বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাদ্র - পাহাড় এবার খুব উচু এবং চড়াইয়ের পথ সঙ্কীর্ণ। দূরে নীচের উপত্যকায় কুয়াসার ভিতর দিয়ে আবছায় একটা হ্রদ দেখা যাচ্ছিল । সেট নোনা জলের এবং তার পাশের জমিও নোনা জলায় ভৰ্ত্তি। সামনে পাহাড়ের পর পাহাড় চলে গেছে, সৰ্ব্বোক্ষে তুষারমণ্ডিত “দুষ্টরজান” শিখর ( দুষ্টর = সংস্কৃত দুহিত ) রোদের আলোয় ঝকঝক্ করছে। এই দেখতে দেখতে প্রায় ১০০০ ফুট পাহাড় পার হয়ে 'কোটালে কামারার’ ঘাট দিয়ে আমরা পৰ্ব্বতশ্রেণী পার হলাম। পার হয়ে ছোট পাহাড় উপত্যক ইত্যাদি ডিঙিয়ে আরও কিছুক্ষণ যাবার পর দরে পাহাড়-ঘেরা সুন্দর গাছে ভর একটি উপত্যক দেখা গেল । সহযাত্রী-শিরাজের বণিকসমিতির সহকারী সম্পাদক ; ইনি কাজেরুণে আমাদের অভ্যর্থনার তত্ত্বাবধান করতে এসেছিলেন—প্রসারিত হাত চালিয়ে সম্মুখ দেখিয়ে বললেন, শিরাজ, । বুশীরের লোকে সবাই বলেছিল শিরাজ বেহেস্ত (স্বর্গ ) । তৃণশপহীন মরুময় পাহাড় মাঠ দেখার পর শিরাজের সবুজ দৃশু সত্যসত্যই স্বর্গের মত দেখাচ্ছিল । 夢 崇 鸚 鸚 আফিম ফুল, নাবৃগিশ ফুল, গম, শাকসব্জী ইত্যাদির ক্ষেত, তার পর উচু দেয়াল-ঘেরা বাগানবাড়ি, রাস্তায় সেপাই-শাস্ত্রীর সার । কবির গাড়ীর সামনে পিছনে অশ্বারোহী সৈনিক, অভ্যর্থনাকারী রাজকৰ্ম্মচারী এবং নাগরিকদের মোটর—এই সবের মধ্যে আমরা শিরাজে প্রবেশ করলাম। শিরাজে প্রথমেই বাগ মহন্মদিয়ে প্রাসাদে খুব ঘটা ক'রে কবিকে নাগরিকদিগের তরফ থেকে অভিনন্দন দেওয়া হ’ল । সেখানে চায়ের বিস্তর আয়োজন, এবং শহরের গণ্যমান্য সকলেই উপস্থিত। খুব আড়ম্বরপূর্ণ কবিত্বের ভাষায় কবিকে দুটি অভিনন্দন দেওয়া হ’ল । কবি ইংরেজীতে উত্তর দিলেন, সেটি পারসীতে অনুবাদ করা হ’ল । তারপর কবিকে গভর্ণরের গাড়ীতে ক’রে এবং আমাদেরও অন্য গাড়ীতে উঠিয়ে গভর্ণরের প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হ’ল, সেখানে ফাস" প্রদেশের গভর্ণর, ( শিরাজ ফাসের রাজধানী ) সমস্ত রাজকৰ্ম্মচারী এবং অনেক বিশিষ্ট দেশী এবং বিদেশী পারস্য-ভ্ৰমণ ዓ›› লোকের সঙ্গে, কবি এবং শ্ৰীযুক্ত ইরাণীকে সদলে স্বাগত এবং অভিনন্দন করলেন । কবি শ্রাস্তফ্লাস্ত হয়ে বিছানা নিলেন। আমরা পথের ধুলা দূর করবার জন্য ব্যস্ত হলাম । 豪 崇 杀 杀 ১৬ই এপ্রিল বেলা একটায় শিরাজ পৌছলাম। সেদিন বেলা আড়াইটায় মহাসমারোহে মধ্যাহ্নভোজন-- কবি অনুপস্থিত--রাত্রে অন্য আর একদল গণ্যমান্ত । নিমন্ত্রিত নিয়ে বিরাট ভোজ । ১৭ই ঐ রকম মধ্যাহ্নভোজন, আবার রাত্রে ভোজ, রাজসিক সমাদরের ঘটায় আমাদের চক্ষুস্থির। খাবার জায়গায় এক একবারে চল্লিশ-পঞ্চাশজন অভ্যাগড, ইউরোপের সেরা দামী রূপে কাচ চীনামাটির তৈজসপত্রে টেবিল ঝকঝঙ্ক করছে। অভ্যাগতের দল রাত্রে ইভনিং ড্রেসে সজ্জিত, দেশী বিদেশী (বিলাতী ) খাদ্য পানীয়ের ছড়াছড়ি, চারিধারে মুসজ্জিত খানসাম বেয়ারা, আদালী, সামরিক পোষাকে সজ্জিত সেপাইশাস্ত্রী, এই সবের চোটে হাপিয়ে যাবার উপক্রম হ’ল । ১৭ই সকালে কবি বিছানায় শুয়ে সামরিক উচ্চকৰ্ম্মচারীদের দর্শন দিলেন । বিকালে সাদীর প্রিয় আহমেদিয়া বাগানের বর্তমান অধিকারী হাজী লাহরী মহাশয় ( ইনি নিজে প্রসিদ্ধ কবি ) চ; খাওয়ালেন। তারপর সাদীর কবর-উদ্যানে কবিকে নাগরিক অভিনন্দন দেওয়া হ’ল, সভাপতি স্বয়ং গভর্ণর । টেহেরাণের রাজতরফ থেকে শ্ৰীযুক্ত ফুরুঘি এবং আরবাব কৈখসরু শাহ রোখ কবিকে অভ্যর্থনা করতে এগিয়ে এসেছিলেন। এই অভিনন্দন-ব্যাপারে শ্ৰীযুক্ত ফুরুঘি আৰ্য্যবংশ এবং আর্য্যসভ্যতার দরুণ পারস্য এবং ভারতের আত্মীয়তা এবং সেই কারণে কবির গৌরবে পারস্যের গৌরব সম্বন্ধে বক্তৃতা দিলেন। এখানে কবিকে সাদীর রচিত একটি প্রাচীন হস্তলিখিত গ্রন্থ উপহার দেওয়া হ’ল । এখানে অসম্ভব ভীড় হয়েছিল । পুলিস হিমসিম খেয়ে শেষে সৈন্যদলের সাহায্যে লোক আটকায় । - পরদিন গভর্ণর কবিকে এবং আমাদের সকলকে হাফেজের কবর দেখাতে নিয়ে গেলেন। সেখানে কবি