পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাত্ৰ হস্লিদাস থেমে গেল, অবাক হয়ে চাইলে । স্বহং একটু লজ্জিত হয়ে, ধীরে বললে,-হরিদাস, তুমি বর্ষায় অম্ভ যে-কোন গান গাইতে পার, কিন্তু ও গানটা গেয়ে না, ও গান শুনলে আমার— আর সে বলতে পারলে না, চুপ করে চেয়ারে বসে পড়ল। তার মুখ শুকুনে, হাত কঁপিছে। আমি বললাম,—কি ? কোন স্মৃতি বুঝি ও গানের সঙ্গে জড়ান। তার মুখের ভাব দেখে হরিদাস বললে,— আমি জানতুম না, আমায় ক্ষমা কর, আর গাইব না ! সুপ্রিয় বলে উঠল,--পেছনে একটা ইতিহাস § আছে নিশ্চয়, গল্পটা শুনতে পারি কি ? বল, সন্ধ্যাট জম্বে ভাল । সুহৃৎ স্নান হেসে বললে,—কফি আনতে বল দেখি । কফি পানের পর আমরা সবাই সুহৃৎকে ঘিরে বসলুম। সে তার সিগারটা ছাই-দানিতে ঠেকিয়ে রেখে বলতে আরম্ভ করলে, —বড়দিনের ছুটিতে ট্রেনে দিল্লী যাচ্ছিলাম। পাটনা পার হতেই সকাল থেকে বিষ্টি সুরু হ’ল । পশ্চিমের দিকে বেশ শীত পাবে আশা করেছিলুম বিষ্টি পাব ভাবিনি। অষ্ট্রিয়া থেকে দেশে ফিরে বাংলার বাইরে আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে উঠতে পারিনি, সেজন্য কনসেসন আরম্ভ হ’তেই কলিকাতা থেকে বার হয়েছিলাম প্রফুল্লচিত্তে, বহুদিন পরে দিল্লীর আত্মীয়বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে মনে ভেবে । কিন্তু পথের বৃষ্টিভেজা দিনের কালো রূপের দিকে চেয়ে মন ভারী হয়ে গেল। আকাশের এমন বিচ্ছিরি কালো রং শীতের লণ্ডনের আকাশে কোন কোন দিন দেখেছি, তাছাড়া আর কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়ে না; এ যেন চঞ্চলগতি ইঞ্জিনের ধোদ্বার স্থূগুলী জমে য় স্তরের পর স্তর ঘন অন্ধকার স্বষ্টি করেছে" আকাশ ছড়িয়ে দিকচক্রবাল জুড়ে লে অন্ধকাষ্ট্র"ঙ্ক ঘেরাটােপের মত পথঘাট মাঠ যম ঘিরে থাছে "প্রাপ্তর-. ভর ঝোড়ে হাওয়ার মা দি খংশিখৰে তই . " . . हैद्रा नेड অগ্রসর হতে লাগল ততই মনে হ’ল, অন্ধকারের এ সঘন আবরণ ধীরে ধীরে কাছে আরও কাছে এগিয়ে এসে চলন্ত ট্রেনকে চেপে জড়িয়ে ধরবে ; তারপর ইঞ্জিনের শ্বাসরোধ হয়ে যাবে, এক আশাহীন অন্ধ অন্ধকারের গর্তে দিশহারা হয়ে আমরা হাহাকার করব, কিন্তু বাতাসের হতাশ্বাসে আমাদের অাৰ্ত্তনাদ আমরা পরস্পরেও শুনতে পাব না। সারাদিন সারাপথ সেজন্য আকাশের দিকে চাইনি, একথান ইতালীয়ান নভেলে মুখ গুজে পড়ে ছিলাম। মাঝে মাঝে বিষ্টির ঝাপটা জানলার কাঠের উপর করাঘাত করেছিল অভিমানিনী নারীর মত । এলাহাবাদের কাছাকাছি আসতে বিকেল হয়ে এল, মনটা কেমন চঞ্চল হয়ে উঠল, ভূযাকালিদিয়ে লেপা শীতসন্ধ্যার আকাশ বড় করুণ মনে হ’ল ; মনে হ’ল, কোন বিরহিণী প্রতীক্ষিত প্রিয়ের পথের দিকে চেয়ে ক্লাস্ত বিনিদ্র নয়নে রাতের পর রাত যে-সব প্রদীপের পর প্রদীপ জালিয়েছে তাদের শিখ হতে কাজললতার জমান ভূষী এ আকাশভরা অন্ধকারে ছড়িয়ে গেছে ; মিলনের লগ্নে নয়নের কোণে যে কাজল জ্বল-জ্বল করত, তা জাজ শূন্য আকাশের সজলতায় মিশিয়ে গেছে। ট্রেন এলাহাবাদ ষ্টেশনে ঢুকতেই বুকের রক্ত দুলে উঠল। তাই ত! আশ্চৰ্য্য ! মনেই হয় নি ! ইরার কথা মনেই পড়েনি । ইরা ও এলাহাবাদ আমার অস্তরে এক তারে বাধা । ট্রেনে এলাহাবাদ পার হয়ে গেছি অথচ নেমে ইরার সঙ্গে দেখা করে যাইনি, জীবনে এমন কখনও ঘটেনি। কুলিকে ডেকে বেডিং স্কটকেশ নামিয়ে তাড়াতাড়ি ষ্টেশনে নেমে পড়লাম। তাড়াতাড়ি একটা টাঙাতে গিয়ে উঠে ষসলাম। মনে পড়ল, যতবার এলাহাবাদ aণনে নেমেছি, ইরা নিজে ষ্টেশনে এসে আমাকে নিয়ে গৈছে তাদের মোটরে । টাঙা ছোটাতে বলে দিলাম । বিষ্ট খেয়েছে, কিন্তু ঠাণ্ডা ক্ষনক্ষনে বাতাস বইছে, গুঞ্জারনেটের ষোড়ামগুলো এটে দিয়ে আকাশের দিকে চাইলাম, আখাঙ্গ একটু পরিষ্কার হয়ে আসছে, ভারী