পাতা:প্রবাসী (ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] একমাত্র উপায় বরানগরের মেজদি । তিনি যদি কিছু সাহায্য করেন । কিন্তু সাত বৎসরের মধ্যে আজ সৰ্ব্বপ্রথম সেখানে হাত পাতিতে যাওয়া তাহার বড়ই বিসদৃশ ঠেকিল। পিতার মৃত্যুতে সেই অপ্রক্তিকর ধ্যবহারটাও মনের মাঝে উকি মারিল । আবার ভাবিল, তার ঘাই বলুন না কেন, দিদি ত আমার । ভায়ের দুঃখকষ্ট দেখিলে কোন বোন স্থির থাকিতে পারে? যদিও কুটুম্বের নিকট অপমানিত হইতে পারি ; আর অপমানই বা কিসের? কন্যাদান করিলেই ভাইটিকে মাতুব পদে পদে মতি স্বীকার করিতে হয় । করিবার জন্য এটুকু তাহাকে অমানবদনে সহিতে ইষ্টবে। আপিসের ফেরত সে বরানগর চলিল । ঠিক বড়লোক বলা চলে না, অবস্থাপন্ন গুহস্থ । দ্বিতল হাড়ীপানি অধিবাসীদের সুখ-স্বাচ্চন্দোর পরিচয় দিতেছে । কমল একটু ইতস্তত করিয়া দ্বারের কড়া নাড়িয়া কিল, “কে আছেন ?” একটি তের চোদ্দ বছরের ছেলে দ্বার খুলিয়া জিজ্ঞাস করিল, ‘কাকে চান ? কমল বলিল “আমার বাড়ী অভয়পুরে ।” ছেলেটি একটু বিরক্ত হইয়া কহিল, “কিন্তু চান #কে ?” কমল মেজদিদির নাম করিতেই দুয়ার বন্ধ করিয়া ছেলেটি ভিতরে চলিয়া গেল এবং উচ্চকণ্ঠে কাহাকে লিল, “ও দিদি অভয়পুর থেকে কে এসেছে, বৌদির নাম করছে। কিন্তু এমন ময়লা জামাকাপড় !" i. স্ত্রীকণ্ঠে উত্তর হইল, “বোয়ের ভাই নয় ত ? ডেকে ধ্বস বাইরের ঘরে । এতকাল পরে আবার আদর ੋਣ এলেন কেন,– কে জানে ?” কমলের ইচ্ছা হইল এই মুহূৰ্ত্তে ফিরিয়া যায়, কিন্তু চাইয়ের জন্য পারিল না ; আবার দীর্ঘদিন পরে যদি দিদির আশ্রয়ে আসিয়াছে ত তাহার সঙ্গে একবার দেখা ন! ক্ষরিয়া কি করিয়াই বা ফিরিয়া যাইবে ? ইহার হাজার অপমান করুক, নিরপরাধিনী দিদি ত তাহার কোন দোষ করেন নাই । রাজমাত 》 উষা আসিতেই কমল তাহাকে প্রণাম করিল। সে কোন আশীৰ্ব্বাণী উচ্চারণ না করিয়া ভায়ের ছিন্ন-মলিন বেশ ও রুক্ষ শুষ্ক মুখের পানে চাহিয়া কঠিল, “কুটুমবাড়ী একটু ফরসা জাম-কাপড় পরে আসতে হয়, তোর এ জ্ঞানটুকু আজও হ’ল না, কমল।” দীর্ঘ সাত বৎসর পরে প্রথম দর্শনে স্নেহময়ী ভগ্নীর এ কি নীরস তিক্ত সম্বোধন ! কমল আপনাকে অতি কষ্টে সংবরণ করিয়া আরক্ত নতমুখে উত্তর দিল, “তিরিশ টাকা মাইনের কেরাণীর কাছে এর চেয়ে বেশী আশা করা ভুল, মেজদি । আর কি বাবা আছেন ।”-—বলিয়া মলিন জামার প্রাস্তটা তুলিয়া চোখে দিল । দিদি বেশ সহজ প্রশান্ত কণ্ঠে কহিল, “বুঝলুম অবস্থা খুবই খারাপ হয়েছে ; কিন্তু হঠাৎ আজ কি মনে ক’রে এখানে ?” কমল রুদ্ধকণ্ঠে বলিল, সত্যিই তুমি আমার কেউ ?” দেয়ালের পানে মুখ ফিরাইয়৷ কঠিন কণ্ঠে উষ বলিল, “সে সম্পর্ক ত তোমরাই চুকিয়ে দিয়েছ। সামান্য একথান গহনার জন্য আজ সাত বছর ধরে এখানে পড়ে আছি । বাপ-মার যেন আরও ছেলেমেয়ে আছে, কিন্তু আমার—” আর সে বলিতে পারিল না । তেমনি মুখ ফিরাইয়। স্তব্ধ হইয়া রহিল। g আমি সেই মেজদি, কেবল ভাবছি, أقل قسم الة কমল বুঝিল মেজদিদি কাদিতেছেন। সাত বৎসরের সঞ্চিত গোপন অশ্রু আজ সকল বাধা ঠেলিয়া মুক্ত অভিমানের সঙ্গে অবিরলধারে বহিতেছে । সে-ও কোন কথা না বলিয়া চুপ করিয়া রহিল । কিছুক্ষণ পরে উষা মুখ ফিরাইয়া বলিল, “এদের দেওয়া জালা-যন্ত্রণা ত আমার অঙ্গের আভরণ হয়েছে ; কিন্তু তোরাও যদি এমন নিষ্ঠুর হয়ে থাকুবি ত যাই কোথায় ? হা রে কমল, মা কি আমার কথা একবারওঁ বলেন না ? ছোট ভাইগুলো--তাদের মেজদির কথা জিজ্ঞেস ক’রে না ? রমা শ্বশুরবাড়ী গিয়ে কেমন আছে ? বাবা নিশ্চয়ই আমার কথা—”