জ্যৈষ্ঠ भूप्नौ ২৬৭ বাপের তহবিল ভেঙে লম্বা দিয়েছিল। অনেক ঘুরতে ঘুরতে ও গিয়ে পড়েছিল ওয়ালটেয়ার। ও এখানে পৌছে একেবারে আশ্চৰ্য্য হয়ে গেল । কঁাড়ি কঁাড়ি পাথরের ঢিবি, সমুদ্রের নীল জল তার উপর মানুষগুলো এবং তাদের ভাষা । বহু পৰ্য্যালোচনা ক’রে ও স্থির করেছে, এরা নিশ্চয়ই তখনকার লোক এবং শ্রীরামচন্দ্রের বিষয় সবই জানে। এদের সঙ্গে ওর আলাপ করবার বিশেষ আগ্রহ জন্মলি। কতভাবে কত প্রশ্ন ক’রে পাথর আর নীল জলের খবর পাবার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু সূৰ্ব্বোধা কড় মড়ে ভাষায় ওর ধারণ নিশ্চিত হ’ল যে, এইখান থেকেই সেতুবন্ধ আরম্ভ হয়েছিল, কালে কালে ভেঙে চুরে এইমাত্র অবশিষ্ট আছে —এই কথাটা যতই পুরনো হ’ত ততবার একটু ক’রে রঙ লাগিয়ে নিত। এমনি বহুদিন রঙ লাগাবার পর শোনা গেল যে, যেমাহুষদের ও সমুদ্রের ধারে দেখে এসেছে তারা কিচমিচ, করে আর তাদের বিঘৎখানেক লেজও বর্তমান। শ্রোতার ভাবে গদগদ হয়ে মুদীকেই বার-বার প্রণাম ক'রে ফেলে। এমনি ক’রে রাত ন’টার গাড়ী যাওয়ার শব্দ শুনতে নাপাওয়া পৰ্য্যন্ত ওদের আসর ভাঙত না। মুদী-বউ ছেলেমেয়েকে থাইয়ে ঘুম পাড়িয়েছে, সে অনেকক্ষণ হ’ল । দাওয়ার অন্ধকারে পা ছড়িয়ে বসে সে ছেড়া ন্যাকৃড়ার ফাল পায়ের উপর পেতে স’লতে পাকাচ্ছে। আর কত কি ভাবছে অন্ধকারের পানে চেয়ে । সলতে পাকানো ওর শেষ হয়ে যায় তবুও মুদী ফেরে না। বউ দাওয়ায় আঁচল বিছিয়ে শুয়ে আকাশের তারাগুলোর পানে চেয়ে রইল। তারও কতক্ষণ পরে মুদী এল। বউ ব্যস্ত হয়ে উঠল। তাড়াতাড়ি উঠে জলের ঘটি এগিয়ে দিলে, গামছা হাতে তুলে দিলে, পিড়ে পেতে তার স্বমুখে জল ছিটোলে ; তারপর ভাত বেড়ে আনলে । মুদী ভাত পেতে থেতেও ভাবছে, কত পয়দা জমল ! কোন কোন জমি কিন্বে, কটা গরু কিন্বে। মনে মনে হিসেব করলে মেয়েটার বিয়েতে কত অবধি খরচ করবে, তাকে গৌরীদান করবে, না বেশী বয়সে বিয়ে দেবে। এমনি সব কত কি। কাজেই খাওয়ার সময়ট সম্পূর্ণ নি:শব । বউও মুনীর এই রকম ভাবগতিক দেখে মনে মনে কষ্ট পেয়ে চুপ হয়ে গেছে। কোন কথাই সে নিজে থেকে কয় ন; } খাওয়ার পরও মুদী তেমনি যন্ত্রের মত দুটাে পান তুলে মুখে দিলে। তারপর ভূযোমাখ লণ্ঠনটা হাতে নিয়ে, লাঠিটা বগলে চেপে ও আবার বেরিয়ে পড়ল। রাত্তিরট ওকে দোকালেই শুতে হয়, নইলে জিনিষপত্র চুরি যাবার उभूः । বউ পিছনে পিছনে এল, দরজা বন্ধ করতে। দরজার গায়ে গা রেখে ও চুপ করে দাড়িয়ে দেখলে মুদী চলে যাচ্ছে। এক একবার মনে হয়, ডাকি। কিন্তু ডাক আর কিছুতেই গল দিয়ে বার হয় না। গাছের আড়াল থেকে আড়ালে যেতে যেতে শেষে মুদীর আলো আর দেখা যায় না। তবুও বউ ওইদিকে চেয়ে রইল। চোখ দিয়ে জলের ফোটা নামূল, কিন্তু ঝরে পড়ল না। গণ্ডের উপর স্থির হয়ে রইল, তাতে তারার আলো ঝিকমিক্ করতে লাগল।