পাতা:প্রবাসী ভাদ্র ১৩৪৪ সংখ্যা ৫.pdf/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

で忙エ বিবিধ প্রসঙ্গ—বঙ্গের বজেট "S ○ বঙ্গের বজেট বঙ্গের বজেট প্রতি বৎসর আলোচনা করিবার ইচ্ছা আমাদের বহু বৎসর হইতে আছে, এবং সেই ইচ্ছা থাকায় বজেট সম্বন্ধে প্রায় প্রতি বৎসরই দু-চার কথা বলিয়া থাকি । কিন্তু বজেট আলোচনা ভাল করিয়া করিবার উপায় আমাদের নাই। যে সরকারী মুদ্রিত ফিন্যান্সাল ষ্টেটমেন্টটিতে সমুদয় আয়ব্যয় বিস্তারিত দেওয়া থাকে, তাই আমরা পাই না, এবারেও পাই নাই। অর্থসচিবের উদ্বিবন্ধক বক্তৃতা এবং খবরের কাগজে ব্যবস্থাপক সদস্যদের কোন কোন মন্তব্যের কোন কোন অংশ অবলম্বন করিয়া দু-চার কথা লিখিব । ঈষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর আমল হইতে বাংলা দেশে যত রাজস্ব সংগৃহীত হইয়া আসিতেছে, তাহার সম্পূর্ণ স্ববিধ বাংলা দেশ কখনও পায় নাই। ঐ রাজস্বের কোটি কোটি টাকা ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তার করিবার জন্য ব্যয়িত হইয়াছে, এবং বঙ্গের বাহিরের কোন কোন প্রদেশের ঘাটতি পুৱাইতেও বঙ্গের বিস্তর টাকা খরচ করা হইয়াছে। অপেক্ষাকৃত আধুনিক সময়ে যখন ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে সংগৃহীত নানা প্রকারের রাজস্বকে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক এই দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়, তখন ভাগটা এমন ভাবে করা হয়, যে, বঙ্গে সংগৃহীত রাজস্বের খুব বেশী অংশ কেন্দ্রীয় অর্থাং ভারত-গবন্মেটি গ্রহণ করেন। লর্ড মেষ্টন প্রধানতঃ এই বিভাজনের কৰ্ত্ত বলিয়া ইহাকে মেষ্টনী বন্দোবস্ত বলা হয়। অন্য যে-কোন প্রদেশের চেয়ে বঙ্গে অধিক রাজস্ব সংগৃহীত হইলেও, এই বন্দোবস্তের ফলে, বাংলা দেশের সরকারী ব্যয়ের জন্য বাংলা-গবন্মেন্টের হাতে যুক্তপ্রদেশ, মাম্ৰাজ, পঞ্জাব ও বোম্বাই অপেক্ষা কম টাকা থাকাটা যেন একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হইয়া দাড়ায়। তাহার পর স্থির হয়, ১৯৩৫ সালের ভারতশাসন আইন জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা-গবন্মেন্টের হাতে আগেকার চেয়ে কিছু বেণী টাকা থাকিতে দেওয়া হইবে। এই যে বেশী টাকা ইহ ভারতবর্ষের অন্ত কোন প্রদেশে সংগৃহীত রাজস্বের অংশ নহে। ইহা বাংলা দেশে সংগৃহীত রাজস্বেরই অংশ। ১৯৩৫ সালের ভারতশাসন আইন জারি হইবার পূৰ্ব্বে বাংলা দেশকে তাহার রাজস্ব হইতে যতটা বঞ্চিত করা হইত, এখন ততটা বঞ্চিত করা হইবে না, প্রভেদ এই মাত্র। কিন্তু বঞ্চিত এখনও করা হইতেছে। অবস্থাটা এইরূপ, যে, যদি বাংলা দেশ একটা পৃথক স্বাধীন দেশ হইত, তাহা হইলে তাহার রাজস্ব সম্পূর্ণ তাহার হাতেই থাকিত। কিন্তু উহা ভারতবর্ষের অংশ বলিয়া এবং ভারতবর্ষ পরাধীন বলিয়, বঙ্গের গবন্মেণ্টকে গরীব সাজান হইয়াছে ও গরীব সাজিতে হইয়াছে। নতুবা বস্তুতঃ বাংলা দেশ আর্থিক বিষয়ে পরমুখাপেক্ষী, অন্য কোন প্রদেশ বা দেশের মুখাপেক্ষী, নহে। বঙ্গের তহবিলে যে এবার বেশী টাকা আসিয়াছে, যাহার বলে অর্থসচিব ঐযুক্ত নলিনীরঞ্জন সরকার কিছু উদ্বৃত্ত দেখাইতে পারিয়াছেন,—এই বেশী অর্থাগমের প্রশংসা তাহার প্রাপ্য নহে, তাহার বেরাদর মন্ত্রীদের বা লাটসাহেবেরও প্রাপ্য নহে। এই প্রশংসা যেমন বঙ্গের মন্ত্রিমণ্ডলের প্রাপ্য নহে, তেমনই আগেকার আমলের মন্ত্রীদের বাৰ্ষিক ৬৪০০০ টাকার চেয়ে তাহারা যে কম বেতন লইতেছেন তাহার প্রশংসাও তাহারা দাবী করিতে পারেন না। কারণ নুতন ব্যবস্থাপক সভা ও ব্যবস্থা-পরিষদের নানাবিধ ব্যয় আগেকার আমলের ব্যয়ের চেয়ে বার্ষিক এক লক্ষ ষাট হাজার টাকা বেশী হইয়াছে। তাহার পর বোধ হয় পালেমেন্টারী সেক্রেটারী প্রভৃতির ব্যয় আছে । ১১ জন মন্ত্রী প্রত্যেকে ৬৪০০ ০<চাহিলে টাকা কোথা হইতে আসিত ? তাহাদিগকে অগত্যা কম টাকা লইতে হইয়াছে। কিন্তু এই কমও কংগ্রেসী মন্ত্রীদের মাসিক ৫০০ বেতনের তুলনায় খুব বেনী। কংগ্রেসী মন্ত্রীদের বাড়ী ও গাড়ীর ভাতা ধরিলেও তাহারা মোট যত টাকা গ্রহণ করেন, বঙ্গের মন্ত্রীদের বেতনের তুলনায় তাহাও অনেক কম। বঙ্গের মন্ত্রীদের মধ্যে কাহারও কাহারও আর্থিক অবস্থা এরূপ যে তাহারা ৫০০২ বেতনে, এমন কি বিনা বেতনেও, কাজ করিতে পারিতেন। কিন্তু অন্যেরা তাহাতে রাজী হইতেন না। এবং কেহ কম বেতন লইবার জেদ করিলে জন্যেরা বলিতেন, “ভায়, তুমি অন্ত পথ দেখ ; তোমার সঙ্গে আমাদের পোষাবে না।” এই কারণে বঙ্গের কোন কোন মন্ত্রী কম বেতন লইয়া যে বাহবা পাইতে পারিতেন, তাহ পাইতেছেন না।