পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন যুবতীগণ অনেক সময় বাল্যাবস্থার কথা আলোচনা করে, বৃদ্ধ ব্যক্তিদিগের মুখে পূৰ্ব্বের কথা ছাড়া অন্য কথাই নাই। মুখে যেমন মনেও সেইরূপ । মন সৰ্ব্বদা স্মৃতি লইয়াই নাড়াচাড়া করে। কাল স্মৃতিকে স্নবর্ণ বর্ণে রঞ্জিত করে, মন মুগ্ধ হইয়া অতীতের সেই সকল 4ঙীন চিত্র দেখে । সময়ে সময়ে স্মৃতি কঠোর হইলেও অধিকাংশ স্মৃতিই মধুর, যাহ কঠোর তাহাও কালের অনুলেপনে কোমল হইয়া যায়। শৈশবের স্মৃতিপটে সরল হাস্যপূর্ণ মুখগুলি কেমন পবিত্ৰ নিৰ্ম্মল হইয়া উদ্ভাসিত হয় । যৌবনের উদাম বলদুপিত নিৰ্ভীকাচার স্মরণ করিলে বৃদ্ধের ধমনীতেও শোণিত-স্রোত চঞ্চল হইয়া উঠে। জীবনের শূন্ত কক্ষ স্মৃতি সকল সময় পূর্ণ করিয়া রাখে । - এই স্মৃতি অপহৃত হইলে মাহুষের মন নিতান্তই দরিদ্র হইয়া পড়ে, মনের শূন্ত আগার কি দিয়া পূর্ণ করিবে তাহ ভাবিয়া পায় না। এই অবস্থা স্বাগতার। পূড়াশুনায় তাহার অনেক সময় কাটিত, স্বলোচনা প্রায় তাহার কাছে থাকিতেন, কিন্তু তাঁহাতে তাহার চিত্তের শান্তি হইবে কিরূপে ? স্মৃতির রুদ্ধ স্বারে তাহার মন করাঘাত করিত,কিন্তু সে দ্বার কথনও মুক্ত হইত না,তাহার ভিতর দিয়া কখনও আলোকরশ্মি আসিত না । চৈতন্তলাভ করিয়া স্বাগত প্রশ্ন করিয়াছিল আমি কে, সে কি নিরর্থ ? সে যে কে তাহা ত এখনও জানে না। এ বাড়ি কাহার, হরিনাথ তাহার কে ? তাহার মাতাপিত কে, তাহারা কি কেহই নাই ? ভ্রাতা ভগিনী কেহ নাই ? তাহার শৈশব স্মৃতি কি হইল ? কাহাদের সঙ্গে খেলাধূলা করিত ? সেই কোন গ্রামে কাহার গৃহে উঠিয়া বসিয়া চারিদিকে অপরিচিত মুখ দেখা—তাহাই কি তাহার জীবনের আরম্ভ ? জীবনের নিয়মের এরূপ অদ্ভুত ব্যতিক্রম কেন ঘটবে ? হরিনাথ তাহার আত্মীয় হইলেও তাহাকে ষে পূৰ্ব্বে কোথাও দেখিয়াছিল তাহা ত মনে পড়ে না। সেই গ্রাম ও সেই গৃহ স্বাগতার স্থতির সীমা। তাহার পূৰ্ব্বে সাদা কাগজের মতন, তাহাতে কোথাওঁ কালিকলমের অ চড় নাই। এই স্বল্প কালের গণ্ডীর মধ্যে তাহার স্মৃতি বাধা, তাহার বাহিরে যাইবার কোথাও পথ নাই । স্বাগভী ግ¢¢ মনের এই অবস্থা, তাহার উপর স্বাগতাকে প্রায় একাই থাকিতে হয়। স্বলোচনা ছাড়া কথা কহিবারও লোক নাই। আর থাকিলেই বা কি কথা কহিবে ? নিজের কোন কথা বলিবার নাই, সংসারের সে কিছুই জানে না। বাড়ির বাহিরে বড় একট। যাইত না, কদাচ কখনও বৈকাল বেলা স্থলোচনার সঙ্গে মোটরে করিয়া অল্পক্ষণ ঘুরিয়া আসিত । হরিনাথের অনুশাসন স্বলোচনার স্মরণ ছিল । স্বাগতার মুখে বিষাদের ছায়া ঘনীভূত হইতে লাগিল । ত্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ শু্যামাচরণের কি হইল ? টিল লাগিয়া খামাচরণের শুধু মাথা কাটিয়া গেল না, তাহার কপাল ভাঙিয়া গেল। এতদিন তাহার স্বচ্ছন্দে কাটিয়া যাইতেছিল, ত্রিলোচনের নিকট হইতে শুধু হাতে ফিরিতে হইত না, একট চাকরি পাইবারও আশা হইয়াছিল। হঠাৎ সে পথ বন্ধ হইয়া গেল । শু্যামাচরণ বুঝিতে পারিল ইহা বনবিহারীর কাজ, কিন্তু তাহার প্রতিকার কি ? বনষিহারীর প্রহার তাহার গাটে গাটে মনে ছিল, যুবকদের আক্রমণের নিদর্শন স্বরূপ তাহার মাথায় এখনও পটি বাধা ছিল । মনে মনে শু্যামাচরণ অনেক বার বনবিহারীকে গুপ্তি দিয়া খোচাইয়া মারিল, কাৰ্ত্তিক ও তাহার দলবলকে ধরাশায়ী করিল। কিন্তু তাহার রাগ হইল সকলের অপেক্ষ ত্রিলোচনের উপর। সে কোন সাহসে শুমাচরণকে দরোয়ান দিয়া ইকাইয়া দিল ? যদি সব কথা শু্যামাচরণ প্রকাশ করিয়া দেয় তাহা হইলে দেওয়ানজীর কি দশা হইবে ? হাতে হাতকড়ি দিয়া যখন কাঠগড়ার ভিতর পূরিবে তখন দেওয়ানগিরি কোথায় থাকিবে । কিন্তু ত্রিলোচনকে ধরাইয়া দিবার কথা মনে করিতেই শু্যামাচরণের গলায় কে যেন দড়ির ফাস দিয়া টানিতে আরম্ভ করিল, তাহার নিঃশ্বাস বন্ধ হইবার উপক্রম হইল, কণ্ঠতালু শুকাইয়া গেল, চক্ষু ঠিকরিয়া বাহির হইল। ত্ৰিলোচনকে ধরাইয়া দেওয়া আর নিজের গলায়ু ফালি