পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8brb~ প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ১ম খণ্ড অনেক সময়ে কবি বলেন যে, আমার মনের অন্ধকার গুহায় যে আনন্দ-ধ্বনি বাজে তাহাই আমাকে উপলক্ষ্য করিয়া প্রকাশিত হয়, তাহা আমার আনন্দের জন্য, আমার খুলীর জন্য, তাহা লইয়া বিশ্বের লোক অত মারামারি করে কেন ? যদি ঐ কবি কবি-শ্রেষ্ঠ কীটুসএর মত বলিতেন যে, নিশার গভীর অন্ধকারে যাহা লিখিব তাঙ্গ যদি স্বৰ্য্যালোকের সঙ্গে সঙ্গে পোড়াইয়া ফেলিতে হয় তবুও আমি লিখিব, তাহা হইলে বলিবার কিছু থাকিত না । কেননা কবিতা কীটুসের জীবন ছিল । কিন্তু সকলের তত নয়। সকলে ত শুধু নিজের আনন্দের জন্য আর্ট স্বল্প করেন না। বরঞ্চ সকলে পড়িয়া যাহাতে বেশ আনন্দ লাভ করে ও বিশ্বে র্তাহাদের যশ হয় তাহার জন্য পুস্তকাকারে প্রকাশিত করেন—কিছু অর্থোপার্জনও তাহার লক্ষ্য থাকে। র্তাহাদের যুগে বা র্তাহাদের জন্মভূমিতে যশ না হইলে বিপুল পৃথ্বী ও নিরবধি কালের দিকে আশাপূর্ণ অন্তরে চাহিয়া থাকেন। আসল কথা— রবীন্দ্রনাথ তাহার “সাহিত্যের বিচারক” নামক প্রবন্ধে বলিয়াছেন—“আমাদের অধিকাংশ হৃদয়-ভাবেরই এই দুইট দিকৃই আছে,একটা নিজের জন্য, একটা পরের জন্য । আমার হৃদয়-ভাবকে সাধারণের হৃদয়ভাব করিতে পারিলে তাহার একটা সাত্বনী—একটা গৌরব আছে । আমি যাহাতে বিচলিত, তুমি তাহাতে উদাসীন—ইহা আমাদের কাছে ভাল লাগে না ।” - তাই রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছেন যে, শোকাতুর মাত শুদ্ধমাত্র প্রাণের বেদন বিশ্বের কাছে ঘোষণা করেন না—কিন্তু বিশ্বের সমস্ত অবজ্ঞার বিরুদ্ধে তাহার সন্তানের সহস্ৰ সহস্র খুঁটিনাটি গুণাবলি, ক্রিয়াকলাপ হাসি-কান্না, কত ভুলে-যাওয়া ছোট ছোট কাজ পড়শীদের স্মরণ-পথে আনিয় দেন—যাহাতে তাহারাও র্তাহার গভীর বেদনার সমভোগী হয়। পড়শীরাও হয়ত ব্যথায় ব্যথিত হয়, কিন্তু স্নেহান্ধ মাতার সব কথা তাহারা বিশ্বাস করে না বা সমান আদর করে না। তাহারা তাহার সমালোচনা করিয়াই থাকে। কবিতার বেলাও এই কথাই প্রযোজ্য । এই হইল গানের কথা । প্রকারের সাহিত্যে প্রয়াসের স্থান বেশ আছে । গান ব্যতীত অন্যান্যউদ্দেপ্তও বেশ পরিস্ফুট হয় যদি সাহিত্যিকের কিছু দিবার থাকে। নাটক, উপন্যাস, মহাকাব্য এইসকলের মধ্য দিয়াই সাহিত্যিক বড় সাবধানতার সঙ্গে পথ চলেন—তিনি প্রত্যেকটি স্থান ও পাত্র কোন-এক বিশেষ উদ্দেশ্য লইয়া অবতারণা করেন। তিনি তখন খুব সচেতন । এপর্য্যন্ত আমরা আট ও প্রকৃতিতে বিরোধ, আর্ট ও ফাইন আর্টস্এ কি প্রভেদ, আর্টে চেষ্টা ও উদ্দেশ্বের স্থান কতটুকু তাঙ্গাই বিচার করিয়াছি। এইবার আমরা দেখিধ—আর্টের লক্ষ্য কি, কোন বস্তু ইহাকে অবলম্বন করিয়া প্রকাশিত হয়—মানব-জীবনে ইহার স্থান ও প্রভাব কি ও সামাজিক জীবনে ইহার কি দায়িত্ব । স্বাটের লক্ষ্য কি বা আর্টের সাহায্যে কোন বস্তু প্রকাশিত হয় এই কথা বিচার করিতে গেলে দেখিতে পাই কত বিভিন্নপ্রকারের আশ্চৰ্য্য মত মানব-মনের উপর প্রভুত্ব করিয়া গিয়াছে । এখনকার দিনে আমাদের কাছে তাহারা অকিঞ্চিৎকর মনে হইতে পারে, কি স্তু এক সময় তাহারা মানব-মনের চিস্তা ও ইচ্ছাকে নিয়মিত করিত। সেই সোফ্রাতিসের আমল হইতে আজ পর্য্যস্ত কত মতই ন প্রচারিত হইয়াছে। ইহা হইতেই বোঝা যায় বস্তুটি ধারণার কত অগম্য। এই মতেব বিভিন্নতার মধ্যে সামঞ্জস্য আনয়ন করাও কত কঠিন! আমাদের দেশে প্রাচীন কালে সৌন্দৰ্য্য-তত্ত্ব, আর্ট ও আর্টের বিষয় লইয়া বোধ হয় খুব বেশী বিরোধ হয় নাই, আজকালকার বৈজ্ঞানিক প্রণালীতেও ওবিষয়ের বিচার হয় নাই। কতকগুলি মত সকলেই এক-রকম মানিয়া লইয়াছিলেন। তাই সংস্কৃত সাহিত্যে আমরা দেখিতে পাই রস-স্থষ্টিই কাব্যের প্রাণ–এই কথা সকলে মানিয়! লইয়াছেন। সাহিত্য-দৰ্পণকার বিশ্বনাথ কবিরাজ “কাব্যং রসাত্মকং বাক্যং’ ও কাব্য-প্রকাশ-প্রণেতা মৰ্ম্মট ভট্ট "কাব্যং রসাদিমং বাক্যং’ বলিয়া একই ভাবের প্রতিধ্বনি করিয়াছেন। কিন্তু রস কি ? বিশ্বনাথ কবিরাজ বলিয়াছেন, চিত্ত-দ্ৰবকারী অলৌকিক চমৎকারিত্বময় আনন্দ বিশেষের নামই রস। ইহা কথার দ্বারা বুঝান যায় না। আনন্দ যেমন কাহাকেও বলিয়া বুঝান যায় না