পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা] যুদ্ধঘোষণা করা হয় নাই। তবে গোপীনাথ সাহা এই আশা প্রকাশ করিয়া গিয়াছে বটে, যে, তাহার অসমাপ্ত কাজ যেন আর কেহ সমাপ্ত করে। ইহা একপ্রকার যুদ্ধঘোষণা বটে। জিজ্ঞাস্ত এই, যে, সিরাজগঞ্জ সন্মিলনী গোপীনাথ সাহার উক্ত উদ্দেশু, আশা ও পরোক্ষ যুদ্ধঘোষণার সমর্থন করেন কি না । প্রস্তাবটিতে গোপীনাথ সাহার কাৰ্য্যের ও আদর্শের, কার্য্যের ও উদ্দেস্তের, এবং কার্ধ্যের ও আত্মবলিদানের চুলচেরা পার্থক্য নির্দেশ করা হইয়াছে, এবং কাজটির সমর্থন না করিয়া আদশের, উদ্দেশ্যের ও আত্মবলিদানের প্রশংসা করা হইয়াছে। অতএব শেষোক্ত জিনিষগুলির বিচার আবশ্যক। উদ্দেশ্য ছিল মিঃ টেগার্টকে বধ করিয়া দেশ স্বাধীন করা। জাতীয় আত্মকর্তৃত্বলাভ-রূপ উদ্বেগু বা আদর্শকে যদি উপায়নির্বিশেষে সম্বৰ্দ্ধনা করা সন্মিলনীর অভিপ্রায় হইত, তাহা হইলে অন্ততঃ অশ্বিনীকুমার দত্তের আদর্শ, উদ্দেশ্য ও আত্মোৎসর্গের সম্বৰ্দ্ধনা সম্মিলনীতে হইত। কিন্তু তাহা হয় নাই। স্বতরাং ইহা পরিষ্কার বুঝা যাইতেছে, যে, যে উদ্দেশ্য, আদর্শ ও আত্মোৎসর্গ সন্মিলনীর দ্বারা সম্বৰ্দ্ধনার যোগ্য বিবেচিত হইয়াছে, তাহার মধ্যে খুন থাকা চাই, সরকারী ইউরোপীয় কৰ্ম্মচারীর খুন থাক চাই, এবং তাহার জন্য ফাসী যাওয়া চাই । অশ্বিনীকুমার দত্ত বা চারুচন্দ্র ঘোষ দেশে জাতীয় আত্মকর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করিয়া গিয়াছেন, সে উদ্দেশু ও আদর্শ তাহাদের ছিল ; তাহারাও আত্মোৎসর্গ করিয়াছিলেন; গবৰ্ণমেন্ট-কর্তৃক লাতি ও উৎপীড়িতও হইয়াছিলেন। কিন্তু তাহারা যে সম্বৰ্দ্ধনা পান নাই, গোপীনাথ তাহা পাইয়াছে। তাহার কারণ অন্বেষণ করিলে দেখ। যায়, যে, গোপীনাথ একজন সরকারী কৰ্ম্মচারীকে খুন করিয়া দেশকে স্বাধীন করিতে চাহিয়াছিল, এবং পরে ধৃত হইয়া প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হইয়াছিল ; অশ্বিনীকুমার বা চারুচন্দ্র কাহাকেও খুন করেন নাই বা করিতে চান নাই, স্বতরাং তজ্জন্য র্তাহাদের ফাসীও হয় নাই। সেই জন্য বলিতেছি, সিরাজগঞ্জ সন্মিলনী উপায়নির্বিশেষ শুধু দেশ-উদ্ধারের উদ্বেগু, আদর্শ, বা আত্মোৎসর্গেব বিবিধ প্রসঙ্গ—গোপীনাথ সাহার সম্বৰ্দ্ধন৷ 883 সম্বৰ্দ্ধনা করিয়াছিলেন, ইহা বলিলে সত্যের অপলাপ করা হয় ; সন্মিলনী বাস্তবিক দেশসেবার একটি বিশেষ উপায়, পস্থা বা অাদর্শকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়া তাহার সম্বর্ধনা করিয়াছিলেন, এবং সেই পথটি হিংসার পথ। প্রস্তাবটির গোড়ায় যে বলা হইয়াছে, যে,কংগ্রেসের অহিংস অসহযোগ নীতিতে বিশ্বাস পুনরুক্ত হইতেছে, তাহা আত্মরক্ষার জন্য অভিপ্রেত কথার ফাকি মাত্র। অহিংসার উপরই যদি সন্মিলনীর অধিকাংশ প্রতিনিধির বিশ্বাস থাকিবে, তাহ হইলে যাহাদের জীবনে দেশ-উদ্ধার, জাতীয় আত্মকর্তৃত্বলাভচেষ্টা ও আত্মাৎসর্গের আদর্শ অহিংস আচরণের ভিতর দিয়া বিকাশ ও প্রকাশ পাইয়াছিল, তাহাদিগের অপেক্ষা গোপীনাথের সম্বৰ্দ্ধনা কেন অধিক হইল, যাহার উদ্দেশ্ব,আদর্শ ও আত্মবলিদান হিংসার ভিতর দিয়া প্রকাশ পাইয়াছিল ? ইহাও এখানে বক্তব্য, যে, গোপীনাথের ফাসীকে ঠিক সেলফ স্তাক্রিফাইস্ বা আত্মবলিদান বলা যায় না ; কেন না, সে নিজেকে নিজে বলি দ্যায় নাই, তাহার পলায়নচেষ্টা বিফল করিয়া অল্পে তাহাকে বলি দিয়াছে। মুত বিপথগামী এই বালকের সমালোচনা করা সাতিশয় অপ্রীতিকর কাজ ; কিন্তু কৰ্ত্তব্যের অনুরোধে তাহা করিতে হইতেছে। যদি কেহ এরূপ বলেন, যে, অশ্বিনীবাবু প্রভৃতি সম্বন্ধেযে প্রস্তাব গৃহীত হইয়াছে, তাহা দ্বারাই তাহাদিগকে যথেষ্ট সম্মান দেখান হইয়াছে, তাহা হইলে আমরা জিজ্ঞাসা করি, ঐ প্রস্তাবে গোপীনাথ সাহার নামও গুজিয়া না-দেওয়ার একটা কারণ কি এই নয়, যে. তাহাকে স্বতন্ত্র-ও বিশেষ-রকম এবং উচ্চতর সম্মান দিবার প্রয়োজন অনুভূত হইয়াছিল ? আর কাহারও আত্মবলিদানের উল্লেখ ও সস্বৰ্দ্ধনা হয় নাই । আর কোন মৃতব্যক্তি কি আত্মোৎসর্গ করেন নাই ? গোপীনাথ সাহার চরিত্রে প্রশংসনীয় কিছু ছিল কি না, তাহার বিচার আমরা করিতেছি না । তাহা অবশ্যই ছিল, এবং আমরা বিশ্বাস করি, তাহার বলে সে ভ্রম বুঝিতে পারিয়া ক্ষমা পাইবে এবং তাহার কল্যাণ ও উন্নতি হইবে । মানুষের শক্তি সৎপথে চালিত ও সৎকার্ধ্যে নিয়োজিত হইলে তাঁহাই প্রশংসা ও অন্থকরণের