বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀԳ8 S99ఉు লিথিয় থাকে। তদুপরি তাহার এই চতুৰ্ব্বিংশ বংসরের জীবনে কোনও নিঃসম্পর্কিত তরুণীর এতখানি নিকট সান্নিধ্য ইতিপূর্বে আর কখনও সে লাভ করে নাই । আশৈশব যে-সমাজে সে বৰ্দ্ধিত হইয়াছে তাহ শোভাসম্পদহীন পুরুষের সমাজ, লক্ষ্মীস্বরূপিণী নারীর সেখানে তান্তরালবর্কিনী । সে শৈশবে মাতৃহীন, বৃদ্ধ পিতার একমাত্র পুত্র। ষোড়শ বর্ষ বয়ঃক্রম উত্তীর্ণ হইবার পর নিজের দূর ভবিষ্যতের জীবনসঙ্গিনীরূপে সে একটি বিদ্যুৎবর্ণ যুথিকাপেলবা ক্ষীণাঙ্গিনী বালিকামূৰ্বি কল্পনা করিত মাত্র ; কখনও তাহার অপরিমিত কেশরাজি বেণীবদ্ধ ইয়া পিঠে দুলিত, কখনও ব| বসার মেঘাড়ম্বরের মত গ্রীবামল ছাইয়| অসম্বদ্ধ ভাবে বিরাজ করিত । আজ সহসা অদৃষ্টপূৰ্ব্বা অষ্টাদশীর বিশিষ্ট কবরীরচন। তাহার পূৰ্ব্বেকার সেক্ট সৌন্দর্য্যস্বপ্নগুলির জগতে বিষম একটা বিপ্লব বাধাইয়। দিল । যে বিপ্লবের আরম্ভ এমন মোহময় তাহার শেষ কোথায় জানিবার জন্য তাহার তা গ্রহের আর সীমা রহিল না । কিন্তু রাত্রি যতই বহিয়া চলিল সুপ্তিব্যাপ্ত রহস্যময় অসীম নিস্তব্ধতার মধ্যে এই অপরিচিতার এমন একান্ত সান্নিধ্যে ক্রমেই বেশী করিয়া সে নিজেকে বিপন্নও বোধ করিতে লাগিল। অকারণেই ক্রমাগত তাহার মনে হইতে লাগিল, তরুণী যদিও একবারও মুখ তুলিয়৷ চাহে নাই, অজয় যে জাগিয়া আছে তাহণ সে নিঃসন্দেহ বুঝিতে পারিতেছে ; কি সে মনে করিতেছে ? ইংরেজীতে যে বস্তুকে শিভালরি বলা হয়, বাংলা দেশের কোনও তরুণী কোনও অপরিচিত তরুণের নিকট হইতে তাহ প্রত্যাশ করে না, প্রত্যাশ যে করিতে হয় তাহাও জানে না । অজয় যে তাহার প্রতি একমাত্র সহানুভূতি বশতঃই ঘুমাইতে পারে না, ইহা কি একবারও তাহার মনে হইবে ? সেই সঙ্গে ইহাও সে ভাবিল যে, এতক্ষণ ধরিয়া এই মেয়েটির সম্বন্ধে মনে মনে সে যাহা অনুভব করিয়াছে তাহা,সহানুভূতিই ত কেবল নহে। কিন্তু সে যে কিছু অপরাধ করিতেছে কোনও অচিন্তিত কারণে ইহাও সে মনে করিতে পারিল না । বাহিরে যাহাকে অপরাধ বুলিয়া জানি, মনের মধ্যে সে যখন মনোহরণ রূপ লইয়া দেখা দেয় তখন তাহার মার্জনপত্র সে সঙ্গে লইয়াই আসে । অজয়ের আবাল্য-সঞ্চিত সমস্ত সংস্কারের শাসনকে হার মানাইয়া দিতে পারে তরুণীর সম্বন্ধে তাহার মনোভাবের মধ্যে সেই অপরিমেয় মোহময়ত ছিল । কিন্তু যাহা অনসুশোচনায় করা যায় তাহাই অসঙ্কোচে করিবার সামর্থ্য সকলের থাকে না। তরুণী কিছুই বুঝিতেছে না, বারবার নিজেকে তাহা বুঝাইতে চেষ্ট৷ করা সত্ত্বেও অজয় ক্রমেই বেশী করিয়া অস্বস্তি বোধ করিতে লাগিল। জ্যোৎস্না উঠিবার সময় যতই নিকটবৰ্ত্তী হইতে লাগিল, অস্বস্তি ততই বাড়িয়া চলিল। এতক্ষণ যে-মুহূৰ্ত্তটিকে মনের সমস্ত শক্তি দিয়া সে কামনা করিতেছিল এখন তাহারই আসন্নতা তাহাকে ভয়াতুর করিয়া তুলিল । কেন ভয় তাহ সে জানে না, কেবল অস্পষ্ট করিয়া অনুভব করিল, যেন অন্ধকারের মধ্যে এতক্ষণ তাহার আত্মরক্ষা করিবার অবকাশ ছিল, এবার কোথাও কিছু আর রাখাঢাকা থাকিবে না। যে-কথাকে মনের গোপনতায় নিজেও নিজের কাছে এতক্ষণ স্বীকার করে নাই, জ্যোৎস্নালোকে তাহা একেবারে অনাবৃত হইয়া এবার ধরা পড়িয়া যাইবে ! পূৰ্ব্বাকাশে অস্ফুট জ্যোতিদীপ্তির বিকাশ হইবা-মাত্রই সে আর দ্বিতীয় চিন্তা না করিয়া শয্য। ছাড়িয়া উঠিয়া পড়িল । স্থির করিল, সরিষাক্ষেত্রের মধ্য দিয়া, অশ্বখ গাছের তলা বাহিয়, দূরে বক্রদেহ ক্রুদ্ধ মার্জারের মত অৰ্দ্ধচন্দ্রাকৃতি কালে ঐ কাঠের পুলটা পার হইয়া, বহুদূরের তরুবন-সমাচ্ছন্ন গ্রামপ্রান্ত ছুইয়া ঘুরিয়া আসিবে । ততক্ষণে রাত্রি প্রভাত হইবে, ফিরিয়া আসিয়া দিবসের আলোতে কৰ্ম্মকোলাহলের মধ্যে বহু লোকের ভিড়ে লুকাইয়া আত্মরক্ষা করিয়া অজ্ঞাতকুলশীলার মুখখানিকে নিজের স্বল্পচারিণী মানসীর মুখটির সঙ্গে মিলাইয় দেখিয়া লইবে । শেষরাত্রির দিকে একটু শীত পড়িয়া আসিতেছিল, একট চাদরকে ভাল করিয়া গায়ে জড়াইয়া নি:শব্দ পদসঞ্চারে সে নদীতীরের সেই নিভৃত মাধুর্য্যলোক হইতে পলাইল । নদীর দিক্ হইতে তখন জলকরমুরভিত ৰিলি