বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Qobro কোণ লোক বি-এ কিম্ব বি-এসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হ’লে ཨ་ཐ་ হাইকোর্টের এডভোকেটের নিকট এক বছর শিক্ষা লাভ করলে এবং কোন বিশেষ বিষয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হ’লেও হাইকোর্ট তাদের এই অধিকার দিতে পারেন । —বৈকালী পুলিশের জয়গান— লর্ড লিটন যে “জবরদস্ত” গবনূর, তাহার পরিচয় তিনি ক্রমেই দিতেছেন। সেদিন হুগলীতে যাইয়া সমস্ত তারকেশ্বরেয় সত্যগ্রহ ব্যাপারটাকেই তিনি IIoax বা দমবাজি বলিয়া উড়াইয়া দিয়াছিলেন। এবার ঢাকা সহরে অবতীর্ণ হইয়া, তিনি প্রাণ ভরিয়া পুলিশের -গুণকীৰ্ত্তন করিয়াছেন। পুলিশ হাজার অত্যাচার-অনাচার করুক না কেন, আমলাতন্ত্র গবনূমেন্ট তাহাকে সমর্থন করিতে বাধ্য ; কিন্তু কথাটা মনে-মনে বুঝিলেও, একজন গবনূরের মুখে পুলিশের এমন নিল্পঞ্জ প্রশংসা, নিতান্তই বিসদৃশ বোধ হয় ! লর্ড লিটন পুলিশের যে আদর্শ-চিত্র আঁকিয়াছেন, তাহ আদর্শ হিসাবে ঠিকই বটে ; হয়ত বা অস্তান্ত সভ্য দেশের পুলিশ কতকটা ঐকুপই। কিন্তু বাঙ্গালী দেশে আদর্শ-পুলিশের সঙ্গে বাস্তব-পুলিশের এতটা আকাশ-পাতাল তফাৎ যে, লর্ড লিটনের কথাগুলি বিদ্রুপ বলিয়াই মনে হয়! লর্ড লিটন বলিয়াছেন,— "পুলিশ লোকসমাজের তৃতা—কেবলমাত্র গবৰুমেন্টের তৃত্য নয়। পুলিশ দরিদ্র, অসহায় ও নির্দোষ ব্যক্তিদের রক্ষকস্বরূপ। যাহার শান্তিভঙ্গ করে বা সামাজিক বিধি অমান্ত করে, তাহারা ব্যতীত আর কেহ যেন পুলিশকে দেখিয়া ভয় না পায়। পুলিশ অজ্ঞতার প্রতি ধৈৰ্য্যশীল হইবে এবং উত্তেজনার মধ্যেও শাস্ত থাকিবে তাঁহাদের সাহস, সাধুতা ও শিষ্টতার উপরেই সমগ্র সঙ্ঘবদ্ধ সমাজের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত। যদি তাহার এইরূপ আচরণ না করে, তবে যে কেবল গবৰুমেন্টের প্রতিই তাহার কৰ্ত্তব্য লঙ্ঘন করে, তাহ নয়, লোকসমাজের প্রতিও তাহারা তদ্বারা বিশ্বাসঘাতকতা করে।” বক্তৃতা-হিসাবে লর্ড লিটনের বাকাগুলি চমৎকার হইয়াছে। বাঙ্গালার বাহিরে জালিয়ানওয়ালাবাগ, গুরু-কী-বাগ, নাগপুর প্রভৃতি স্বানের পুলিশের কুখ ছাড়ির দিই এই বাঙ্গালাদেশেই চাদপুর, মির্জাকলু, দাদাহাট, হাওড়া, বরিশাল, কানাইঘাট, মাইজভাগ প্রভূতির কথা শি লোকে ইতিমধেই ভুলিয়া গিয়াছে ? শাস্তি ও শৃঙ্খলা-রক্ষার নামে বাঙ্গালার পুলিশ ঐসব স্থানে যে কীৰ্ত্তিকলাপ করিয়াছিল, তাহা চিরদিন জ্বলন্ত অক্ষরে এদেশবাসীর হৃদয়ে লেখা থাকিবে। লর্ড লিটন বক্তৃতা করিবার সময় ঐ সব স্থানের কাহিনী কি ভুলিয়া গিয়াছিলেন ? একেবারে যে ভুলেন নাই, তাহার প্রমাণ তিনি পরক্ষণেই দিয়াছেন । তিনি স্বীকার করিতে বাধ্য হইয়াছেন যে, লণ্ডনের পুলিশ তাহার আদর্শ চিত্রের কতকটা অমুরূপ । এদেশের পুলিশ ঠিক তেমন নয়। কিন্তু সে দোষ কাহার ? লোকে বলিবে যে, উহ। এদেশের পুলিশের শিক্ষাদীক্ষ ও আবহাওয়ার দোষ, যে আমলাতন্ত্র শাসন-প্রণালীর তাহার বাছন, তাহার দোষ,—যtহাদের ইঙ্গিতে এদেশে পুলিশ চালিত হয়, প্তাহীদের দোষ । কিন্তু পাঠকবর্গ শুনিয়া চমকিত হইবেন যে, লর্ড, লিটন মৌলিক গবেষণা করিয়া সম্পূর্ণ নুতন কারণতত্ত্ব আবিষ্কার করিয়াছেন। তিনি বলেন যে, এদেশের পুলিশ যে লণ্ডন পুলিশের মত আদর্শ পুলিশ হয় নাই, তাহার জঙ্ক দায়ী এদেশের জনসাধারণ ॥ তাহারা পুলিশের কার্য্যে সহায়তা করে না, পুলিশকে ভীতির চক্ষে দেখে ও তাহকে এড়াইয়া চলে, পুলিশকে তাহারা আপনাদের রক্ষা প্রবাসী—ভাদ্র, ১৩৩১ [ २8° छांश, sञ थ७ কৰ্ত্ত মনে করে না, বরং উন্ট তাহাদিগকে নানারূপ তীব্র সমালোচনা ও গালিগালাজ করে। আর এইসব কারণেই এদেশের পুলিশ আদর্শ , পুলিশ হইতে পারে নাই। কেহ গালাগালি দিলে, পালট জবাবে গালাগালি দিয়া প্রতিপক্ষকে জব্দ করিবার প্রথী-কলহপ্রিয় বালকদের মধ্যে প্রচলিত আছে বটে ; কিন্তু বাঙ্গালীর গবৰূর্বও যদি বালক-মহলের • সেই সনাতন প্রথা অবলম্বন করেন, তবে তাহ নিতান্তই হাস্তরসাত্মক হইয়া পড়ে। d সাধারণ লোকদের সঙ্গে পুলিশের কোন সহানুভূতি নাই, শান্তি ও শৃঙ্খলা-রক্ষার অজুহাতে তাহার। বিন কারণে বা সীমান্ত কারণে লোকদের উপর অত্যাচার করে। কোনপ্রকারে একবার পুলিশের সংস্পর্শে আসিলে, লোককে নাস্তানাবুদ হইতে হয়, সূৰ্ব্বোপরি এদেশের পুলিশ নিজেদেরকে জনসাধারণের ভূত্য মনে করে না, “সৰ্ব্বময় প্রভু”ই মনে করে,—এই সবই পুলিশের প্রধান দোষ বলিয়। কথিত হইয়া থাকে। এমন কি, বিহার-উড়িষ্যার পুলিশের বড় কওঁ, মহীশূর পুলিশের বড় কৰ্ত্ত প্রভৃতির মত বড় বড় অভিজ্ঞ পুলিশ কৰ্ম্মচারীরাও এইরূপই বলিয়াছেন। আর আজ লর্ড লিটন তরঙ্গাওয়ালদের মত উণ্টাপাস্ট গাহিয়া সেইসব কথা উড়াইয়া দিতে চাহেন। লর্ড লিটন এমন একটা কথা বলিয়াছেন, যাহা সমগ্র ভারতবাসীর পক্ষে ঘোর অপমান-স্বরূপ। "ভারতবর্ষে যে জিনিষটি আমাকে বেশী পীড়া দিয়াছে, তাহ। এই –কর্তৃপক্ষের প্রতি ঘৃণাবশতঃ ভারতবাসী পুরুষেরা ভারতীয় রমণীদিগকে মিথ্যা করিয়া নিজেদের সন্মান ও মর্য্যাদার বিরুদ্ধে অপরাধ স্বষ্টি করিতে প্রবুদ্ধ করে এবং কেবলমাত্র পুলিশের বধূনাম করিবার জন্তই ঐরাপ করা হয়।” এপর্য্যন্ত ভারতের কোন দাস্তিক বড়লাট বা ছোটলাট, ভারতবাসীর প্রতি এমন নীচ মিথ্যা কলঙ্ক আরোপ করিতে সাহস পান নাই। পুলিশের বদনাম করিবার জন্ত এদেশের পুরুষেরা মেয়েদিগকে মিথ্যা কথা বলতে শিখায়—আর মেয়ের মিথ্যা করিয়া কেবলমাত্র পুলিশকে জব্দ করিবার জন্ত অম্লান-বদনে নিজেদের ধৰ্ম্ম ও সতীত্বনাশের কথা লোক-সমক্ষে প্রচার করে। মোকদম। আপীল আদালতে বিচারাধীন বলিয়। লর্ড লিটন নাম না করিলেও তিনি যে চরমনাইরের ঘটনার প্রতি লক্ষ্য করিয়া এই কথা বলিয়াছেন, তাহ স্পষ্টই বুঝা যাইতেছে। গবৰূরের এই মন্তব্য আপীল আদালতের উপর কিরূপে প্রভাব বিস্তার করিতে পারে, বোধ হয়, তিনি তাহা ভাবিয়া দেখেন নাই । লর্ড লিটনের দৃষ্টান্ত আমরা অমুসরণ কৰিতে চাই না। তবে উহাকে জিজ্ঞাসা করিতে ইচ্ছা হয়, তিনি কি সত্যই এদেশের মেয়েদের সম্বন্ধে এই নীচ ধারণা পোষণ করেন ? তাহার মতে চরমনাইর গ্রামের সাজুৰিবি, অষ্টমা দাসী প্রভৃতি ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে নিজেদের সতীত্বনাশের যে কাহিনী ব্যক্ত করিয়াছিল, তাহা কি সব মিথ্যা ? উপসংহারে পুলিশকে অভয় দিয়া লর্ড লিটন তাহার মূল্যবান বক্ততা বা উপদেশ শেষ করিয়াছেন। দেশের লোকে পুলিশের যতই তীব্র সমালোচনা ও নিন্দ করুক না কেন গবর্নমেন্ট যে তাহাদিগকে পক্ষপুটে আশ্রয় দিয়া রক্ষা করিবেন, তাহদের সর্বপ্রকার দুঃখকষ্ট দূর করিতে সতত যত্নবান থাকবেন, একথা গবনূর দৃঢ়ম্বয়ে বলিয়াছেন। আমরা বলি তথাস্তু। কিন্তু গবনূর যদি মনে করিয়া থাকেন, যে, তাহার এই রক্তচক্ষু দেখিয়া দেশবাসী ভীত হইবে, পুলিশের সর্বপ্রকার অত্যাচার ও অনাচার তাহার নীরবে সহ করিবে তবে তিনি নিশ্চয়ই হতাশ হইবেন। —আনন্দবাজার পত্রিকা