বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

brQ R S99áు উপর দিয়া বড় বড় বাধপথ প্রস্তুত করিতে হইল এবং নদী ও খালের বুক চাপিয়া যথাসম্ভব ছোট ছোট সেতু নিৰ্ম্মিত হইল। শহর, পাক। রাস্ত ও রেলপথকে বস্তার জলের আঘাত হইতে রক্ষা করিবার জন্য প্রবল ‘পাহাড়িয়া’ নদীগুলির পাশ্বে অছিদ্র সুবৃহৎ বাধ দেওয়া হইল। অধিকন্তু, প্রলম্বিত রেল ও রাজপথ বিস্তারের পক্ষে যাহাতে শাখা-নদীগুলি অস্তরায় না হইতে পারে সেজন্য ইহাদের শিরচ্ছেদ করিয়া ক্রমশঃ মূল-নদীর সহিত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হইল। কথিত আছে, পুরাকালে পৰ্ব্বত আকাশে উড়িয়া লোকের ভীতি সঞ্চার করিত, এজন্য দেবরাজ ইন্দ্র পক্ষচ্ছেদ করিয়া পৰ্ব্বতকে ভূতলশায়ী করিয়া দিয়াছেন। ইহা পৌরাণিক গল্প ; কিন্তু রেল ও রাজপথের সুবিধার জন্য নদীনালার শিরচ্ছেদ বিগত শতাব্দীর মধ্যে সংঘটিত ঐতিহাসিক সত্য ! পাশ্চাত্য সভ্যতা ও বাণিজ্যের স্বার্থে স্থজল৷ বঙ্গদেশকে কিরূপ মরুভূমিপ্রায় করা হইয়াছে তাহার দৃষ্টান্ত-স্বরূপ বলা যাইতে পারে যে, দামোদর নদের সন্নিকটস্থ বৰ্দ্ধমান শহর হইতে মেঘনা নদের তীরবত্তী চাদপুর বন্দর পর্য্যস্ত ( ৯০ ক্রোশ মাত্র ) কেহ বায়ুযানে গমন করিলে দেখিতে পাইবেন যে, মধ্যবৰ্ত্তী প্রদেশে কেবল ভাগীরথী, মাথাভাঙ্গা-চুণী, ইছামতী ও মধুমতী এই চারিটি নদী এখনও স্রোতস্বর্তী ; কিন্তু বাক, গাঙ্গুর, বহুল, ধুলী, কোদালিয়, বেতন, কপোতাক্ষ, ভৈরব, চিত্র, নবগঙ্গা, বরষীয়, চন্দন বা কুমার এই অনুনি দ্বাশটি বৃহতীয়তন শাখা-নদী শুষ্কপ্রায় ; এবং সেই কারণে বৰ্দ্ধমান, নদীয়া, যশোহর ও ফরিদপুর জেলার অনেকাংশ তেজহীন ও কলুষিত হইয়। পড়িয়াছে। বলা বাহুল্য, এই দ্বাদশ নদীই মনুষ্যকৃত উৎপাতে এক্ষণে প্রবাহহীন । যখন নদীর দশ। এইরূপ তখন খাল-বিলের কথা না বলাই ভাল । এস্থলে দ্রষ্টব্য এই যে, উত্তর দিকে হিমালয় পূৰ্ব্বমতই অসীম জলভাণ্ডার উন্মুক্ত রাখিয়াছেন এবং দক্ষিণ দিকে বঙ্গোপসাগর তাহ গ্রহণ করিতে পরাসুখ নহেন ; কিন্তু যে-জল শতধারায় বিভক্ত ও বিস্তারিত হইয়া বৰদেশকে সজীব রাথিত, তাহা এক্ষণে শৃঙ্খলবদ্ধ কয়েকটি প্রণালীর দ্বারা অতি সঙ্কোচে প্রবাহিত হইতে বাধ্য হইতেছে। উপযুক্ত জলের অভাবে স্বাস্থ্য, কুমি, ও দেশীয় বাণিজ্যের অবনতি অথবা অতিরিক্ত বন্যার প্রকোপে ধনপ্রাণ বিনাশ, এ সকল দূরদৃষ্টির মূল কারণ একই। বিপুল আয়াস ও প্রচুর অর্থব্যয় করিয়া চিরমঙ্গলময়ী প্রকৃতির সহিত অদূরদর্শী স্বার্থপর মানব বিরোধ করিতে যত্নবান ! এইরূপ অন্যায় অস্বাভাবিক যুদ্ধের কুফল অবশ্বম্ভাবী। বাণিজ্যপোত দেশের মধ্য দিয়া চালিত করা প্রায় অসম্ভব হুইতে চলিল, কারণ বহু অর্থব্যয়ে ‘মাটিকাট-যন্ত্র প্রয়োগে করা সত্ত্বেও নদীগুলি ভরাট হইয়া আসিতেছে ; নৌচালনা আর সহজে হয় না, কারণ অধিকাংশ নদী ও থাল মৃতপ্রায় হইয়াছে ; দেশের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য বর্ষার জল নিকাশ করিবার উপায় নাই, কারণ পয়ঃপ্রণালীগুলি রুদ্ধ হইয়াছে ; কৃষিকার্য্যের আর সুবিধা নাই, কারণ জলদায়িনী নদী শুষ্ক হইয়া যাইতেছে ; ভূমির উর্বরাশক্তির হ্রাস পাইয়াছে, কারণ তাহাতে আর পলি-সার পড়ে না ; থাল বিল ও তড়াগ পুষ্করিণী মজিয়া ও পচিয়া উঠিতেছে, কারণ জলাশয়ে আর উপযুক্ত জল প্রবেশ করিতে পায় না ; অবশেষে, কোন কোন স্থানে স্নান ও পানীয় জলের অভাব ও পরিলক্ষিত হইতেছে । এই সকল অসুবিধা ও কষ্ট দেখিয়া ও বুঝিয়া আমাদের চমক ভাঙিবে কি ? বাংলা দেশ চিরকাল নদীগতপ্রাণ ছিল ও থাকিবে । জীবদেহে ধমনীর দ্বারা শোণিত সঞ্চালনের মত বাংলা দেশের নদীর দ্বারা জল প্রবাহিত হয়। দেশকে বাচাইতে হইল নদীর প্রবাহ পূর্ণমাত্রায় রক্ষা করিতে হইবে । অতএব নদীর উৎপত্তিস্থান হইতে মোহান পৰ্য্যস্ত আদ্যোপাস্ত যেখানে যেরূপ বন্ধনী আছে সে সমূদয় উন্মুক্ত করিতে হইবে। কেহ যেন না মনে করেন নদী অামাদের আজ্ঞাবহ হইয় চিরকাল আমাদের ইচ্ছামত বাধাধরা পথে প্রবাহিত হইবে । বাংলা দেশে তাহ চলিবে না। এদেশে সকলকে নদীর বশীভূত থাকিয়া নদীর গন্তব্য পথের অমুসরণ ও তাহার বাধাবিঘ্ন অপসারণ করিতে হইবে। নদীর জলোচ্ছ্বাস স্বাভাবিক ক্রিয়, ইহাতে নদী ও দেশ উভয়ই রক্ষিত হয় ; এই ক্রিয়ায় বাধা দেওয়াই