বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९९९ $} মুহুরী হ'ল । তার ছেলে মধুসূদন ছেলে-বেলা থেকেই আড়তে মানুষ হয়ে ব্যবসার হাটহদ জেনে নিলে, তার লেখাপড় ছেড়ে ব্যবসায়ে ঢুকে ক্রমে মহারাজ হয়ে উঠল। মধুসুদন ছেলেবেল থেকে হিসাবে দক্ষ, দৃঢ়স্বভাব, এক কথার মানুষ, যা ধরে বা বলে তা করে। সে অর্থসঞ্চয়ে এমন মন দিলে যে তার মা পুত্রবধুর মুখদর্শনের আশা ত্যাগ করেই পরলোকে প্রস্থান করলেন । যখন মধুসূদন কারবার খুব ফলাও করে তুলে রাজ মহারাজ। থেতাল পেয়ে সমাজে লোকমান্ত সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল, তখন সে বললে এইবার বিবাহের ফুরদং হয়েছে । নানা জায়গা থেকে বিবাহের সম্বন্ধ আসতে লাগল। মধুসূদন চোখ পাকিয়ে বললে—ঐ চাটুজ্জেদের মেয়ে চাই। মধুসূদন তার পুৰ্ব্বপুরুষের লাঞ্ছনীর কথা এক দিনও ভোলেনি। যারা তাদের কুলের খোট দিয়ে দেশছাড়া করেছিল, চাই তাদেরই ঘরের মেয়ে। মধুসূদন পণ করেছিল-টাকার জোরে সে চাটুজ্জেদের কুলগৰ্ব্ব খৰ্ব্ব করে ছাড়বে। সুরনগরের চাটুজ্জেদের অবস্থাও এখন ভাল নয়, তাদের জমিদারী দেনায় জড়িয়েছে । তাদের পরিবারের মধ্যেও ভাগাভাগি হয়ে গেছে। এক ভাগে অাছে দুই ভাই বিপ্রদাস আর সুবোধ, তার পাচ লোন ; চার বোনের বিয়ে হয়ে গেছে,--তাদের বাপ ম৷ বেঁচে থাকৃতেই তারাই অনেক পণ দিয়ে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে গেছেন ; ছোট বোন কুমুদিনীর বিবাহ হবার আগেই তার বাবার অসচ্চরিত্রতার জন্য তার মা রাগ করে বৃন্দাবনে চলে যান, সেই শোকে কুমুদিনীর বাব। অল্প দিনের মধ্যেই মারা যান, এবং তার অল্প দিন পরেই তার মাও স্বামীর সহগমন করেন । তখন তার রক্ষণ ও শিক্ষার ভার পড়ে তার বড়দাদা বিপ্রদাসের উপর । বিপ্রদাস বোনকে লেখাপড়া গান-যাজন বন্দুক-ছোড়া প্রভৃতি বঙ্ক বিষয়ে সুশিক্ষিত করে তোলেন। কুমুদিনীর বয়স হয়েছে উনিশ । এখন তার বিয়ে দিতে হবে । অথচ চাটুজে-বংশের মেয়ের বিবাহের উপযুক্ত পণের টাকার সঙ্গতি তখন বিপ্রদাসের নেই । এই সময় হঠাৎ বিপ্রদাসের মাড়োয়ারী মহাজন বিপ্রদাসকে টাকার তাগাদ দিয়ে বস্ল, এবং সেই সময়েই একজন বন্ধু অনেক দিন পরে হঠাৎ এসে বিপ্রদাসকে পরামর্শ দিলে যে, মহারাঞ্জ। মধুসূদনের কাছ থেকে এক থেকে এগার লাখ টাকা ধার নিয়ে সে-সব খুচরা দেন মিটিয়ে ফেলুক। বিপ্রদাস তাই করলে। ছোটভাই সুবোধ বললে এখন উপাৰ্জ্জনের পথ দেখতে হবে, সে বিলাত গিয়ে ব্যারিষ্টার হরে আসবে। সে গেল বিলাত । মাড়োয়ারীর তাগাদ তার বিপ্রদাসের বন্ধুর অকস্মাৎ আবির্ভাব হয়ত কৌশলী মধুসূদনের কৌটিল্যনীতিরই ফল। কুমুদিনীর বিবাহের পণ জোটানে। আর পাত্র কথা কল্পনা করতেই তার দাদা বিপ্রদাসের আতঙ্ক হয় । তাই কুমুদিনী নিজের জন্তে নিঙ্গে সঙ্কুচিত। তার বিশ্বাস সে অপয়া । সে মনে মনে কেবল ভাবে—“কোথায় আমার রাজপুত্র, কোথায় তোমার সাত রাজার ধন মাণিক, বাচাও আমার ভাইদের, আমি চিরদিন তোমার দাসী হয়ে থাকৃব।” কুমুদিনী “বংশের দুৰ্গতির জঙ্গে নিজেকে যতই অপরাধী করে, ততই হৃদয়ের সুধাপাত্র উপুড় কয়ে ভাইদের ওর ভালবাসা দেয়—কঠিন দুঃখে নেঙ ড্রানে। ওর ভালবাস। কুমুর পরে তাদের কৰ্ত্তব্য করতে পারছে না বলে ওর ভাইরাও ষড় IN IR তাদের স্নেহ দিয়ে ঘিরে রেখেছে।" জোটানোর প্রবাসী স্ট s S5లిశు বিপ্রদাস সাবেক চাল বঢ়ায় রাণা কঠিন দেখে কুমুদিনীকে নিয়ে কলকাতায় এলেন। of ছেড়ে কুমুদিনীর মন খ খ করে । বিপ্রদাস বেশ করে লোনকৈ সাহিত্য এসরাজ বন্দুক-ছোড়া শেখান, একসঙ্গে দাবা খেলেন। এখানে এসে ভাইবোন পরম্পরের সঙ্গী হ’ল । কিন্তু কুমুদিনীর মনটা জন্ম-একলা । বিপ্রদাসও নানা চিন্তায় গম্ভীর প্রশাস্ত । # কুমুদিনী “দেখতে সে সুন্দরী লম্ব। ছিপছিপে, যেন রজনীগন্ধর পুষ্পদও ; চোখ বড় না হোক একেবারে নিবিড় কালে, আর নাকটি নিপুত রেখায় যেন ফুলের পাপড়ি দিয়ে তৈরি । রং শাখের মতন চিকণ গৌর ; নিটোল দুখানি হাত ; সে হাতের সেবা কমলার বরদান, কৃতজ্ঞ হয়ে গ্রহণ করতে হয়। সমস্ত মুখে একটি বেদনার সকরুণ ধৈৰ্য্যের ভাব। এক রকমের সৌন্দৰ্য্য আছে তাকে মনে হয় যেন একটা দৈব আবির্ভাব, পৃথিবীর সাধারণ ঘটনার চেয়ে অসাধারণ পরিমাণে বেশী ...কুমুদিনী ঘরে লেখাপড়া করেছে। বাইরের পরিচয় নেই বললেই হয়। পুরানো নূতন দুই কালের আলো-আঁধারে তার বাস ।” তার দাদ। তাকে দেপে ভাবেন “ও যে চাদের আলোর টুকরো, দৈস্তের অন্ধকারকে একা মধুর করে রেখেছে।” আর "বিপ্রদাসের দেবতার মত রূপ, বীরের মত তেজস্ব মুষ্ঠি, তাপসের মত শান্ত মুখশ্ৰী, তার সঙ্গে একটি বিষাদের নম্রত। র্তাব মুখে সেই বিষাদ উপর অস্তরের মহত্ত্বের ছায়া, ধৈয্যের আশ্চৰ্য্য গভীরতা। তথনকার কালে শিক্ষিত সমাজে প্রচলিত পজিটিভিজম্‌ ৰ্তার ধৰ্ম্ম ছিল, দেবতাকে যাইরে থেকে প্রণাম করা তার অভ্যাস ছিল না, অথচ দেবতা আপনিই তার জীবন পূর্ণ করে আবিভূর্ত ছিলেন।" অতি ক্রোধের সময়েও তার শাস্ত কণ্ঠস্বর, মুখের মধ্যে উত্তেজনার লক্ষণ প্রকাশ পেত না । বিপ্রদাসের ভাই কুবোধ বিলাতে গিয়ে অপব্যয় করছে, আর ক্রমাগত দাদার কাছে টাকা চেয়ে পাঠাচ্ছে । বিপ্রদাস ভাইয়ের অবিবেচনায় বিব্রত ও ব্যথিত হয়, কিন্তু কষ্ট করে টাকা পাঠায়। একবার সুবোধ একথোকে দেড়-শ পাউণ্ড চেয়ে পাঠালে। দাদাকে চিস্তিত দেখে কুমুদিনী ব্যাপার জানতে পারলে, এবং তার মায়ের গহনা বেচে ছোটদাদাকে টাকা পাঠাতে অনুরোধ করলে । কিন্তু দে-গহনা বিপ্রদাস কুমুদিনীর বিবাহের জন্য সম্বল ক’রে রেখেছিল। বিপ্রধাস টাকা পাঠাতে পারবেন না লেথাতে তুবোধ লিখলে তার অংশের জমিদারী বিক্রি করে টাকা পাঠিয়ে দিতে। সুবোধের এই প্রস্তাব বিপ্রদাস আর কুমুদিনীর বুকে বাজল । বিপ্রদাস নিজের তালুক পত্তনী দিয়ে টাকা পাঠালেন । এমন সময় এল মধুসূদনের ঘটক। বিপ্রদাস বেশী বয়সী পাত্রে বোন সম্প্রদান করতে নারাজ হলেন। কুমুদিনী ভাবে তার দিদিদের কথা তার তে তাদের স্বামী বেছে নেয় নি, মেনে নিয়েছে, যেমন ক’রে ম। মেনে নেয় ছেলেকে। কুমুদিনী ভাবে সতীসাধ্বীদের কথা যার নির্বিচারে স্বামীর সব আচরণ সহ করে। সে কদিন ভেবে ভেবে অচেনা অলেখ। মধুসূদনকেই পতিত্বে বরণ করে ফেলে। সে দেবতার কাছে সঙ্কেত মানত করে মনে করলে সে দৈবসঙ্কেতে তার মনোনয়মের সমর্থনই পেয়েছে। তার দাদা তার মত জিজ্ঞাসা করলে সে জোর দিয়ে বলে-মে মধুসূদনকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে কবে না। সম্বন্ধ অগত্য পাক হ’ল। কুমুদিনী খুলী। তার অপ্তরে বাহিন্ধে যেন একটা নুতন প্রাণের রঙ লাগল। ... : *