বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন কোথা থেকে এক উপদ্রব এসে জুটল রে বাবা!. লাটসাহেব থেকে আর গ্রামের চৌকিদারটি পয্যন্ত লাইন বাধা-হাজার রকম কাজ—সেইগুলোকে গাড়ি ব’লে ধরে নাও—দিব্যি গতীয়াত চলবে ;–মাঝখান থেকে তোমার গান্ধী বলে বসলেন—আমি এর মধ্যে আমার খন্দরের মালগাড়ি এনে ফেলব !” কথাটা এমন জায়গায় ঘা দেয় যে সমস্ত আন্দোলনটি এককথায় পরিষ্কার হইয়া যায় । নীরব প্রশংসায় কেহ ঘাড় নীচু করিয়া টেবিলে আঁচড় কাটিতে থাকে, কেহ কেহ বা পরস্পরের মুখের দিকে চায়, কেহ বলে,— "অথচ এই সহজ কথাটা কেউ বোঝে না, দেখুন ত!" কথাগুলো অন্দরমহল পর্য্যন্ত পৌছায় । "বড়বাবু যখন ব’লতে আরম্ভ করেন—বুঝলে গা ?..” স্বচারুর কানেও ওঠে। আগে চুপ করিয়৷ থাকিত ; এখন বলে,—“আমার সামনে ব’লতেন তবে ত...” স্বামী একেবারে স্তম্ভিত হইয় পড়ে, বলে,—“তুমি কি বড়বাবুর সঙ্গে কোমর বেঁধে ঝগড়া করতে না-কি ?” বড়বাজারের ভূতপূৰ্ব্ব ভলণ্টিয়ার সোজা জবাব দেয়—“কেন, বড়বাবু পার না-কি ?”

ঠিক কোমর বাধিয়া সামনাসামনি ঝগড়া এখনও হয় নাই, তবে এক সময় যে না হইতে পারে একথা জোর করিয়া বলা যায় না, কারণ অন্তরীক্ষ হইতে যুযুধান দুই পক্ষই বাক্যবাণ মোচন করিতেছেন এবং সেগুলি নিয়তই লক্ষ্যস্থানে পহুছিয়। প্রতিপক্ষকে জর্জরিত করিতেছে — স্বামী বলে, “তুমি, বুধনী আর দুখীয়ার মাকে চরথা দিয়েচ বুঝি ? কেন এসব বাই বল দিকিন ? বড়বাবু এই-সব নিয়ে যখন বাকি ধরেন, আমার ত লজ্জায় মাথ। কাট; যায় ; বলছিলেন,–‘আর কেন বৃথা খেটে মরি, মালবাবু ? গিল্পীর স্বরাজ উইন্‌ করলে অন্তত মোট পেন্সন একটা ত পাবই,—বলে – ‘সতীর পুণ্যে পতির স্বৰ্গলাভ.” সুচারু হাসিয়া বলে—“আমার নাম ক'রে ব’লো— ব’লছিল—পতিদের নিতান্ত সেই রকম অধ:পতন শিক্ষা-সঙ্কট RSS না হইলে এ রকম ভরসার কথা মনে উদয় হয় না ;: দ্রৌপদী সতীর যখন বিবস্ত্র হবার উপক্রম, তার পাচটি পতিদেবতা নিশ্চয় নিশ্চিন্ত মনে ব’সে এই রকম স্বৰ্গবাসের কোন মহৎ কল্পনায় বিভোর ছিলেন । ভাগ্যিসূ বেচারীর তাদের আশা ছেড়ে দিয়ে নিজের উপরই নিভর করবার স্ববুদ্ধিটা জুগিয়ে নিয়েছিল--- কথাগুলো বলতে পারব ত ?” স্বামীর এখানেও মাথ৷ কাটা যায় । লজ্জিত ভাবে বলে,-“ই্যাঃ, আমি তাকে ব’লতে গেলাম ;...একট। মুরুব্বি লোক...” কিন্তু কথাগুলো পৌছায়, অন্য স্বত্ৰ দিয়া,-আরও সালঙ্কারে, টিকাটিপ্পনী সমন্বিত হইয়া । দুপুরবেলা যখন কৰ্ত্তারা ষ্টেশনে, মালবাবুর বাড়িতে মেয়েদের জমাট মজলিস বসে। বড়বাবুর স্ত্রী, কন্য, বিধবা ভগিনী কিরণলেখা, পোষ্টমাষ্টারের খুড়ী আর দুইপক্ষ, স্বয়ং গৃহকত্রী—এর নিয়মিত সভা। ক্যাজুয়েল । ভিজিটার বা আগন্তুকদের মধ্যে তেতরী, দুখীয়ার মা, স্বনুর, বুধনী। কখন কখন হঠাৎ "তামাকবাবু”র বলদে-টানা শাম্পেনি আসিয়া হাজির হয় ; দুই কন্যা নামিয়া পিছনের পা-দানির দুই পাশে সতর্ক ভাবে দাড়ায়, গাড়োয়ান গিয়া বলদের জুয়াল চাপিয়া ধরে, তার পর হু কী হাতে–মাঝে মাঝে দু-একটি টান দিতে দিতে আর অস্বাভাবিক ভাবে হাপাইতে ইপিাইতে নামেন “তামাক-গিৰী” হিন্দুস্থানীরা বলে, “তামাকু মাইঞ্জী," বাবুর আখ্যা দিয়াছেন "টোবাকো কুইন”. স্থবিপুল শরীর—যেমন দীর্ঘ, তেমনি আড়ে ; হিন্দুস্থানীদের বার হাতি শাড়ী ন হইলে কুলায় না। নামিয়াই মালবাবুর স্ত্রীকে বলেন,–“কই গে, মালিনী দিদি, আমার ছিলিমটা আগে ভরিয়ে দাও ভাই । এইটুকু আসতেই ইপিয়ে মরলাম,—বিপৰ্য্যয় মোট হওয়া যে কি বিপত্তি...” তাহার পর কন্যার দিকে চাহিয়া রাগিয়া বলেন,— “তবুও তোর বাপ বলবে—‘আরও দু-খান লুচি বাড়াও...আধখানা হ’য়ে গেছ’.মিথ্যেরও ত একট৷ সীমে আছে ?”