বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাবনায় নমঃশূদ্র-সমস্ত প্রায় পনর বৎসর ধরিয়া নমঃপূদ্র ও তথাকথিত অন্যান্য নিম্নশ্রেণীর সেবায় নিযুক্ত আছি । ১৯১০ খ্ৰীষ্টাব্দে ঢাকায় পূৰ্ব্ববঙ্গ ও আসামের “অবনত জাতির উন্নতি-বিধায়িনীসমিতি” প্রতিষ্ঠিত করি । তৎপরে তাহার কার্য্যক্ষেত্র বিস্তৃত হইতে থাকিলে পশ্চিম-বঙ্গের সমিতির সহিত তাহু মিলিত হয়। বৰ্ত্তমান সম্পাদক শ্রদ্ধাস্পদ রাজমোহন দাস রায় সাহেব মহাশয়ের অদ্ভুত কৰ্ম্মশীলতাগুণে এই সমিতির কাগ্য এখন বিশেষ প্রসারিত হইয়াছে । হাই স্কুল, মাইনর স্কুল, পাঠশালা, নৈশ-বিদ্যালয়- এই চারি শ্রেণীর চারি শতাধিক বালক ও বালিকা-বিদ্যালয় এই সমিতির সাহায্যে পরিচালিত হইতেছে । কলিকাতা ৪৯২ কর্ণওয়ালিস ষ্ট্রীটে এই সমিতির বর্তমান প্রধান কাৰ্য্যালয় অবস্থিত। শুধু শিক্ষাবিস্তারই এই সমিতির কাৰ্য্য নহে ; তথাকথিত নিম্নশ্রেণীগুলির সর্বপ্রকার উন্নতি-সাধন ইঙ্গার লক্ষ্য । নমঃশষ্ট্র বন্ধুগণ আমাকে ভালবাসেন এবং তাঙ্গাদের আপনার লোক বলিয়া মনে করেন । আমি এখন কলিকাতায় অবস্থিতি করিতেছি । বয়োবুদ্ধি ও শারীরিক অকৰ্ম্মণ্যতাবশতঃ গ্রামে গ্রামে খুরিয়া পূর্বের ন্যায় তাহাদের সেবা করিলে পারি না । কিন্তু বঙ্গদেশের নানাস্থানের কলিকাতা-প্রবাসী অনেক নমঃশূদ্র যুবক আমাদের কলিকাতাস্থ গৃহে সৰ্ব্বদা যাতায়াত করেন ও নমঃশূদ্র জাতির উন্নতি সম্বন্ধে আলোচনা করেন । তাহাদের সহিত মিলিত হইয় তাহাদের জাতির উন্নতির জন্য সাধ্যাকুসারে চেষ্টা করি । যশোহর জিলার কলিকাতা-প্রবাসী নমঃশূদ্রগণ কলিকাতায় একটি ক্ষুদ্র সমিতি স্থাপন করিয়াছেন । তাহার সভাপতি মহাশয়েব নিকট আমি জানিতে পারি * যে, সিরাজগঞ্জের অন্তর্গত কোন কোন স্থানের প্রায় ছুই হাজার নমঃশূদ্র খ্ৰীষ্টধৰ্ম্ম অবলম্বন করিতে প্রস্তুত হইয়াছেন । সিরাজগঞ্জ কংগ্রেস কমিটির ও হিন্দুসভার সম্পাদক মহাশয়গণের সহিত তাহার এই সম্বন্ধে ধে পত্র ব্যবহার হইয়াছিল, তিনি আমাকে তাহ দেখাইলে শাবীরিক অসুস্থতা-সত্ত্বেও সেখানে যাইবার জন্য আমার মন ব্যাকুল হইয়া উঠে । আমি ব্রাহ্ম ; সরল ধৰ্ম্ম-বিশ্বাসের বশবৰ্ত্তী হইয়া কাহারও ধৰ্ম্মান্তর-গ্ৰহণ আমি নিন্দনীয় মনে করি না । বিশেষতঃ খ্ৰীষ্টধৰ্ম্মে জাতিভেদ-প্রথা বিদ্যমান না থাকায় এই ধৰ্ম্ম গ্রহণ করিলে বর্তমান জড়তাগ্রস্ত হিন্দুসমাঙ্গে বাস করিয়া নমঃশূদ্রগণ সনাবীপে সে হীনত। সহ করিতেছেন তাহা হইতে তাহার। মুক্তিলাভ কৰিবেন, আমি এরূপ বিশ্বাস করি। কিন্তু নমঃশূদ্রগণকে আমি ভাল করিয়াই জানি, দুষ্ট হাজার অশিক্ষিত নমঃশূদ্র সরল ধৰ্ম্মবিশ্বাসের বশবর্তী হইয়া খ্ৰীষ্টধৰ্ম্ম অবলম্বন করিবে, এই কথা বিশ্বাস করিতে আমার প্রবৃত্তি জন্মে নাই । হিন্দুসমাজের উৎপীড়ন এবং খ্ৰীষ্টধৰ্ম্ম প্রচাবকদিগের প্রচারপ্রচেষ্টাক্ট এই চঞ্চলতার কারণ বলিয়! আমার মনে হইল । সিরাজগঞ্চের পত্রগুলিতেও এই ভালই ব্যক্ত হইয়াছিল। নমঃশদ্রদিগকে খ্ৰীষ্টধৰ্ম্ম গ্ৰহণ করিতে দেপিলে একটি কারণে আমার চিত্ত নিতান্ত ব্যথিত হয় । আমি দেখিয়াছি, নিম্নশ্রেণীর চিন্তাবিহীন লোকের খ্ৰীষ্টধৰ্ম্ম গ্রহণ করিলে তাহাদের মধ্যে একটি বিজাতীয় ভাব পুষ্টি লাভ করে । দেশের জনসাধারণ হইতে তাহারা আপনদিগকে পৃথক মনে করিতে আরম্ভ করে । ভারতের মুসলমানগণ যেমন এদেশের অধিবাসী হইয়াও অনেকেই আপনাদিগকে মক্কা, মদিন ও তুরস্কের সহিত অধিকতর যুক্ত মনে করে এইসকল খ্ৰীষ্টিয়ানও তেমনি স্বদেশবাসী অপেক্ষা বিদেশী স্বধৰ্ম্মাবলম্বীদিগকে বেশী আপনার মনে করে। আমি সরল মনে বিশ্বাস করি, তাহারা খ্ৰীষ্টিয়ান হইয়া যাহা পাইতে আকাজক্ষ করে হিন্দুধর্শ্বে থাকিয়াই তাহা পাইতে পারে । * আমি কাহার ৪ সঙ্গে তর্ক করিতে ইচ্চা করি না, কিন্তু বৈদাদি শাস্ত্র আলোচনা করিয়া ২২৩