পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

e `H8` আপনাকেই সম্যকরূপে করে তুলছে, সে আপনিই হয়ে উঠছে। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ তাই বলেছেন, “আত্ম-সংস্কৃতিবর্ণব শিল্পাণি ।” ক্লাস ঘরের দেয়ালে মাধব আরেক ছেলের নামে বড় বড় অক্ষরে লিখে রেখেছে “রাখালট বঁদের । খুবই রাগ হয়েছে। এই রাগের বিষয়ের তুলনায় অন্য সকল ছেলেই তার কাছে অপেক্ষণকৃত অগোচর । অস্তিত্ব হিসাবে রাখাল যে কত বড় হয়েছে ত অক্ষরের ছাদ দেখলেই বোঝা যাবে। মাধব আপন স্বল্প শক্তি অনুসারে আপন রাগের অনুভূতিকে আপনার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সেইটে দিয়ে দেয়ালের উপর এমন একটা কালে অক্ষরের রূপ স্বষ্টি করেছে যা খুব বড় করে জানাচ্চে মাধব রাগ করেছে, যা মাধব চাচ্ছে সমস্ত জগতের কাছে গোচর করতে । ঐটেকে একটা গীতিকবিতার বামন অবতার বলা যেতে পারে । মাধবের অন্তরে যে অপরিণত পঙ্গু কবি আছে, রাখালের সঙ্গে বানরের উপমার বেশি তার কলমে আর এগোলো না । বেদব্যাস ঐ কথাটাই লিখেছিলেন মহাভারতের পাতায় শকুনির নামে । তার ভাষা স্বতন্ত্র, তা ছাড়া তার কয়লার অক্ষর মুছবে না যতই চুনকাম করা যাক্ । পুরাতত্ত্ববিদ নানা সাক্ষ্যের জোরে প্রমাণ করে দিতে পারেন শকুনি নামে কোনো ব্যক্তি কোনো কালেই ছিল না । আমাদের বুদ্ধিও সে কথা মানবে, কিন্তু আমাদের প্রত্যক্ষ অনুভূতি সাক্ষ্য দেবে সে নিশ্চিত আছে । ভাড়ু দত্তও বাদর বই কি, কবিকঙ্কণ সেট কালে অক্ষরে ঘোষণা করে দিয়েছেন । কিন্তু এই বঁাদরগুলোর উপরে আমাদের যে অবজ্ঞার ভাব আসে সেই ভাবটাই উপভোগ্য । আমাদের দেশে এক প্রকারের সাহিত্যবিচার দেখি যাতে নানা অবাস্তর কারণ দেখিয়ে সাহিত্যের এই প্রত্যক্ষ গোচরতার মূল্য লাঘব করা হয়। হয়ত কোনো মানবচরিত্রজ্ঞ বলেন, শকুনির মত অমন অবিমিশ্র দুৰ্ব্বত্ততা স্বাভাবিক নয়, ইয়াগোর অহৈতুক বিদ্বেষবুদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মহদগুণ থাকা উচিত ছিল ; বলেন যেহেতু কৈকেয়ী বা লেডি ম্যাকবেথ হিড়িম্বা বা শূৰ্পনখা নারী, মায়ের জাত, এইজন্তে এদের চরিত্রে ঈর্ষ বা কদাশয়তার অত নিবিড় কালিম আরোপ করা অশ্রদ্ধে। সাহিত্যের তরফ থেকে বলবার কথা এই যে, এখানে আর কোনো তর্কই গ্রাহ নম্ন কেবল এই জবাবটা পেলেই হোলে যে-চরিত্রের অবতারণা হয়েছে তা সৃষ্টির কোঠায় উঠেছে, তা প্রত্যক্ষ । কোনো এক খেয়ালে স্বষ্টিকৰ্ত্তা জিরাফ জন্তুটাকে রচনা করলেন । তার সমালোচক বলতে পারে এর গলাটা না-গোরুর মত না-হরিণের মত, বাঘ ভালুকের মত তো নয়ই, এর পশ্চাদ ভাগের ঢালু ভঙ্গীট সাধারণ চতুষ্পদ সমাজে চলতি নেই অতএব ইত্যাদি। সমস্ত আপত্তির বিরুদ্ধে একটিমাত্র জবাব এই যে, ঐ জন্তুট জীবহুষ্টিপৰ্য্যাম্বে সুস্পষ্ট প্রত্যক্ষ ; ও বলছে আমি আছি, ন৷ থাকাই উচিত ছিল বলাটা টিকবে না। যাকে স্বষ্টি বলি তার নিঃসংশয় প্রকাশই তার অস্তিত্বের চরম কৈফিয়ৎ । সাহিত্যের স্বষ্টির সঙ্গে বিধাতার স্বষ্টির এইখানেই মিল ; সেই সষ্টিতে উট জন্তুট হয়েছে বলেই হয়েছে, উটপার্থীরও হয়ে ওঠা ছাড়া অন্য জবাবদিহী নেই । মাতুষও একেবারে শিশুকাল থেকেই এই আনন্দ পেয়েছে, প্রত্যক্ষ বাস্তবতার আনন্দ । এই বাস্তবতার মানে এমন নয় যা সদাসৰ্ব্বদা হয়ে থাকে, যা যুক্তিসঙ্গত । যে-কোনো রূপ নিয়ে ষা স্পষ্ট করে চেতনাকে স্পর্শ করে তাই বাস্তব । ছন্দে ভাষায় ভঙ্গীতে ইঙ্গিতে যখন সেই বাস্তবতা জাগিয়ে তোলে, সে তখন ভাষায় রচিত একটি শিল্পবস্তু হয়ে ওঠে । তার কোনো ব্যাবহারিক অর্থ না থাকতে পারে, তাতে এমন একটা কিছু &ios" oil; a tease us out of thought as doth eternity ওপারেতে কালে রং বৃষ্টি পড়ে ঝম্ ঝম্‌, এ পারেতে লঙ্কা গাছটি রাঙা টুক্‌টুক্‌ করে, গুণবতী ভাই আমার মন কেমন করে । এর বিষয়টি অতি সামান্ত । কিন্তু ছন্দের দোল খেয়ে এ যেন একটা স্পৰ্শ-যোগ্য পদার্থ হয়ে উঠেছে । ডালিম গাছে পরতু নাচে, তাক ধুমধুম বদ্যি বাজে। শুনে শিশু খুশি হয়ে ওঠে। এ একটা সুস্পষ্ট চলন্ত জিনিষ, যেন একটা ছন্দে-গড়া পতঙ্গ, সে আছে, সে উড়ছে, আর কিছুই নয়, এতেই কৌতুক । তাই শিশুকাল থেকে মানুষ বলছে গল্প বলে, সেই গল্পকে বলে রূপকথা। রূপকথাই সে বটে, তাতে না থাকতে