরিত্র যে আদ্যন্ত একনিষ্ঠ, প্রেমসঙ্কল্পিত, তাহা পালাটির যতটুকু পাইয়াছি তাহাতেই আমরা বুঝিয়াছি। কালে যদি কেহ এই পালাটি সম্পূর্ণ করিতে পারেন তবে আমরা সুখী হইব। এই গানটির ভাষা ও পয়ার ছন্দের সুগঠিত অবয়ব দেখিয়া আমাদের মনে হয় ইহা অষ্টাদশ শতাব্দীর রচনা। অপেক্ষাকৃত আধুনিক হইলেও ইহাতে প্রাচীন যুগের সংস্কারের প্রভাব বহুল পরিমাণে আছে। যে আকারে আমরা ইহা পাইতেছি তাহা অপেক্ষাকৃত আধুনিক, এই পর্য্যন্ত আমরা বলিতে পারি। এই খণ্ডিত পালাটিতে ৫১০ ছত্র আছে। আমরা ইহা ১৩ অধ্যায়ে ভাগ করিয়াছি।

শ্রীদীনেশচন্দ্র সেন