পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩২ পুনঃ পুন: উত্যক্ত হইয়া বিমানবিহারী ভিতরে ভিতরে ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিতেছিল। এবার সে সহসা সমস্ত সহিষ্ণুত হারাইয়া হস্তস্থিত দেশলাইয়ের কাঠিটা জালিয়া স্থতার গুচ্ছ-গুলায় আগুন ধরাইয়া দিয়া বলিল, "তবে দেখে। পোড়ে কি না ।" মুহূর্বের মধ্যে স্বত্তাটা জলিয়া উঠিল এবং পর মুহূৰ্বেই কগ-মধ্যে মাধবী দ্রুতপদে প্রবেশ করিয়া আৰ্ত্ত-স্বরে বলিতে লাগিল, “ছি, ছি, কি কবুলেন । কেন এমন কাজ কবুলেন ? মুমিত্রার এত কষ্ট-করে” কাটা প্রথম স্থতোটা কিছুতেই ন পুড়িয়ে ছাড়লেন না ?” কাজটা করিয়া ফেলিয়াই বিমানবিংfরা বিস্ময়ে ও ক্ষোভে বিমূঢ় হইয়া গিয়াছিল, তাঙ্গর উপর মাধবীর দ্বারা এরূপে তিরস্কৃত হইয়া সে কি করিবে বা বলিবে ভাবিয়া না পাইয়া ব্যস্ত হইয় ফু দিয়া আগুনটা নিভাইয়। দিল । আগুন নিভিল বটে, কিন্তু সেই অদ্ধবিদগ্ধ পদার্থ হইতে উখিত ধূমে এবং দুর্গন্ধে কঙ্কট। দেখিতে দেখিতে ভরিয়া গেল ! কেমন করিয়া কোথা দিয়া সহসা কি একটা কুংসিত ঘটনা ঘটিয়া গেল ! ক্ষুব্ধসস্বস্ত নেত্ৰে বিমান-বিহারী সেই কুণ্ডলীভুত ধূমের প্রতি চাহিয়া রঙ্গিল ; তাখার মনে হইল বেন এক-একটি স্থতার পাক হইতে শত শত ধূমপাঞ্চ নির্গত হইয় তাহার কণ্ঠরোধ করিবার উপক্রম করিতেছে! আতঙ্কে তাহার মুখ দিয়া বাক্য নিঃসরিত হুইতেছিল না, দুঃখে ও ঘূণায় তাহার শ্বাস বন্ধ হইয়। আসিতেছিল ! “এ আরও খারাপ করলে বিমান । একেবারে ছাই হয়ে যেত, সে ভালে ছিল ; ধোয়া করে’ তুমি ঘরের হাওয়াট পয্যন্ত বিগৃড়ে দিলে! তোমার বারুদেরই আজ জন্ম হোক!” বলিয়৷ বিমানবিহারীর শিথিল মুষ্টি হইতে দেশলাইয়ের বাক্সট লইয়া সুরেশ্বর কাঠি জালিয়া পুনরায় সেই অৰ্দ্ধ-দগ্ধ স্থতার গুচ্ছ ভাল করিয়া ধরাইয়। দিল । এবার চতুৰ্দ্দিক হইতে আগুনট বেশ ভাল করিয়া জলিতে লাগিল। বিমান ও মাধবী কোন কথা না বলিয়৷ সেই লেলিহান অগ্নি-শিখার দিকে নিঃশব্দে চাহিয়া রহিল। প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১মখণ্ড “তুমি যাকে পুড়িয়ে মেরেছিলে, আমি তার সৎকার কবুলাম বিমান,” বলিয়া সুরেশ্বর মৃদু-মৃদু হাসিতে লাগিল । তদুত্তরে বিমানবিহারী মুরেশ্বরকে কোনওঁ কথা ম৷ বলিয়া নিমেষেরে জন্য মাধবীর প্রতি দৃষ্টিপাত করিল। কিন্তু দৃষ্টিপাত করিয়াই মাধবীর মুখের অবস্থা নিরীক্ষণ করিয়! সে চমকিত হইয়া গেল ! শ্মশান-ক্ষেত্রে প্রিয় আত্মায়ের দেহ পুড়িতে দেখিয় লোকে ধেমন করিয়া তাকাইয়া থাকে, মাধব ঠিক তেমনি করিয়া সেই প্ৰজলিত স্থতার দিকে চাহিয়া ছিল । গভীর বেদনার আঘাতে তাহার মুখখান স্তব্ধ অসাড় ; দুঃখাৰ্ত্ত নেত্রতলে সঞ্চীয়মান অশ্রু ! সমস্ত স্থতাটা পুড়িয়া ভস্ম হইয় গেলে সুরেশ্বর বলিল, “খাকি স্বতাটারও এই ব্যবস্থা করবে নাকি বিমান ? তোমার দেশলাইয়ে কাঠি এখনও আছে, না ফুরিয়েছে ?" অপ্রসন্ন-দৃষ্টিতে স্থবেশ্বেরের দিকে চাহিয়। বিমান কহিল “সব জিনিসেরই একটা সাম। আছে মুরেশ্বর ! তোমার পরিহাসেরও একটা সাম। আছে বোধ হয় ?” সুরেশ্বর স্মিতমুখে বলিল, “ত ধর্দুি হয়, তা হ’লে অপর পক্ষের বারুদেরও একট। সামা থাক। সম্ভব।" এ-কথার আর , কোন ও উত্তর না দিয়া মাধবীর দিকে চাহিয়া বিমান বলিল, “দেখুন আপনার পক্ষে এতথানি ব্যথার কারণ হ’য়ে আমি বাস্তবিকই দুঃখিত হয়েছি । আপনি দয়া ক’রে আমাকে ক্ষম করুন!” মাধবী অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়া ঈষৎ বেগের সহিত বলিল, “না, না, আমার জন্যে দুঃখিত হবার আপনার কোন কারণ নেই । আপনি যে এতটা কষ্ট ক’রে কাটা এতখানি দেশের স্থতো আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দিলেন এইটেই আপনার একমাত্র দুঃখ হওয়া উচিত ছিল !" এ-কথায় অপ্রতিভ হইয়া বিমান বলিল, “আমি হয়ত কথাটা ভাল করে প্রকাশ করতে পারিনি। আপনার জন্ত দুঃখিত হওয়ার অর্থই তাই ।” তাহার পর একমুহূৰ্ত্ত অপেক্ষা করিয়া বলিল, “এর ক্ষতিপূরণস্বরূপ যেটুকু স্বতা আমি পুড়িয়েছি তার দামের চতুগুণ কি আটগুণ আমি দিতে প্রস্তুত আছি ।”