পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ হারানিধি শ্ৰী শাস্তা দেবী পাশাপাশি আট-দুশট। গ্রামের যত ধান-চাল কলে ভান ছাটা হ’য়ে এই পথেই বিদেশে রপ্তানি হ’ত। তাছাড়া রেল-পথে যাওয়া-আসা করবার মত মানুষও এতগুলো গ্রামে নিতান্ত কম ছিল না। আজ একুশ বৎসর হ’ল ষ্টেশনটি খুলেছে, কিন্তু একুশ বৎসর আগে সেই যে রেল-কোম্পানী এককথা বলেছিলেন, এখানে গাড়ী দেড় মিনিট থামবে, সে-কথার আর নড়াচড় হয়নি। সংসারের মানুষের কথার কিন্তু নিত্যই বদল হ’য়ে যাচ্ছে। একটা চালের কলের জায়গায় তারা চারটা কল বসিয়ে ফেলেছে, ঘরের কাছে রেল পেয়েছে বলেই অমনি হপ্তায় একবার সহর থেকে বাড়ী ছুটোছুটি স্বরু করে দিয়েছে, এতকাল পরে গায়ের পাঠশালা ছেড়ে সদরে ছেলে পড়াবার সখ পৰ্য্যস্ত জেগে উঠেছে। অথচ এ-সব কথা কিছু গোড়ায় হয়নি। কাজেই নিজের দোষে মানুষগুলো নিজেরাই কষ্ট পায় । পয়সা দিয়ে গাড়ীতে উঠে বলেইত সকলের সব আবদার শোনা চলে না। আজ বলবে পাচ মিনিট গাড়ী থামাও, কাল বলবে ওয়েটিংক্রম করে দাও, এত বড় জালা! আর-একটা আবদার রাখলেই কি আর বক্ষা আছে ? গাল দেওয়া যাদের স্বভাব তারা সব তাতেই গাল দেবে, যতই কেন মন রাখতে চেষ্টা কর না। খুং ধরবার জিনিষের তাদের কখনও অভাব হয় না। সময় বেশী দিলে বলবে গাড়ীতে জায়গা নেই ; একটা গাড়ী বেশী দিলে বলবে এখন, পাণি-পাড়ে জল দেয় না ; তাও যদি করে দেওয়া হয় ত বলবে, মেথর গাড়ী পরিষ্কার করে না ; এমনি কত যে বাজে ছুতো ধরে পিছনে লাগবে, তার ঠিক নেই। কাজেই বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে, কোন কথায় কান না দিয়ে যেমন কাজ চলছিল তেমনি সোজাসুজি কাজ চালানো । কাজের বদল করলেই হরেক-রকম বিশৃঙ্খলা আসে, অকারণ অত হাঙ্গাম করে’ কি লাভ ? Q)Q বেশীর ভাগ গাড়ীগুলো সে-ষ্টেশনে বাত্রে থামে, কিন্তু গ্রামের রাস্তায়ত আর গ্যাস কি ইলেকটিক লাইট নেই যে, যথা সময়ে পথে বেরোলেই হ’ল । কাজেই বাত্রীদের দিন থাকৃতে পান্ধী ও গরুর গাড়ীর ব্যবস্থা করে” ছেলেপিলে, মোটঘাট সব একসঙ্গে বোঝাই করে ধান-ক্ষেতের আলের উপর দিয়ে ঝড়াং ঝড়াং করতে করতে ষ্টেশনের দিকে " দৌড় দিতে হয়। তখন অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। ষ্টেশনের লোহার রেলিঙের বাইরে সারি সারি গরুর গাড়ী তলার দিকে ছোট ছোট কেরোসিনের লণ্ঠন ঝুলিয়ে বটগাছতলার জমাট অন্ধকারে মাঝে মাঝে যাট ধরাবার চেষ্টা করছে। উপরের গাড়ী ও সামনের জোড় বলদের আড়াল ভেদ করে আলোকরশ্মি বেশী দূর অগ্রসর হতে মোটেই পাৰ্বছে না । গাড়োয়ানরা বড় বড় চালের বস্তা পিঠে করে? আলোকের অভাবটা কণ্ঠস্বরে যথাসাধ্য মোচন করে’ যথাস্থানে মাল পৌছে দিতে ব্যস্ত। পথ-ও সময়-সংক্ষেপ করার উৎসাহে অনেকে বোঝাসমেত সচ্ছন্দে লাইনের মধ্যেই নেমে পড়ছে। নূতন যাত্রীরা পথের অন্বেষণে হাতড়ে হাতড়ে রেলিং ও দেওয়ালে মাথা ঠুকে বেড়াচ্ছে । ছেলে, পুটলি ও ঘোমটার ভারে বিব্রত মহিলাদের অবস্থা আরও শোচনীয়। পাশের যাত্রীর উদ্যত তোরঙ্গের ধাক্কা থেকে ছেলের মাথা বাচানো ও ঘোমটার ভিতর থেকে পথ চিনে’ স্বামীর পদামুসরণ বা কণ্ঠাকুসরণ করা দুইটিই এ-ক্ষেত্রে দুরূহ কাজ। বুদ্ধিমান যাত্রীদের ও পুৰ্ব্বাগত চালের বস্তার ভিড়ে প্লাটফর্মের পথ ইতিমধ্যেই সঙ্কীর্ণ হ’য়ে উঠেছে । নিজীব বাধাগুলির গায়ে হোচটু খেলে একপক্ষের মাত্র বিপদ, সজীব বাধাগুলি তাই তারস্বরে নিজ অস্তিত্ব-সম্বন্ধে অপরকে সচেতন করে দুই পক্ষের বিপদ এড়াবার চেষ্টা করছেন। ক্রমে রাত্রি বাড়তে লাগল। বস্তাসঙ্কল পথে পড়ে’ 翻