পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ | মাঝে দেখিতে পাওয়া যাইত না—এমন নয়, কিন্তু তাঁহাদের অধিকাংশই সহজপ্রাপ্য ইংরেজী পুস্তকের ,প্রতিধ্বনি মাত্র। সম্প্রতি আমাদের দৃষ্টি ফিরিয়াছে। উচ্চশ্রেণীর বাংল। মাসিক পত্রে কখনও কখনও যে দু-একটি সাহিত্য প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, তাছার স্বর শুনিলেই বুঝিতে পারা যায় যে, সেগুলি সস্তী বিলাতী সমালোচনার নিকৃষ্ট নকল নয়। বিগত দুই বৎসরের মধ্যে বাংলায় কাব্য সম্পর্কিত দুইখানি উৎকৃষ্ট এবং পরম-উপভোগা আলোচনা পুস্তক প্রকাশিত হইয়াছে। আমাদের সমালোচনার দৃষ্টি যে সংস্কৃত অলঙ্কার-শস্ত্রের দিকে ফিরিয়াছে, এই দুইখানি গ্রন্থ তাহার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। প্ৰথমখানি শ্ৰীযুক্ত অতুলচন্দ্র গুপ্তের কাব্য-জিজাস, দ্বিতীয়খানি BBDB BBB SBBSSBBBB S BBBBBB BBBB BBS বাব্যের সম্বন্ধে কবির আলোচনা সকল সময়েই কৌতুহলোদ্দীপক। কাব্য-পরিমিতি'তে দেখা যায় গ্রন্থকার রসজ্ঞ সমালোচকও বটেন । তিনি বলিয়াছেন, যে অলৌকিক শক্তি সাধারণ মানবচিত্তধারা হইতে অবিচিত্তকে পৃথক করিয়া ভাব হইতে তাহাকে রসে উঠবার জঙ্ক নিরস্তর উত্তেজিত করে, তাহাই কবি-প্রতিভা। শুধু লেথায় নয়, রেখায় আঁকিয় তিনি এই কবিচিত্তধারা ও পাঠকচিত্তধারার পরিচয় দিতে চাহিয়াছেন। সত্যকথা বলিতে গেলে যে সকল পরম অনুভূতি কবির মনে প্রকাশবেদনায় ব্যাকুল হইয়া কাব্যচ্ছলো অভিবাক্ত হয়, সহৃদয়জনের সহকর্মিত না থাকিলে তাই অনর্থক হইয় পড়ে। গ্রন্থের শেষার্দ্ধে গ্রন্থকার বাংলা কাব্য ও কবিতার দষ্টান্ত সাহায্যে সূত্রের প্রয়োগ ও তত্ত্বের ব্যাখ্যাঙ্কে সুগম করিতে চষ্টা করিয়াছেন। সংস্কৃতে কাব্যের রসকে ব্রহ্মস্বদের সহিত তুলনা করা হইয় থাকে। আলঙ্কারিকের রস্তত্বে মানবমনের মূলদেশে পছিয়ছিল। তাই অলঙ্কার শাস্ত্রে রসবিচারের মত গভীর তত্ত্বালোচনা সকল দেশের সকল সাহিত্যেই সুদুলভ। গ্রন্থকারের প্রকাশ ক্ষমতায় এই দুর্গম রসতত্ত্ব পাঠকের কাছে বহুল পরিমাণে সরল *ইরা উঠিয়াছে । কাব্য-পরিমিতি’র নামকরণ সার্থক হইয়াছে মনে কবি । বইখানি রসজ্ঞ পাঠকের আদরের বস্তু হইবে । শ্রীশৈলেন্দ্রকৃষ্ণ লাহা বরেন্দ্র লাইব্রেরী, ২০৪ নবমেঘদূত—গ্ৰন্থবোধ বস্তু। কর্ণওয়ালিস স্ট্রট, কলিকাতা । মুখবন্ধে বলা হইয়াছে—“বইটি একটি বর্ষার উপন্যাস”। এর নিবিড় ভাৰ-ব্যাকুলতার জঙ্ক আমরা বইখানিকে একটি গদ্য-কাব্য পুস্তক-পরিচয় ●8○ বলিব । বর্ষার মধ্যে একটি চিরবিরহের কুর অাছে। গাঢ় আলিঙ্গনের মধ্যেও কেমন একট ব্যবধান কৃষ্টি করিয়া দে দুইটি হ্যায়ের মধ্যে ক্রননের ব্যথা বহন করিয়া ফিরে। এই জন্য “ম্যোলোকে ভবতি হখিনোইপ্যনাথাবৃত্তি চেতঃ"। যেখানে "মানুষের গড় বিধানে” চিরকালের জন্য এক অলঙ্ঘনীয় ব্যবধান স্থষ্টি হইয়া গেল সেখানে বর্ষা যে কি বাধা আনে কে বুঝিবে ? এই বেদনাই বইখানিতে ঘনীভূত হইয়া উঠিয়াছে। বর্ষার “মেঘৈমেট্রি” মুহূৰ্ত্তগুলিতে দুইটি তরুণ-তরুণীর চিত্তের মুরেয় অঞ্জলি লইয়া পরস্পরের পানে নিত্যঅভিসার-যা ক্ষণিক ভ্রমের জন্য আর কখনই মিলনের মধ্যে সার্থক হইয়া উঠিতে পারিল না, পরন্তু দুরত্বকে চিরজন্মের মত অনতিক্রমণীয় করিয়াই রাখিল—এ তাহারই একটি অশ্রুসজল কাহিনী । বইখানি নিজের উদ্দেষ্ঠে সফল হইয়াছে। এর পাতায় পাতায় বর্ধার পটভূমিকায় দুইটি মিলন-পিয়ালী-চিত্তের ব্যাকুলত বেশ নিবিড়ভাবে ফুটিয়া উঠিয়াছে, আর সমস্ত চরিত্রগুলি,—এমন কি শিশু “রুষ” পর্যন্ত এই স্বরটিকে ফুটাইতে যথেষ্ট সাহায্য করিয়াছে। গৌণ চরিত্রগুলির মধ্যে “বীণা"কে বড়ই ভাল লাগিল। সে তাহার চঞ্চলত৷ মুখরতা আর সহজ বেপরোয়াগিরি লইয়া বিজলীর মতই বইয়ের মেঘলা ভাবটিকে জীবন্ত করিয়া তুলিয়াছে। পড়িবার সময় তাঙ্গকে আর একটু বেশী করিয়। পাইতে ইচ্ছা হয়। এই রকম বই একঘেয়ে হইয়া পড়িবার ভয় থাকে ; কিন্তু লেখক এ বিষয়ে যেশ সতর্কত দেখাইয়াছেন। কয়েক পাত অস্তুরই— কখনও কখনও আরও নিকটে নিকটে বর্ষার বর্ণনা করিতে হইয়াছে : কিন্তু প্রত্যেক বর্ণনাটিই তাষায়, ভাবে রক্ষা করিয়া লেখাটিকে বরাবর সতেজ রাখিয়া গিয়াছে। আমরা বর্ষার দেশে, বর্ষ-কবিদের দেশে বইখানি সাদরে অভিনন্দিত করিয়া লইলাম । উপর তেমন সুবিচার বিশেষ করিয়া মুদ্রাকরপ্রমাদ বড় বেশী থাকিয়। দুঃখের মধ্যে প্রকাশক বইখানির করেন নাই । গিয়াছে। ঐবিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়