বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ বিবিধ প্রসঙ্গ—বঙ্গের প্রতি অবিচারের উপর অপমান వహిస్తె টাকা পাঠাইতে হইয়াছিল। ইহা ছাড়, সে যুগে ইংরেজরা ভারতবর্ষে যে বহুব্যয়সাধ্য দেশজয় দ্বার রাজ্যবিস্তারে প্রবৃত্ত ছিল তাহার খরচ বাংলাই জোগাইত। অনেক ইংরেজের লেখা বহিতে এই তথ্যের উল্লেখ আছে । এফ. এইচ. স্ক্রাইন সাহেব বাংলার একজন সিবিলিয়ান ছিলেন। তিনি “ইণ্ডিয়াজ হোপ” ( “ভারতের আশা” ) নামক বহিতে এই কথা বলিয়াছেন । ইহ মনে রাখিতে হইবে, সেকালে বাংলা প্রেসিডেন্সী বলিতে খাস বাংলা এবং বিহার উড়িষ্যাও বুঝাইত । কিন্তু এখনকার ন্যায় তখনও খাস বাংলাই সৰ্ব্বাপেক্ষ জনবহুল এবং বাজস্ব-সংগ্রহের প্রধান স্থান ছিল । ইংরেজদের দ্বারা সম্পাদিত ও লিখিত ১৮৪৫ সালের কলিকাতা রিভিউ পত্রিকার জাতুয়ারী সংখ্যায় (The Calcutta Review, vol. iii, January 1845, pp. 167– 168 ) লিখিত হইয়াছিল — “সমগ্র সাম্রাজ্যের মধ্যে বাংলা বিহার উড়িষ্যাই সৰ্ব্বাপেক্ষ ধনশালী ও রাজস্বপ্রাপ্তির উপায় । গঙ্গার উপত্যক হইতেই গবন্মেন্টের উদৃত্ত থাকে ; এখান হইতেই যুদ্ধের টাকা সংগৃহীত হয় এবং গবন্মেটি স্বকৃত ঋণ পরিশোধ করিতে সমর্থ হয়। এই গাঙ্গেয় উপত্যকার উপর ও নিম্ন অংশের মধ্যে নিম্ন অংশই রাজকীয় কোসাগরের প্রধান অবলম্বন । ইহা যদিও ভারতবর্ষের ইংরেজদের অধিকৃত ভূখণ্ডের এক-দশমাংশ অপেক্ষা বেশী নহে, তথাপি এখান হইতে ঐ সমগ্র ভূখণ্ডের মোট রাজস্বের দুই-পঞ্চমাংশ অর্থাং রকম ছয় আনার উপর আদায় হয় ।” - যে-বাংলা দেশ গবন্মেণকে এত টাকা জোগাইত, সেই বাংলা দেশে প্রভূত রেলের আয়, কলকারখানার আয়, বাণিজ্যের আয়, বন্দরের আয়, ইনকাম ট্যাক্স ইত্যাদি তখনকার চেয়ে খুব বাড়া সত্বেও, এখন কিনা কৃত্রিম উপায় অবলম্বন দ্বারা বাংলাকে দেউলিয়া ও ভিক্ষুক সাজান হইতেছে! এবং বাংলা দেশের লোকেরা এবং সংবাদপত্রসমূহ ও নেতৃবর্গ এ বিষয়ে যথেষ্ট আন্দোলন করিতেছেন না। ভবিষ্যতে যাহাতে, আবশ্যক হইলে, ভারতীয় ব্যবস্থাপক সভায় বঙ্গের লোকসংখ্যার অনুপাতে বহুসংখ্যক বাঙালী প্রতিনিধি এই অবিচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দলবদ্ধ প্রতিবাদ চালাইতে পারেন, সেরূপ ন্যায্যসংখ্যক প্রতিনিধি পাইবার জন্যও বঙ্গের পক্ষ হইতে প্রবল আন্দোলন হইতেছে না। slot; widos (Victor Jacquemont) ato প্রসিদ্ধ ফরাসী পৰ্য্যটক ও বৈজ্ঞানিক রামমোহন রায়ের সমকালে কিছু দিন ভারতবর্ষে ছিলেন । তিনি তখন লিখিয়ছিলেন :– “ইংরেজরা গত পঞ্চাশ বৎসরে বাংলা ও বিহার ছাড়াইয়া, কর্ণেল ক্লাইবের স্থাপিত সাম্রাজ্য ছাড়াইয়া, তাহীদের রাজ্যে যাহ যোগ করিয়াছে, তাহীতে কেবল তাহাদের রাজস্ব কমিয়াছে। নূতন অধিকৃত একটি প্রদেশও তাহার গবন্মেন্টের এবং তথায় ইংরেজ অধিকার বজায় রাখিবার জন্য আবশ্যক সৈন্যদলের খরচ দিতে পারে না । মাম্রাজ প্রেসিডেন্সীর অন্তর্গত সব জায়গাগুলির আয়ের ও বায়ের সমষ্টি ধরিলে প্রতিবৎসরই তথায় ঘাট্‌তি পড়ে ; বোম্বাইয়ের নিজের খরচ চালাইবার সামর্থ্য আরও কম। সম্প্রতি কলিকাতা প্রেসিডেন্সীর সহিত যুক্ত উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ( এক্ষণে এলাহাবাদ ) এবং বুন্দেলখণ্ড, আগ্র, দিল্লী প্রভৃতির ঘাটতি পূরণ করিয়া ংলা ও বিহারের, প্রধানতঃ বাংলার, রাজস্বই উক্ত দুটি অপ্রধান ( “secondary” ) রাষ্ট্রের ( অর্থাৎ মান্দ্রাজ ও বোম্বাইয়ের ) রাজস্ব-বিভাগকে ঋণমুক্ত রাখে ।” কলিকাতায় কয়েক বৎসর পূৰ্ব্বে ইংরেজ স্বত্বাধিকারীর ইণ্ডিয়ান ডেলী নিউস্ নামক একটি দৈনিক কাগজ ছিল । ইহ উঠিয়া গেলে ইহার প্রেস কিনিয়া লইয়া ফরওয়ার্ড স্থাপিত হয়। ১৯১২ সালে ইহার একটি সংখ্যায় ভারতসরকারের এক বৎসরের হিসাব সম্বন্ধে লিখিত হইয়াছিল— “ভারত-গবন্মেন্টের ব্যয়নিৰ্ব্বাহের নিমিত্ত বাংলা দেশ বোম্বাই ও মান্দ্রাজের দ্বিগুণ টাকা দিয়াছে, এবং পূর্ববঙ্গ, আগ্রা-অযোধ্যা, পঞ্জাব, ব্রহ্মদেশ ও মধ্যপ্রদেশ সকলে মিলিয়া যত দিয়াছে তাহা অপেক্ষ বেশী দিয়াছে।” একথা এখনও সত্য, যে, বঙ্গদেশে সংগৃহীত যে পরিমাণ রাজস্ব ভারত-গবন্মেটি পান, অন্য কোন প্রদেশে সংগৃহীত রাজস্ব হইতে তাহ অপেক্ষা বেশী পুন না।