বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ কি আছে। বুঝিবার চেষ্টামাত্রও করিল না। লক্ষ্য করিল না, একটুখানি গোপন অশ্রুর অবশেষ এখনও একটি চোখের কোণে লিপ্ত হইয়া আছে। কেবল এইটুকু মাত্র অনুভব করিল, এই মানুষটির মধ্যে বিধাতা নিজের কোনও বিশেষ একটি রূপকে এমন পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করিয়াছেন, যে, তাহ হইতেও বেশী আর-কিছু আশা করিবার কথা কল্পনাতে আসে না। মুখখানিকে সৌন্দর্য্যের মাপকাঠি লইয়া বিচার করিলে নিঃসন্দেহ কতকগুলি ক্রটি বাহির হইবে। দেহের বর্ণ শ্যাম, নাসিক সমস্ত মুখটির তুলনায় যেন ঈষৎ একটু ছোট ; কিন্তু দেখিবামাত্র ইহাকে অকারণেই চিরপরিচিত বলিয়া মনে হয়, মাথা নত হইয় আসে, আর মন বলিতে থাকে, তুমি স্বন্দর হয়ত নও, হয়ত নওই, কিন্তু তুমি মনোরম, তুমি মনোরম, তুমি মনোরম! একটু চেষ্টা করিয়া হাসিয়া বলিল, “আপনার ভয় করে না ?” প্রভাও হাসিয়াই বলিল, “বাবাকে তাই ব’লে ভয় পাই না ।” অজয় বিজ্ঞতার ভাণ করিয়া বলিল, “বাইরের পৃথিবীটাকে ত জানেন না, সেখানে ভয় করবার মত অনেক-কিছুই আছে।” প্রভ কহিল, “জানি না, দেখলে বলতে পারি। কিন্তু আমার মনে হয় না, দাদা যেখানে ভয় পায় না আমি ভয় পাব।” স্বভদ্র কহিল, “অজয়বাবুকে তোর ভয় করছে না ?” প্রভা অজয়ের দিকে চকিত দৃষ্টিতে চাহিয়া আঁচলে মুখ চাপিয়া একটু হাসিল, কহিল, “উহু।” “সকালে তাহলে পালিয়েছিলি কেন ?" “পালাব না ত কি ? ভয় পেয়ে ত আর পালাই নি।” স্বভদ্র কহিল, “আচ্ছ, তুই ত খাসনি এখনও, খেগে য, এবারে ফিরবার সময় তোর জন্যে একটা ভিক্টোরিয়া ক্রস জোগাড় করে আনৃব।” কাপড়ের ঢাকাটা খুলিয়া ফেলিয়া প্রভা স্বভত্রের একটা হুটকেস খুলিল, সেটার মধ্যে তার বইগুলি সাজাইয়া রাখিয়া “তোমার স্থর টুর রাখবার ছোট চামড়ার শৃঙ্খল ২৮৩ বাক্সটা ভুলুর কাছে আছে, পাঠিয়ে দিচ্ছি।” বলিয়া বাহির হইয়া গেল। অজয় নমস্কার করিয়াছিল, প্রতিনমস্কার করার বদলে সে হাসিয়া ফেলিল । দেখিতে দেখিতে যাত্রার সময় আসিয়া পড়িল । এতক্ষণ অবধি সকলে অজয়কে লইয়াই ব্যস্ত ছিল, কিন্তু হঠাৎ এই সময় সে একেবারে দৃষ্টির অগোচর হইয়া গেল। স্বভদ্র কি কি খাইতে ভালবাসে, আচার, মোরব্ব, বড়ি, সরুধানের চিড়া, মুগের লাডু, সে-সমস্তের জোগাড় হইতে লাগিল । তাহার ছোট ছোট ভাইবোনর দীর্ঘকালের মত দাদাকে বিদায় দিবার আগে তাহার চতুর্দিক ঘিরিয়া দাড়াইয়া ক্ষুধিত দৃষ্টিতে তাহাকে দেখিয়া লইতে লাগিল। সুদর্শন সংবাদ দিল, দিদি র্কাদিতেছে। চাকরের কলরব করিয়া সুভদ্রের জিনিষ বাধাছাদা করিতে লাগিল । গুছাইবার যাহা তাহার সমস্ত গোছগাছ করিয়া তবেই প্রভার কাদিবার অবসর জুটিয়াছে। সুভদ্রের মাতা চোখ মুছিতে মুছিতে সব-কিছুর তত্ত্বাবধান করিতেছেন। তাহার পিতার মুখ ছায়াচ্ছন্ন গম্ভীর। পাড়াপ্রতিবাসীরা অনেকে আসিয়াছে, অজয় সকলের মধ্যে দাড়াইয়া কেবলই তাহাদের পথে বাধা হইতে লাগিল । তাহার দিকে ইহার পর আর কেহ ফিরিয়াও দেখিল না । সেই পীড়িত মেয়েটির স্বামী সংবাদ পাইয়া ছুটিয়া আসিয়াছিল। ভয়াৰ্ত্ত কাতর মুখে কহিল, “দুপুর অবধি ত বেশ ভালই ছিল দাদাবাবু, ঘণ্টাখানেক হল আবার বাড়াবাড়ি স্বরু হয়েছে। সেই ওষুদটা আধঘণ্টা পর পর দিচ্ছি। কম্‌ছে বলে মনে ত হচ্ছে না।” কখন কোন অবস্থায় কি করিতে হইবে সে-বিষয়ে বিশদ ভাবে উপদেশ দিয়া সুভদ্র প্রায় জোর করিয়াই তাহাকে ফিরিয়া পাঠাইল । অজয়কে কহিল, “চ’লে যেতে হচ্ছে, কিন্তু কি করব বলুন। যেখানে যাব সেখানেই ত এই অবস্থা, তাই মায়াকাটাবার সময় হ’লেই কাটিয়ে ফেলি। যখন যেখানে খাকি, যতটুকু করতে পারি করি, দুরে গেলে আর মনে রাখি না ।” সেদিন সকাল-সকাল ষ্টীমারের শিট শুনিতে পাওয়া