বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮৬২ S99áు ক’দিনেই দড়ি হইয়া গিয়াছে ; সারা গায়ে ঘায়ের মত দাগড়া-দাগড়া দাগ। অপরিষ্কার ময়ল কাপড়খানি কোমরে ; গায়ে কিছু নাই ; তারিণীর নিজেরই কাম৷ পাইতে লাগিল—সাধ করিয়া মুখের ঘর ছাড়িয় আসিয়া এই যন্ত্রণ ভোগ করা–এ বুদ্ধি যে জয়াকে কে দিল তাহা জয়াই জানে! তারিণী প্রশ্ন করিল-আজ সারাদিন কি থেয়ে আছিস্ রে জয় ?—কি খেয়েছিস্ ? জয় বলিল—কিছু না । শুনিয়া তারিণী মুখে কিছু প্রকাশ করিল না ; সকালে উঠিয়া চারটিখানি খাইয়। লইয়াই আবার রওনা হইতে হইবে । চার মাইল পথ– ইঁটিয়াই যাইতে হইবে, সুতরাং এখন একটু বিশ্রাম দরকার। তারিণী চোখ বুজিল । চোখ বুজিবার সঙ্গে সঙ্গেই ঘুম আসিল । এবং সে ঘুম ভাঙিল যখন, তখন সকাল হইয়া গিয়াছে—পাশের বড় কাটাল গাছের ফঁাক দিয়া কড়া রৌদ্র আসিয়৷ তারিণীর গায়ে লাগিতেছে। তারিণী চারিদিকে চাহিয়া হঠাৎ ধড়মড় করিয়া উঠিয়া বসিল । জয় ! জয়া কোথায় ! জয় নাই যে ! জয় আবার পলাইয়াছে : রাত্রের স্বপ্নকে দিনের আলোয় সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিতে তাহার এতটুকু বাধিল না। চারিদিকের ভিড় – দোকান-পাঠ — ঝুমনলাল মাড়োয়ারীর পাটের আড়ত—কোথাও জয় নাই ! রৌদ্রের তেজ বাড়িতেছে ; চাদরট। কাধে ফেলিয়া তারিণী ছাতি খুলিল। চোখ দু-টা তাহার কর কর করিয়া জাল করিয়া উঠিল। পানের দোকানের পাশে একটি কাঠের বাক্সর উপর বসিয়া পড়িয়া তারিণী দুই হাত দিয়া দু-দিককার কপাল সজোরে চাপিয়া ধরিল ; মাথার মধ্যে কে যেন হাতুড়ী পিটিতেছে। তারিণীর মনে হইল—এতদিন দেখা দেয় নাই সে যেন তবু ভাল ছিল। স্বানেৰুদিন পরে বদনের সেই ঔষধের কথাটা দৈবাৎ 勢 , , ...' : মনে পড়িয়া গেল--কথাটা এতদিন তারিণী ভুলিয়াই গিয়াছিল। ডুমুরদহের পীর সাহেবের নিকট হইতে মুকুন্দই শেকড় এবং বালা আনিয়া দিল । দুপুরবেলা বসিয়া বসিয়া তারিণী নিজ-হাতেই বুকের খানিকট চিরিয়। রক্ত বাহির করিল—ভোতা নরুণ এতটুকু চিরিতে গিয়া অনেকখানি চিরিয়া যায়-যন্ত্রণায় তারিণীর বুকখানা বুঝি-বা গুড়া হইয়া গেল। সারা সকাল পেটে কিছু যায় নাই-একশ’ট পাত লেখা হইলে জয়। ফিরিবে এবং সে ফিরিলে তখন দু-জন একসঙ্গে থাইতে বসিবে এইরূপ ব্যবস্থাই ঠিক হইয় আছে । বাহিরে পথের উপর দিয়৷ লোক-চলাচল করিতেছে। বেলপাতার উপর জয়ার নাম লিখিতে লিখিতে তারিণী কেবল বাহিরের পানে চাহিতেছে। যতদূর দৃষ্টি চলে ততদূর— স্বরে। দাড়াইয়াছিল ; বলিল,-হাড়িটা আমি চড়িয়ে দেব তারিণী ক ? তারিণী বলিল--একটু সবুর কর মুরো-সে এলেই চড়িয়ে দিস একেবারে— সবুজ বেলপাতাগুলির উপর রক্তের অক্ষরগুল জল জল করিতে থাকে ; পঞ্চাশটা শেষ হইয়া গিয়াছিল—এই বার একশ’টা ও শেষ হইল—আর পাতা নাই। তারিণী সারা দেহে যেন কেমন দুৰ্ব্বলতা অনুভব করিল। বাহিরে রৌদ্রের তেমনি বহি-তেজ, চশম খুলিয়া তারিণী বাহিরে আসিয়া দাড়াইল। দাড়াইয়৷ দেখিল গোটাকতক অপরিচিত ছোড়া তাহার পেয়ারাগাছে উঠিয়। পেয়ারা পাড়িতেছে । ছেলেরা এ গ্রামের নয় দেখিয়৷ মনে হয় যাত্ৰাদলের ছোকরা। মাথার চুল ঝাঁকড়া করিয়৷ ছাট ; এক একটি যেন পেকটি ; পেটগুলি শুকাইয়। বেয়াল হইয়া গিয়াছে। মধু ছেলেটি ওস্তাদ ; বঁাশীর মত গল ; ‘অভিমস্থ্য-বধে' ওই ছেলেটি উত্তর সাজে। বলিল—তোমারই গাছ বুঝি ? বেশ বেশ, বেড়ে পেয়ার কিন্তু, কাশীর বীজ তাই বলি - মধু মুখ চোখ দিয়া কথা বলে। তারিণী বলিল—কোন গায়ে বাড়ি গা তোমাদের ? তাহারা যাত্ৰাদলের ছোকরা—বাড়ি-ঘর-দোরের