পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সরকারী সাম্প্রদায়িক ভাগবাটোয়ার ব্রিটিশ গবন্মেন্ট ভারতবর্ষকে যে নূতন শাসনবিধি দিবেন বলিয়াছেন, তদনুসারে গঠিত প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভাগুলিতে কোন কোন ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের ও কোন কোন শ্রেণীর লোকেরা কত গুলি সভে্যুর পদ পাইবেন, বিলাতী গবন্মেটি তাহা প্রকাশ করিয়াছেন। যে-যে সম্প্রদায় ও শ্রেণীর লোকের নির্দিষ্টসংখ্যক প্রতিনিধি পাইয়াছেন, র্তাহাদিগকে নিজেদের মধ্যে হইতে স্বতন্ত্র নির্বাচন দ্বার স্থির করিতে হইবে। দেশের সমগ্র অধিবাসীবৃন্দকে গবন্মেটি আঠারটা ভাগে বিভক্ত করিয়াছেন। এরূপ করিবার এক মাত্র কারণ হইতে পারে এই অনুমান, যে, প্রত্যেক ভাগের লোকের অপর সব ভাগের লোকদের হিতাহিত দেখিবে না, বরং সুবিধা পাইলেই তাহাদের অনিষ্ট চেষ্টা করিবে ! এমন কি, একই ধর্মের পুরুষের স্ত্রীলোকদের এবং স্ত্রীলোকেরা পুরুষদের স্বার্থ রক্ষা করিবে না, বরং অনিষ্ট করিতে পারে, এই অমুমানে স্ত্রীলোকদিগকে সামান্য কয়েকটি সভ্য পদ দেওয়া शृंग्रांग्छ् ! এই ভাগবাটোয়ার সম্বন্ধে ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী মি; ম্যাকডোনাল্ড যে মন্তব্যপত্র প্রকাশ করিয়াছেন, তাহার গোড়ার দিকেই তিনি বলিয়াছেন, সব ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের ও শ্রেণীগুলির প্রত্যেৰে ভাগবাটোয়ারাটার এই দোষই প্রথম দেখাইবে যে ইহা তাহাদিগকে তাহাদের আশা বা দাৰি অনুযায়ী যথেষ্ট সভ্যপদ দেয় নাই। তিনি চালাক লোক বলিয়া বাটোয়ারা-পত্রের প্রধান দোষ ও অনিষ্টকারিত হইতে লোকের মন অন্য দিকে চালাইয়া দিবার চেষ্টা করিয়াছেন। বস্তুতঃ বাটোয়ারাটা যে হিলুদিগকে বা অন্য কোন ধৰ্ম্মাবলৰীদিগকে কিব শ্ৰেণীবিশেষের লোকদিগকে যথেষ্ট সভ্যপদ দেয় নাই, ইহ তাহার একটা দোষ হইলেও প্রধান দোষ নহে। প্রধান দোষ এই, যে, ইহা সমগ্র ভারতীয় মহাজাতিকে টুকরা টুকরা করিয়া ভাগ করিয়া সকলের একযোগে কাজ করিবার এবং কাজ করিবার ইচ্ছার পথে গুরুতর বাধার স্বষ্টি করিয়াছে। যে-কারণেই হউক, যাহাদের পরস্পরের মধ্যে যে অসদ্ভাব সন্দেহ অবিশ্বাস ঈর্য্যাম্বেষ ছিল, ইহা তাহাকে স্থায়িত্ব দিবার ব্যবস্থা করিয়াছে। যেখানে অবিশ্বাসাদি কম ছিল, সেখানে ইহা দ্বারা তাহা বৃদ্ধি পাইবে, যেখানে ছিল না সেখানে উৎপন্ন হইবে। ভারতবর্ষে মহাজাতি গঠনের সম্ভাবনাৰে ইংরেজ গবন্মেণ্ট কখনও উৎসাহ দেন নাই, লর্ড মিণ্টোর আমলে তাহারই প্ররোচনায় মুসলমানদের যে ডেপুটেশ্বন তাহার নিকট স্বতন্ত্র প্রতিনিধি ইত্যাদি বিশেষ অধিকারের দাবি করিয়াছিল এবং যাহা তিনি মধুর করিয়াছিলেন, তাহা হইতে রাষ্ট্রীয় বিষয়ে পরস্পর পার্থক্যবোধ রূপ বিববৃক্ষের অস্কুরোদগম হয়। কিন্তু তাহা সত্ত্বেও মহাজাতি ধীরে ধীরে গড়িয়া উঠিতেছিল। এখন ব্রিটিশ মন্ত্রীমণ্ডল সেই প্রক্রিয়ায় বাধা দিবার জন্য এই ভাগবাটোয়ার দ্বারা তাহদের সমুদয় শক্তি নিয়োগ করিয়াছেন । ইহাই ইহার সর্বাধিক অনিষ্টকারিত । প্রত্যেক ধৰ্ম্মসম্প্রদায় বা শ্রেণী ধে নিজেদের জন্য আলাদা আলাদা নির্দিষ্টসংখ্যক প্রতিনিধি চাহিয়াছিল, ইহা সত্য নহে। হিন্দুরা তাহ চান নাই। নারীদের নেত্রীরা তাহ চান নাই। প্রধান দেশীয় খ্ৰীষ্টিয়ান নেতারা— বিশেষ করিয়া বাঙালী খ্ৰীষ্টিয়ানেরা তাহা চান নাই । এখন কেবল প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভাগুলিকে ভারতীয় মহাজাতির দিক্ হইতে অকেজো ও অনিষ্টকর করিবার ব্যবস্থা হইয়াছে, কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভা কি প্রকারে গণতান্ত্রিক ও প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনপ্রণালীর ৰিদ্রপে পরিণত হইবে, তাহার আভাস এখনও পাওয়া