বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন শিক্ষা-সঙ্কট tళo\లి একটা চিন্তা ঢোকাতে পারলাম না তার কারণ ভেবে দেখলাম—তোমাদের মনে জায়গা নেই ; গলিতে ত আর ফসল হয় না, ফসল হবার জন্যে জায়গার প্রসার চাই, সেথায় আলো বাতাস খেল চাই । আমি ঠিক করেচি এই শাস্তির সময়টুকু আর চরখা, খদ্দর নিয়ে বড়বাবুর সঙ্গে মারামারি করব না। ওদিকটাই এখন ছেড়ে দিয়ে সবার মনের উৎকর্ষের দিকে চিন্তা দেব---” স্বামীর মুখে কৌতুকপূর্ণ হাসি ; জিজ্ঞাসা করিল— “কি ক’রে ?” “মনে কিছু অন্য চিন্তাও আন দিকিন সব, চাকরির বাইরের চিন্তা । খালি টেবিলের সামনে মুথ গু জড়ে..." “অন্য রকম চিন্ত৷ খুব নিরাপদ নয় । এই দেথ না, সেদিন একটা দরকারী টেলিগ্রাম করতে করতে হঠাৎ মাথায় অন্যরকম চিন্ত ঢুকে এমন বিশ্রী রকম গোলমাল ক’রে দিলে যে সামলাতে•••” হাসির ভঙ্গী দেখিয়া সুচারুর আর বুঝিতে বাকা রহিল না যে তখনও রহস্যই চলিতেছে । সেদিন আর এ প্রসঙ্গ জমিতে পারিল না । কিন্তু স্বচারুও ছাড়িবার পাত্রী নয়। নিজের গৃহে তাহার চেষ্টা ত অপ্রতিহতভাবে চলিলই, তাহ ভিন্ন মজলিসেও এমন জোর প্রপাগাণ্ড আরম্ভ করিয়া দিল যে, প্রায় সকল সভাই আত্মপ্রতিষ্ঠা এবং স্বামি-সংস্কারে বদ্ধপরিকর হইয়। উঠিল। তবে সুখের বিষয় গুহে কোন রকম অশান্তির সৃষ্টি হইল না । স্থচারুর লেখা একখানি চিঠি থেকে তুলিয়া বলিতে গেলে—“এখানকার অধিকাংশ স্বামীই এমন সিভিল আর ওবিডিয়েণ্ট যে, অল্প চেষ্টাতেই কাজ হাসিল হইয়াছে —দু-একজন ত চাওয়ার অধিক দিয়ে বসে আছে , আহ বেচারী সব.” তামাক-গিন্নীর ত এক রকম স্বরাজ ছিলই, এখন একেবারে পূর্ণকত্রীত্ব । পোষ্টমাষ্টার বাবুর দ্বিতীয়পক্ষের শেষ রিপোর্ট—“কাল রাত্রে খোকা উঠলে ও-ই ঘাড়ে ক’রে বাইরে নিয়ে গেল, ধোয়ালে মোছালে, ঘুম পাড়ালে. করবেই বা না কেন বল,—এতদিন ভুল ক’রে একাই ত ক’রে এসেচি ” এমনি কি, বৃদ্ধ মালবাবুর পর্য্যস্ত স্বমতি হইয়াছে। অজীর্ণ রোগী বলিয়া তিনি বরাবরই সকলে বেড়াইতে যান ; আজকাল দুই পকেটে আলু পটল লইয়া বাহির হন এবং একখানি ছুরির সাহায্যে কূটন কুটিয়া নিজের অভিনব কৰ্ত্তব্যরাশির প্রথম দফা সাঙ্গ করিয়া বাড়ি ফেরেন ।... সুচারু হাসে। ভাবে, দলপতিকে ছাড়াইয়া দল অনেক সময় আগাইয়াই চলে, তাহারা নিজেরাই কি গান্ধীজীর নরম ভাব লইয়া সব সময় কাজ করিতে পারিত ? সে নিজেরাটকে উন্নত প্রণালীতে গড়িয়া তুলিতেছে। কাব্য উপন্যাস, স্বদেশ-সংক্রান্ত অনেক বই পড়িয়া শোনায় কিংবা পড়াইয়। শোনে । “উগ্ৰশক্তি’তে তাহাকে দিয়া স্ত্রী-স্বাধীনতার সপক্ষে এমন একটা নিবন্ধ লিখাইয়াছে যে, সেটা প্রায় পুরুষস্বাধীনতার বিপক্ষে দাড়াইয়। গিয়াছে। জ্যোৎস্নারাত্রে একদিন নদীর পুল পর্য্যস্ত স্বামীকে লইয়া বেড়াইতেও গিয়াছিল। নিযুত বৈকালে সস্ত্রীক বেড়াইতে যাইবে বলিয়। হীরু কথাও দিয়াছে ; স্ত্রীর কাছে আপাতত কয়েক দিনের মহলত লইয়াছে এই বলিয়া যে “এখনও বডড কিন্তু কিন্তু বোধ হয়, পা জড়িয়ে আসে- ” বাকী কবল বড়বাবু। তা তিনি এখন কয়েক দিন যাবৎ উপস্থিত নাই। প্রতিবৎসর এই সময়টা সপ্তাহকয়েকের ছুটি লইয়া দেশে যান, ক্ষেতের ধানচালের বিলি করিয়া আসিতে। এবারেও গিয়াছেন। অন্য পুরুষগুলিকে যে-রেটে তালিম দেওয়া হইতেছে, তাহাতে তামাকগিল্পী, স্থচারু প্রভৃতি মনে করিয়াছিল বড়বাবুকে লইয়। বেশী বেগ পাইতে হইবে না। তাহার পর সব পুরুষগুলির মানসিক উৎকর্ষের জন্য একটা ক্লাব-গোছের প্রতিষ্ঠিত হইবে । শেষে, তাহাদের সঙ্কীর্ণত একেবারেই লোপ পাইলে স্ত্রীরাও গিয়া যোগদান করিবে—এই ছিল খসড়া । বড় ভুল বুঝিয়াছিল । বড়বাবু আসিয়া ব্যাপারট। বুঝিবার পর প্রথমেই একসেট নূতন নাম হুষ্টি করিলেন । হীরু হইল ‘ষ্ট্রীরামন বিবি’ ; পোষ্টমাষ্টারবাবু হইলেন ‘মেজগিনী, বৃদ্ধ মালবাবু হইলেন ‘জাবুইম ।’ বাইরে সমস্ত দিন ঠাট্রাতামাসায় জর্জরিত হইয়া হীরু আসিয়া বলিল—“না বাপু, ওসব সাহিত্যচর্চা, বেড়ান আমার.দ্বারা হবে না—দিব্যি তে ছিলাম---”