পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৫২ S99ఉు ত সে উল্লেখ করিতে পারে না। প্রতাপের সমস্ত আচরণেই যামিনীর আশা গাঢ়তর হয়, কিন্তু আশ। ত চিরকালই কুহকিনী । নিরালায় আলাপ করিবার পানিকট অন্ততঃ সুবিধা পাইলে জিনিষট সহজ হইয়া আসিত হয়ত, কিন্তু কি করিয়া তাহারই বা ব্যবস্থা করিবে, তাহাও যামিনী স্থির করিতে পারে না । উপলক্ষ্য সৃষ্টি করিয়। সে দু-একবার প্রতাপকে নিমন্ত্রণ করিতে পারে, কিন্তু তাহ কি লোকের চক্ষে বড় বেশী করিয়া পড়িবে না ? সম্ভাবনাতেই যামিনী শিহরিয়া উঠিল, লোকের কথা জিনিষটিকে সে যমের মত ভয় করিত। চিঠিপত্র লেখা যায়, কিন্তু তাহারই বা উপলক্ষা কই । প্রতাপের মনোভাব যামিনী যদি ভুলই বুঝিয় থাকে, তাহা হইলে নিজের প্রগলভতার লজ্জ। সে রাখিবে কোথায় ? কিন্তু নিজের হৃদয়াবেগের নিকট নিজেই সে পরাস্ত হইতে বসিয়াছিল। এত অশাস্তি, এত দুঃখ কেন তাহার অদূঃে ? ভগবান কি তাহাকে পথ দেখাইয়া দিতে পারেন না ? কোন দিক সে রাখিবে ? পিতামাতার মনে আঘাত দিয়া নিজের হৃদয়াবেগের অতুসরণ করিবে না নিজেকে বঞ্চিত পীড়িত করির আত্মীয়স্বজনের ইচ্ছার কাছে নিজের হৃদয়কে বলি দিবে ? খানিকক্ষণ অস্থির ভাবে ঘূরিয় বেড়াইয়ু, সে টেবিলের কাছে চেয়ার টানিয়া বসিয়া পড়িল । চিঠির কাগজের প্যাড় এবং কলম বাহির করিয়৷ মাকে চিঠি লিখিতে আরম্ভ করিল। কিছুই গুছাইয়া লিখিতে পারে না, মনটা এমন বিচলিত হইয়া আছে । কোনোমতে তিনি ষে কয়টা কথা জানিতে চাহিয়াছিলেন, তাহার উত্তর দিয়া সে চিঠি শেষ করিল । খামের ভিতর কাগজ ঢুকাইয়। দিয়া বেশ গোট গোটা করিয়া শিরোনাম লিখিল । তাহার পর খানিকক্ষণ এ-বই সে-বই লইয়া নাড়াচাড়। করিল, কোনোখানা খুলিয়া পড়িবার উৎসাহ কিছুতেই সঞ্চয় করিতে পারিল না । মনে মনে ভাবিল, “এই রকম হ’লেই, আমার পরীক্ষা পাস করা হয়েছে আর কি ?” ম। তাহাকে রাখিয়া গেলেন পড়াশুনার সুবিধার জন্য, কি সুবিধাই না তাহার হইতেছে! ইহার চেয়ে তাহার {. সঙ্গে চলিয়া গেলেই কি ভাল হইত না ? মনটা কিন্তু সায় দিল না । কিছুক্ষণ শুধু শুধু বসিয়া থাকিয়, আবার সে চিঠির কাগজের প্যাডট বাহির করিল। একমনে খানিকক্ষণ লিখিল । এই তাছার প্রথম প্রণয়ুলিপি, কিন্তু ইহা কোনোদিন কাহারও নিকটে সে পাঠাইতে পারিবে না । চিঠিখান শেষ করিয়। আবার সমস্তটা পাঠ করিল। নির্জন ঘরে একলা বসিয়াই তাহার লজ্জা করিতে লাগিল, চিঠিখান একবার ছিড়িয়া ফেলিতে গেল। কিন্তু প্রাণ ধরিয়া ছিড়িতে পারিল না, কাগজখানা প্যাড় হইতে খুলিয়া লইয়া দেরাজের সব কাগজপত্রের তলায় লুকাইয় রাখিল । তাহাব পর আবার উঠিয়া গিয়া জানালার ধারে দাড়াইয় রহিল । মনের ভিতর কত ভাবের তরঙ্গ যে আছিাড় থাক্টতে লাগিল, তাহার ঠিকানা নাই । যামিনীর এমন কেত বন্ধু নাই, যাহার নিকট এ কথা সে বলিতে পাবে। বেদনার ভারে হৃদয় মেন ফাটিয়া পড়িতে চায় । প্রতাপ কি কোনোদিন মুখ ফুটিয়া কিছু বলিবে না ? হঠাৎ অস্ফুটন্সরে বলিল, “ন, তার টাকা দিয়ে দিই, হয়ত কত অসুবিধে হচ্ছে । দরজীকে টাকা পরে দিলে ৭ চলবে ।’ আবার সে দেরাজের কাছে ফিরিয়া গেল । আবার চিঠির কাগজ, খাম বাহির করিল। - এবার আর প্রণয়লিপি নয়। সাধারণ একটি ক্ষুদ্র চিঠি । প্রতাপকে বইগুলি কিনিয়! দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ দিয়া যামিনী নোটু দুইখানি নিপুণভাবে ভাজ করিয়া চিঠির ভিতর প্রবেশ করাইয়। তবে থামে বন্ধ করিল । বাহির হইতে দেখিয়া বুঝিবার জো নাই মে, খামের ভিতর চিঠি ছাড়া আর কিছু আছে। বসিয়া বসিয়া অনেকক্ষণ ধরিয়া খামের উপর প্রতাপের নাম লিখিল । ঠিকানা কিছু লিখিল না, প্রতাপ যখন বিকালে মিহিরকে পড়াইতে আসিবে, তখন চাকর দিয়া তাহার কাছে পাঠাইয়া দিবে। একটু কিছু করিতে পাইয় যেন যামিনীর মনটা শাস্ত হইল, সে তখন রান্নাঘরের তদারক করিতে একবার নীচে নামিয়া গেল । মিহিরের স্কুলে যাওয়ার আগে রোজ একট-ন-একটা