বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন হৃদয় সাগরে নিমজ্জিত করিয়া লইবার যে দুলভ শক্তি নারীর আছে, তাহারই কাছে প্রসাদপ্রার্থী হইয়া যামিনী আসিয়াছিল, কিন্তু নারী সাড়া দিতে পারিল না । সে আপন হৃদয়ভার লইয়া বাতায়ন-প্রান্তে একাকী দাড়াইয়া রহিল । তাহাকেও কেহ বুঝিল না, তাহারও হৃদয়ের দ্বন্ধ কেহ দেখিল না । SS সুশীলা সেই সবেমাত্র গোয়ালঘরে ঘুটের আগুনের ধোঁয়া দিয়া, তুলসীমূলে সন্ধ্যাদীপ জালিয়া দিয়া, হাতমুখ ধুইয়া কাপড় ছাড়িয়া বটি পাতিয়া তরকারী কুটিতে বসিয়াছিলেন । চন্দ্রনাথ নিত্যকার মত র্তাহার পড়িবার ধরে আলো জ্বালাইয়া চশমার খপি হইতে চশমfথানা বাহির করিয়া কেঁচার খুট দিয়া মুছিবার উদ্যোগ করিতেছিলেন Y!' , , সময় বহিরে একটা মোটর দড়িাইবার আওয়াজ পাওয়া গেল । হর্ণের আওয়াজ ঘন ঘন হইতে লাগিল । চন্দ্রনাথ চশমা পরিয়া তাড়াতাড়ি বারীন্দায় বাহির হইয়া আসিয়া দেখিলেন নিৰ্ম্মলা ও যামিনী সিড়িতে উঠিতেছে । তাহদের আসিবার কোনরূপ কথা ছিল না, এমন অপ্রত্যাশিতরূপে নিৰ্ম্মলাকে দেখিয়া বৃদ্ধ আনন্দে অধীর হইয়া উঠিলেন । নিৰ্ম্মল! নত হইয়া সেই বারীন্দীতেই র্তাহীকে প্রণাম করিতেছিল, তাহাকে ছুই হাতে উঠাইয়া ধরিয়া একসঙ্গে তিনি অজস্র প্রশ্ন করিতে লাগিলেন, “এস মা এস। কখন এসেছ ? কোন্‌ ট্রেন ধরেছিলে ? হঠাৎ এমন ক’রে আসা হ’ল যে-••হঠাৎ বুঝি বুড়ো বাপকে মনে পড়ে গেল ? এই যে যামিনী, থাক-থাক আর প্রণাম করতে হবে না । তারপর কি খবর ” বামিনী সংক্ষেপে বলিল, “কলেজ খুলেছে । আসতেই হচ্ছিল তাই সঙ্গে ক’রে নিয়ে এলুম । জানি ওকে আনলেই আপনি খুশী হবেন । কিন্তু এবারে তো আপনার জিনিষ আপনার হাতে পৌছাল, এবারে আমি যাই ।” তাহার কণ্ঠস্বরে শেষের দিকে বেদনার আভাস । সমস্ত মুখে ক্লাস্তির চিহ্ন সুপরিস্ফুট । ঘরে ঢুকিয় আলোতে চন্দ্রকাস্তবাবুর নজরেও তাহা পড়িল । নিৰ্ম্মলার সঙ্গে বিবাহের আগে যামিনীর প্রতি র্তাহার মনোভাব, যেমন د ډ-سسمدوه o د মুক্তি جوليوسb ছিল এখন যেন তাহার চেয়ে অনেক বদলাইয়া গিয়াছে । তাহার প্রতি একটি সুমিষ্ট মুকোমল স্নেহরস ভিতরে ভিতরে কখন উজ্জীবিত হইয়া উঠিয়াছে। সে কেবল আজ তাহার পানে চাহিবামাত্র তিনি টের পাইলেন । ব্যস্ত হইয়া উঠিয় কহিলেন, “সে কি, যাবে কি ? নিৰ্ম্মল, যা ত মা, তোর মাকে বাড়ির ভিতর খবর দে।” প্রতিমাসুন্দরী কপাটের আড়ালে দাড়াইয়াছিল। নিৰ্ম্মলাকে দেখিবামাত্র হাসিমুখে কহিল, “ঠাকুরবি ভাই, এলে ? এরই মধ্যে ঠাকুরজামাইটকে এমন বশ ক’র নিয়েছ ধে বেখানে যখন যান, সঙ্গে ক’রে নিয়ে যান । দু-দিনের অদর্শন সহ হয় না। সত্যি ভাই, তোর ক্ষমতা আছে অস্বীকার করবার জে নেহ ।” প্রতিমার কথার সুরে একটা অত্যস্ত অন্তরঙ্গতার সুর । সে বেচারার দেীঘ নাই । বিবাহের পরই মেয়েদের পরস্পরের মধ্যে একটা ঘনিষ্ঠ আধুীয়তার স্বত্রপাত হয় । তখন আর বয়স বা সম্পর্কের জন্ত বড়-একটা আসিয়া যায় না। প্রতিম। তাই উচ্ছসিত হইয়া মনে করিয়াছিল এই দু-তিন মাসের মধ্যেই নিৰ্ম্মলার নিশ্চয় একটা বড় রকম পরিবর্তন ঘটিয়া গিয়াছে । আগেকার সেই স্তব্ধ, সমাহিত, পুস্তকালীন নিৰ্ম্মলা কখনই নাই । এখন সপ্তদশববীয় যে-তরুণীকে প্রতিমা কল্পনার চক্ষে দেখিতে পাইয়া উৎফুল্ল হইয়া উঠিয়াছিল সে বসন্তব্রততীর মত প্রেমে, চাঞ্চল্যে, অকারণ পুলকের হিল্লোলে তরঙ্গায়িত হইয়া উঠিয়াছে । তাহার কথায়, হাসিতে, দৃষ্টিপাতে আনন্দ ঝরিয়া পড়িতেছে । প্রতিমার সহিত নিৰ্ম্মল! ভিতর আসিল । আলোতে ভাল করিয়া তাহার দিকে চাহিয়৷ কিন্তু প্রতিমার ভুল ভাঙিল। তাহার মনশ্চক্ষের সেই তরুণীর সঙ্গে কই নিৰ্ম্মলীর ত কোথাও মিল নাই । বরঞ্চ সে যেন আগেকার চেয়ে আরও অনেক নিস্তন্ধ ! সাজসজ্জাও তাহার যেমন অনাড়ম্বর তেমনি সাদাসিধা । হাতে আগেকার সেই সরু প্লেন বালা ছু-গাছি ছাড়া আর কোথাও কোন অলঙ্কারের চিহ্নমাত্র নাই । প্রতিমা অবাক হইয়া ভাবিল, ইহীদের কাগুকারখানাই আলাদা । আজকাল সে শাশুড়ীর নির্দেশমত কাজকৰ্ম্মে খুব তৎপর হইয়াছে । তাড়াতাড়ি ষ্টেভি ধরাইয়া চায়ের জল বসাইয়া দিয়া যামিনীর জন্ত জলখাবার সাজাইতে প্রবৃত্ত হইল ।