পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

• ১ম সংখ্যা সময়ের কথা উল্লেখ করিয়া ঝুমকৃষ্ণ যাহা বলিতেন, তাহাতে বুঝা যায়, যে, সারদামণি দেবীও যদি সম্পূর্ণ কামনাশূন্য না হইতেন তাহা হইলে রামকৃষ্ণের “দেহবুদ্ধি আসিত কি না, কে বলিতে পারে?” পৃথিবীর মান কাৰ্য্যক্ষেত্রে অনেক প্রসিদ্ধ লোকদের পত্নীদিগের সম্বন্ধে কথিত আছে, যে, তাহারা উহঁাদের সহায় হইয়া উষ্ঠাদের জীবনপথ সৰ্ব্ববিধ সংসারিক বাধাবিঘ্ন হইতে মুক্ত ন। রাখিলে উষ্ঠার এত মহৎ কাজ করিতে পারিতেন না। মুনেক মহংলোকের পত্নী কেবল যে পতিকে সংসারের খুটিনাট ও নানা ঝঞ্চাট হইতে নিষ্কৃতি দেন, তা নয়, অবসাদ নৈরাপ্ত ও বলহীনতার সময় তাহার হৃদয়ে শক্তি ও উৎসাহেরও সঞ্চার করিয়া থাকেন। আমাদের সমসাময়িক ইতিহাসে রামকৃষ্ণেয় কুম্পষ্ট মূর্তির অন্তরালে সারদামণি দেবীর মূৰ্ত্তি এখনও ছায়ার ন্যায় প্রতীত হইলেও, তিনি সাত্ত্বিক প্রকৃতির নারী ন হইলে রামকৃষ্ণও রামকৃষ্ণ হইতে পারিতেন কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ করিবার কারণ আছে। বংসরাধিক কাল অতীত হইলেও যখন রামকৃষ্ণের মনে একক্ষণের জন্যও দেহবুদ্ধির উদয় হইল না, এবং পখন তিনি সারদামণি দেবীকে কখন জগন্মাতার অংশভাবে এবং কখন সচ্চিদানন্দস্বরূপ আত্মা বা ব্ৰহ্মভাবে দৃষ্টি করা ভিন্ন অপর কোন ভাবে দেখিতে ও ভাবিতে সমর্থ হইলেন ন, তখন রামকৃষ্ণ আপনাকে পরীক্ষেত্তীর্ণ ভাবিয়া ষোড়শী পূজার আয়োজন করিলেন, এবং সারদামণিদেবীকে অভিষেকুপূর্বক পূজা করিলেন। পূজাকালের শেষ দিকে সারদামণি বাহ্যজ্ঞানরহিতা ও সমাধিস্থ হইয়াছিলেন বলিয়া লিখিত আছে । ইহার পরওঁ তিনি অহঙ্কত হন নাই, তাহার মাথ৷ বিগড়াইয়া যায় নাই। ষোড়শীপূজার পর তিনি প্রায় পাচ মাস দক্ষিণেশ্বরে ছিলেন। তিনি ঐ সময় পূর্বের ন্যায় রন্ধনাদি দ্বারা রামকৃষ্ণ ও র্তাহার জননীর এবং অতিথি-অভ্যাগতের সেবা, করিতেন এবং দিনের বেল নহবৎ-ঘরে থাকিয়া ” রাত্রে স্বামীর শয্যাপার্শ্বে থাকিতেন। সকল প্রকারের খাদ্য ও রন্ধন রামকৃষ্ণের সন্থ হইত না বলিয়া অনেক সময়েই সারদামণি দেবী ۹ سرا র্তাহার জন্য আলাদা রান্না করিতে হইত। সেই সময় দিবারাত্র রামকৃষ্ণের “ভাব-সমাধির বিরাম ছিল না" এবং কখন কখন "মৃতের লক্ষণসকল তাহার দেহে প্রকাশিত হইত। " কখন রামকৃষ্ণের সমাধি হইবে, এই আশঙ্কায় সারদামণির রাত্রিকালে নিদ্র হইত না । এই কারণে তাঙ্গার নিদ্রার ব্যাঘাত হইতেছে জানিয়া রামকৃষ্ণ নহবংঘরে নিজের মাতার নিকট তাহার শয়নের বন্দোবস্ত করিয়া দিয়াছিলেন । এইরূপে একবংসর চারিমাস দক্ষিণেশ্বরে থাকিয়া সারদামণি দেবী সম্ভবতঃ ১২৮০ সালের কাৰ্ত্তিক মাসে কামারপুকুরে ফিরিয়া আসেন। তখনকার কথা স্মরণ করিয়া সারদামণি দেবী উত্তরকালে কখন কখন স্ত্রী-ভক্তদিগকে বলিতেন, “সে যে কি অপূৰ্ব্ব দিব্যভাবে থাকৃতেন, তা ব’লে বোঝাবার নয় ! কথন ভাবের ঘোরে কত কি কথা, কথন হাঁসি, কখন কান্না, কথন একেবারে সমাধিতে স্থির হয়ে যাওয়- এই রকম সমস্ত রাত ! সে কি এক আবির্ভাব আবেশ, দেখে ভয়ে আমার সর্বশরীর কাপড়, আর ভাব তুম কখন রাতট পোহবে। ভাবসমাধির কথা তখন স্তে কিছু বুঝি না ;-একদিন তার আর সমাধি ভাঙ্গে না দেখে ভরে কেঁদেকেটে হৃদয়কে ডেকে পাঠালুম । সে এসে কানে নাম শুনাতে শুনাতে তবে কতক্ষণ পরে স্তার চৈতন্য হয় । তার পর ঐক্কপে ভয়ে কষ্ট পাই দেপে তিনি নিজে শিখিয়ে দিলেন-এই রকম ভাব দেখলে এই নাম শুনালে, এই রকম ভাব দেখলে এই বীজ শুনাবে। তখন আর তপ্ত ভয় হত না, ঐ সব গুনালেই উীর আবার স্থস হত।" সারদামণি দেবী বলিতেন— এইরূপে প্রদীপে শল্তেটি কিভাবে রাখিতে হষ্টবে, বাড়ীর প্রত্যেকে কে কেমন লোক ও কাহার সঙ্গে কিরূপ ব্যবহার করিতে হইবে, অপরের যাড়ী যাইয় কিরূপ ব্যবহার করিতে হইযে, প্রভৃতি সংসারের সকল কপী হইতে ভজন কীৰ্ত্তন ধ্যান সমাধি ও ব্রহ্মজ্ঞানের কথা পয্যস্ত সকল বিষয় ঠাকুর ঠাহাকে শিক্ষা দিয়াছেন। কলিকাতা প্রভৃতি স্থান হইতে অনেক ভদ্রমহিলা দক্ষিণেশ্বরে রামকৃষ্ণের দর্শনে আসিয়া নহবংখানায় সমস্ত দিন থাকিতেন । রামকৃষ্ণ ও তাহার জননীর জন্য রন্ধন ব্যতীত ইহঁাদের জন্য রান্না ও সারদামণি করিতেন, এবং কখন কখন বিধবাদের জন্য গোবর গঙ্গাজল দিয়া তিনবার উতুন পাড়িয়া আবার রান্না চড়াইতে হইত। একবার পাণিহাটির মঙ্গোৎসব দেখিতে যাইবার সময় রামকৃষ্ণ জনৈক গা-ভক্তের দ্বারা সারদামণি দেবীকে জিজ্ঞাসা করিয়া পাঠাইলেন, তিনি যাইবেন কি ন – “তোমরা ত যাইতেছ, যদি গুর ইচ্ছা হয় ত চলুক।”